টোটো বন্ধ না করে কেন উল্টে অনুমতি দিল সরকার? পাল্টা প্রশ্ন টোটো চালকদের
কেউ ব্যাঙ্কে গচ্ছিত শেষ সম্বলটুকু দিয়ে দিয়েছেন, কেউ আবার মহাজনদের কাছে থেকে চড়া সুদে টাকা ধার নিয়ে পেট চালানোর আশায় টোটো বা ভ্যানো কিনেছেন। আর এটাকেই বন্ধ করতে এবার কড়া নির্দেশ দিয়েছে মহামান্য কলকাতা হাইকোর্ট। এই বিষয়ে ১৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে উচ্চ পর্যায়ের কমিটিও গঠন করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর।
বেআইনি টোটো, ভ্যানো ইস্যুতে হাইকোর্টের তোপে রাজ্য সরকার
অর্থাৎ মোদ্দা কথা হল, এবার সম্ভবত টোটো বা ভ্যানোকে বন্ধ করতে হবে রাজ্য সরকারকে। অন্তত ইঙ্গিত তেমনই। সরকারের তরফে পরিবহণ সচিব আদালতে আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটকে হাতিয়ার করতে চেয়েছিলেন। আদতে বলতে চেয়েছিলেন, বেকার সমস্য়া মেটাতেই বেআইনি পথে কিছু যুবকের রোজগারের পথ করে দিয়েছিল সরকার।
কিন্তু সেই শিক্ষিত, স্বল্প শিক্ষিত, পেটের জ্বালায়, বেকারত্বের তাড়নায় টোটো চালাতে পথে নামা মানুষরা এবার অথৈ জলে পড়েছেন। বলা ভালো তাঁদের ডেকে এনে অথৈ জলে ফেলা হল। আর এর দায় পুরোপুরি সরকারের।
এমনটাই দাবি টোটো চালকদের একাংশের। কেন? এই রাজ্যের বিভিন্ন জেলার মূল টাউনশিপের বড় অংশে এই কয়েকবছর হল টোটো চলছে। মূলত রিকশাকে সরিয়ে দিয়ে ছোট-বড় শহরের দখল নিয়েছে টোটো বা ভ্যানো। শহরের চেয়েও শহরতলি এলাকায় এর দাপট বেশি।
স্টেশন থেকে বাজার, বড় রাস্তা, অলিগলি সব জায়গাতেই রক্তবীজের মতো ছড়িয়ে পড়েছে টোটো। ঘিঞ্জি এলাকায়ুকে পড়ে কিছু জায়গায় যানযটেরও কারণ হয়েছে এই বাহনটি। কিন্তু তা সত্ত্বেও তার ব্যবসা রমরমিয়ে বেড়েছে। যত দিন গিয়েছে, বেকার যুবকরা দলে দলে টোটো চালকের তকমা পেয়েছেন।
আর এতে পুরোপুরি সাহায্য করেছে সরকার। কীভাবে? এলাকায় টোটো চালানোর জন্য চালকদের কাছ থেকে পুরসভা থেকে টাকা নিয়ে টোকেন দেওয়া হয়েছে। সেই টোকেনকেই লাইসেন্স হিসাবে ধরে নিয়ে টোটো নিয়ে এলাকা দাপিয়ে রুজিরুটি জোগাড় করেছে যুবকেরা। এলাকার দাদারা আশ্বাস দিয়েছেন কোনও কিছু হলে বুঝে নেওয়ার। আর পায় কে? রমরমিয়ে ইতিউতি গজিয়ে উঠেছে টোটো স্ট্যান্ড।
অনেক রিকশা চালক প্যাডেল দেওয়া রিকশা চালিয়ে যে সামান্য টাকা রোজগার করেছিলেন, সামান্য সুখের আশায় সেটাকেও বাজি লাগিয়ে পুরনো রিকশাকে বেচে দিয়ে ই-রিকশা বা ভ্যানো কিনে ফেলেছেন। দিব্যি চালাচ্ছিলেন। কিন্তু এখন কি হবে?
স্থানীয় পুরসভা বা এলাকার স্থানীয় কাউন্সিলর বা দাদাদের আশ্বাস কোথায় গেল? প্রশ্ন তুলছেন টোটো চালকরাই। কয়েক বছর আগেই এই টোটোকে বেআইনি বলে তা বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। তা সত্ত্বেও কি করে পুরসভা থেকে টাকার বিনিময়ে টোকেন দিয়ে টোটো বা ভ্যানো চালানোর অনুমতি দেওয়া হল? কেন একবারও সরকারের কেউ বলল না, নতুন করে ধারের টাকায় কেউ টোটো কিনবেন না, এটা বেআইনি।
জীবিকার চেয়ে জীবনের দাম বেশি এটাই পর্যবেক্ষণ কলকাতা হাইকোর্টের। এটা একশো ভাগ সঠিক। কিন্তু যারা লোককে বিভ্রান্ত করে আরও বেশি করে পথে বসিয়ে দিল হাজার হাজার পরিবারের কয়েক লক্ষ মানুষকে, তাঁদের কি বিচার হবে? প্রশ্ন তুলছেন মাথার উপর থেকে ছাদ আর পায়ের তলার মাটি হারাতে বসা টোটো চালকেরা।