বোধনের দিনে ‘মুখরক্ষা’র বনধ প্রত্যাহার মোর্চার, ১০৭ দিন পর মুক্ত পাহাড়
মঙ্গলবার থেকেই পাহাড় স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছিল, চালু হয়েছিল ইন্টারনেট পরিষেবাও। শেষমেশ পাহাড়বাসীর চাপের মুখে আনুষ্ঠানিকভাবে বনধ প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিল মোর্চা।
বাঙালির বড় উৎসবের বোধনের দিনেই সুখবরটা এল। দুর্গাপুজোর পুণ্যলগ্নেই বনধ প্রত্যাহারের ঘোষণা হল পাহাড়ে। ১০৭ দিনের অচলাবস্থা কাটিয়ে বুধবার সকাল থেকেই পাহাড়ে বনধ উঠে যাচ্ছে। মঙ্গলবার থেকেই পাহাড় স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছিল, চালু হয়েছিল ইন্টারনেট পরিষেবাও। শেষমেশ পাহাড়বাসীর চাপের মুখে আনুষ্ঠানিকভাবে বনধ প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিল মোর্চা। উল্লেখ্য ১২ জুন থেকে পাহাড়ে অনির্দিষ্টকালীন বনধ চলছিল।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মোর্চার সহকারী সম্পাদক জ্যোতি রাই ঘোষণা করলেন পাহাড় বনধ প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে। তিনি জানান, এই সিদ্ধান্তে সম্মতি জানিয়েছে দলের সুপ্রিমো বিমল গুরুংও। তবে গোর্খাল্যান্ডের দাবি থেকে তাঁরা সরছেন না। এদিন কেন্দ্রের দেওয়া মুখরক্ষার প্রতিশ্রুতির পরেই বনধ প্রত্যাহারের ঘোষণা করা হল।
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, চাপের মুখে পড়েই বনধ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিতে হল। আসলে এটি মুখরক্ষার একটা উপায় ছাড়া কিছু নয়। পাহাড় স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে এসেছিল। গুরুং ক্রমশই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছিলেন। তাই কেন্দ্রের তরফে আলোচনার ডাককে হাতিয়ার করে কোনওরকমে মুখরক্ষা করল মোর্চা।
এদিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং ফের বার্তা দেন, হিংসাশ্রয়ী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে কোনও দাবি আদায় হয় না। আলোচনাই একমাত্র পথ। তাই মোর্চা নেতাদের বৈঠকে বসার প্রস্তাব দেন তিনি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠকে বসার প্রস্তাব পেয়েই পাহাড় বনধ তুলে নিতে সম্মত হয় মোর্চা। আসলে তাঁর সামনে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া অন্য কোনও পথ খোলা ছিল না।
পাহাড়কে স্বাভাবিক করতে মাস্টারস্ট্রোকটি আগেই খেলে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিনয় তামাংকে পাহাড়ের মাথায় বসিয়ে গুরুংয়ের কফিনে শেষ পেরেকটি পুতে দিয়েছিলেন তিনি। ধীরে ধীরে গুরুংকে কোণঠাসা করার প্রক্রিয়া চলছিলই। আন্দোলনে ব্যর্থ, এখন পাহাড় ছাড়া হয়ে প্রায় সর্বস্ব খোয়ানোর জোগাড় গুরুংয়ের।
পর্যটনমন্ত্রী তথা দার্জিলিং তৃণমূলের সভাপতি গৌতম দেব জানান, ইউএপিএ ধারায় অভিযুক্ত হয়ে পাহাড় ছাড়া বিমল গুরুং। তাঁর ফতোয়া আর চলছিল না পাহাড়ে। তাই বনধ প্রত্যাহার করা ছাড়া কোনও উপায় ছিল না। কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনার প্রতিশ্রুতি মুখরক্ষার নামান্তর মাত্র। আর উপায় নেই তাই ওই বাহানায় বনধ তোলার সিদ্ধান্ত ঘোষণা। তিনি বলেন, পাহাড় স্বাভবিক ছন্দে ফিরেছিল। কালীপুজোর মধ্যেই পুরোপুরি স্বাভাবিক রূপে ফিরে আসবে পাহাড়।