দুর্নীতি ইস্যুতে ঘায়েল করা যায়নি তৃণমূলকে, তাই বঙ্গ-দখলে ধর্মের তাস
এর আগে তৃণমূলকে হারাতে দুর্নীতির তত্ত্ব খাড়া করা হয়েছে অনেকবার। কিন্তু হারানো যায়নি। এবার মূল প্রতিপক্ষ যখন বিজেপি, দুর্নীতি ইস্যুর বদলে তৃণমূলের সঙ্গে লড়াই মূল ট্রাম্প কার্ড হয়ে উঠছে হিন্দুত্ব।
কলকাতা, ২৬ এপ্রিল : এর আগে তৃণমূলকে হারাতে দুর্নীতির তত্ত্ব খাড়া করা হয়েছে অনেকবার। কিন্তু হারানো যায়নি। এবার মূল প্রতিপক্ষ যখন বিজেপি, দুর্নীতি ইস্যুর বদলে তৃণমূলের সঙ্গে লড়াইয়ে মূল ট্রাম্প কার্ড হয়ে উঠছে হিন্দুত্ব। ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতিতে ভর করেই তৃণমূলকে বাংলা থেকে উৎখাতে রাস্তা প্রশস্ত করতে চাইছে বিজেপি।
এর আগে সারদা কেলেঙ্কারি, নারদ স্টিং অপারেশন, রোজভ্যালি-সহ অন্যান্য চিটফান্ড, তোলাবাজি- এমন কতনা দুর্নীতিতে নাম জড়িয়েছে তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীদের। কিন্তু থোড়াই কেয়ার। একটার পর একটা নির্বাচনে ড্যাং-ডেঙিয়ে বেরিয়ে গিয়েছে মমতার দল। এমনকী কাঁথির উপনির্বাচনে, যেখানে বিজেপি-র দ্বিতীয় হয়ে ওঠা বঙ্গ রাজনীতিতে ঝড় তুলে দিয়েছে, সেই নির্বাচনেও ভোট বাড়িয়েছে তৃণমূল।
তাই তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এবার পুরোপুরি কৌশল বদল করছে বিজেপি। সরাসরি হিন্দুত্বের ট্রামকার্ডেই কিস্তিমাত করার লক্ষ্যে এগোতে চাইছে তারা। গত ২০১৪ সালে রাজ্যে বিজেপি অপেক্ষাকৃত ভালো ফল করায় পরবর্তী নির্বাচনে তৃণমূলকে জোর ধাক্কা দিতে চেয়েছিল। কিন্তু ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে কাজ করেনি মোদী ম্যাজিক। ভোটব্যাঙ্কেও ধস নামে বিজেপি-র।
সম্প্রতি দুই উপনির্বাচনে বিজেপি-র ভোট বাড়ায় নতুন উদ্যমে বাংলার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইছে বিজেপি। বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনে বিপুল জয়ে দেশের বুকে ফের পদ্ম-ঝড় উঠেছে। মোদী ম্যাজিক ফের রাজ করতে শুরু করেছে বলে প্রচার চালাচ্ছেন বিজেপি-র সৈনিকরা। আর সেই উত্তরপ্রদেশের মতোই বাংলা দখলে ধর্মীয় তাস ফেলতে চাইছে বিজেপি। সেই একই চিত্রনাট্য সাজিয়ে বাংলা জয়ের স্বপ্ন দেখছে বিজেপি।
গত লোকসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেস মুক্ত ভারত গড়ার ডাক দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। সেই কর্মকাণ্ডে অনেকটাই সফল তিনি। কিন্তু কিছুতেই আঞ্চলিক দলগুলোর বিরুদ্ধে সাফল্য তুলে আনতে পারেনি বিজেপি। শেষপর্যন্ত উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টির বিরুদ্ধে সাফল্য বিজেপিকে নতুন করে শক্তি জুগিয়েছে। তাই কেরল, তামিলনাড়ুতে এখনও থাবা বসানো কঠিন ভেবে বিজেপি টার্গেট করেছে বাংলা ও ওড়িশাকে।
রামনবমী, হনুমান জয়ন্তীতে নজিরবিহীনভাবে মিছিল করা হয়। আবার এ রাজ্যে পা দিয়ে ধর্মীয় তাস পেলতেই বিজেপি সভাপতি দলিত পরিবারে পাত পেড়ে মধ্যাহ্নভোজ ছেড়েছেন। বিজেপি-র একটাই লক্ষ্য হিন্দু ভোট একত্রিত করা। সেই নির্দিষ্ট লক্ষ্যেই এগোচ্ছে বিজেপি। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, নির্দিষ্ট লক্ষ নিয়েই বিজেপি ধাপে ধাপে এগিয়ে চলেছে। তাঁদের লক্ষ্য বাংলার মসনদ।
আর এই ইস্যুতে একেবারে অঙ্ক কষে এগোতে চাইছে বিজেপি। বিজেপি উত্তরপ্রদেশের ক্ষেত্রে যে সমীকরণে এগিয়েছে, সেই একই সমীকরণের প্রয়োগ ঘটাতে চাইছে বাংলার ক্ষেত্রে। বিজেপির ভোট ম্যানেজারদের অঙ্ক, উত্তরপ্রদেশে সংখ্যালঘু ভোট ২০ শতাংশ। আর পশ্চিমবঙ্গে ২৭ শতাংশ। এ রাজ্যের ২০ শতাংশের বেশি সংখ্যালঘু ভোট রয়েছে এমন আসনের সংখ্যা ১২৫। সেগুলিকে টার্গেট করে কড়া হিন্দুত্বের তাস ফেলেছে। তারপর তৃণমূল বিরোধী শক্তিগুলিকে নিজেদের দিকে টানতে তৎপর হয়েছে।
এমনিতেই বিজেপি তৃণমূলের 'প্রাক্তন' ও কংগ্রেস-বাম শিবিরের 'ব্রাত'দের নিজেদের দলে টানার খেলা শুরু করে দিয়েছে। এইভাবেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে শক্তি সঞ্চয় করছে বিজেপি। আর আসন্ন পঞ্চায়েতকে তারা ভাবছে ২০১৯-এর অনুশীলন ম্যাচ হিসেবে।