'শিল্পবান্ধব' মমতার টাটাকে জমি দেওয়ার ঘোষণা, ‘একমাস সময় দিলাম, ভাবুন’
সিঙ্গুর, ১৪ সেপ্টেম্বর : কৃষির মঞ্চে দাঁড়িয়ে শিল্পের বার্তা দিয়ে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুঝিয়ে দিলেন তিনি শুধুই কৃষকদের বন্ধু নন, তিনি শিল্পবান্ধবও। একবারে মাস্টারস্ট্রোক। জমি দেওয়ার প্রস্তবা কি না সরাসরি টাটাকে। যাঁর আন্দোলনের দাপটে পিছু হটে প্রবল প্রভাবশালী টাটা গোষ্ঠীকে পাত্তাড়ি গুটিয়ে সিঙ্গুরকে বিদায় জানাতে হয়েছিল, চলে যেতে হয়েছিল গুজরাটের সানন্দে, সেই মমতাই এবার শিল্প গড়তে জমি দেবেন টাটাকে।
সিঙ্গুরের 'মানুষের জয় মাটির জয়' শীর্ষক বিজয় উৎসব থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন বলেন, 'আমি এই মিটিং থেকেই আজ বলে দিয়ে যাচ্ছি। এক মাস সময় দিলাম। একটু ভাবুন। গোয়ালতোড়ে আমার ল্যান্ডব্যাঙ্কে জমি আছে। এক হাজার একর জমি দেব। পানাগড়, হাওড়াতে সরকারের ল্যান্ডব্যাঙ্ক রয়েছে। ভাবুন কারখানা করবেন কি না।' মমতা সাফ জানালেন, 'কারখানা করার জন্য তাঁর ল্যান্ড ব্যাঙ্কে প্রচুর জমি আছে। সেই জমিতে যদি কেউ গাড়ি কারখানা করতে চান, করতেই পারেন। আমার সরকারের পক্ষ থেকে সব রকম সাহায্য পাবেন।
সিঙ্গুরে যা ঘটেছে, এমন কোনও ঘটনা ঘটবে না। টাটাই হোক বা বিএমডব্লিউ, যারাই এ রাজ্যে কারখানা করতে চান, তাঁরা আমাদের শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।' তিনি আরও বলেন, 'কৃষি এবং শিল্প, কারও সঙ্গে কোনও ঝগড়া নয়। কৃষি এবং শিল্প দু'জনেই হচ্ছে ভাইবোন। যুব সমাজের প্রতিষ্ঠার জন্য শিল্প চাই। শিল্প বিনা একটা রাজ্য এগিয়ে যেতপারে না। আমরাও শিল্প চাই। তবে তা কখনই কৃষিকে ধ্বংস করে নয়। মোদি সরকারের নাম না করেই মমতার আক্রমণ, বাংলাকে বঞ্চিত করতে দেব না, রাস্তাই আমাদের রাস্তা দেখাবে।
সিঙ্গুরের ইচ্ছুক-অনিচ্ছুক সব কৃষককেই ১০ হাজার টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন এই টাকা দেওয়া হবে, তার ব্যাখ্যাও দেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, কৃষকরা যাতে চাষের সরঞ্জাম কিনে চাষ শুরু করতে পারেন, সেই জন্যই এই টাকা তাঁদের দেওয়া হবে। যতদিন না পর্যন্ত ওই জমি চাষযোগ্য হবে, ততদিন ততদিন পর্যন্ত ২ টাকা কিলো দরে চাল এবং মাসিক ভাতা দেওয়া চলবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। কৃষকের জমি ফেরত দেওয়া হচ্ছে। তার পর কৃষক যদি চাষ করতে চান, তা হলে সবরকমভাবে সাহায্য করা হবে, বলেন তিনি। তাঁর কথায়, 'কথা দিয়েছিলাম, জমি ফিরিয়ে দেব। কথা রাখতে পেরেছি। এটাই আজকে আমার সবচেয়ে বড় জয়। কথা দিয়ে কথা রাখতে পারার চেয়ে বড় কিছু হতে পারে না।'
সিঙ্গুরের জমি আন্দোলনের প্রসঙ্গেই এসে যায় মহাশ্বেতা দেবীর কথা। তাঁর কথায় আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, 'আজ খুব মনে পড়ছে মহাশ্বেতা দেবীর কথা। আজ যদি তিনি বেঁচে থাকতেন, তা হলে তিনিই সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন। আন্দোলনের সেই দিনগুলোর কথা কোনও দিন ভুলব না। সিঙ্গুরের জমি আন্দোলন সারা পৃথিবীর জমি আন্দোলনের ইতিহাসে একটা মাইল ফলক হয়ে থাকবে। সিঙ্গুর না হেল নন্দীগ্রাম হত না, নন্দীগ্রাম না হলে নেতাই হত না। আন্দোলনের লড়াই কোনওদিন ফিকে হয়ে যায় না। সিঙ্গুরই তার প্রমাণ।' তিনি বলেন, উৎসবের উৎসব আজ শুরু হয়ে গেল মানুষের উৎসবের মধ্য দিয়ে।'