লোকসভায় অধীর ব্যাটিং ভালোই করছেন; কিন্তু বাংলার নেতাদের বড় সমস্যা তাঁদের হিন্দি বলা নিয়ে
সপ্তদশ লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা হিসেবে অধীর রঞ্জন চৌধুরীকে নিযুক্ত করার পর থেকেই বহরমপুরের এই বর্ষীয়ান নেতা হাত খুলেই খেলছেন।
সপ্তদশ লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা হিসেবে অধীর রঞ্জন চৌধুরীকে নিযুক্ত করার পর থেকেই বহরমপুরের এই বর্ষীয়ান নেতা হাত খুলেই খেলছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে প্রাপ্য সম্মান দেখাতে যেমন ভুলছেন না, তেমনই কটাক্ষ করতেও ছাড়ছেন না। আবার বীরদর্পে "পারলে সোনিয়া, রাহুলকে জেলে পুরে দেখান" ধরনের চ্যালেঞ্জও দিয়ে বসছেন।
আসলে অধীরের মতো নেতাকে লোকসভায় নেতা করে কংগ্রেস হাজারো গন্ডগোলের মধ্যে অন্তত একটি কাজ ঠিক করে করেছে।
ডাকাবুকো নেতা অধীরকে দায়িত্ব দিয়ে ভুল করেনি কংগ্রেস
তেষট্টি বছরের অধীর, যিনি এবারে টানা পাঁচবার মুর্শিদাবাদের বহরমপুর কেন্দ্র থেকে জিতলেন, বরাবরই ডাকাবুকো নেতা। পশ্চিমবঙ্গে বসেও তিনি রাজ্যের সর্বময় কর্ত্রীর ধার ধারেন না। মমতার মতো এই নেতারও 'বিদ্রোহী' ভাবমূর্তি কম নয়। সেই 'রবিনহুড' অধীরকে লোকসভায় নিজেদের মাথা করে কংগ্রেস অন্তত রাহুল গান্ধীর সময়ের স্থবিরতা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে। পাশাপাশি, গান্ধী পরিবারবাদের অভিযোগও বিজেপি আগের মতো আর তুলতে পারবে না। গত লোকসভাতেও মল্লিকার্জুন খাড়গে ছিলেন লোকসভার নেতা কিন্তু বেশি বয়সের পাশাপাশি খাড়গে অধীরের থেকে সংসদীয় অভিজ্ঞতায় অনেক পিছনে। অধীরের কাছে অন্তত অনেক বেশি রাজনৈতিক সক্রিয়তা আশা করতেই পারে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব এবং সমর্থকরা।
কিন্তু অধীরকে এখন হিন্দি বলা নিয়ে অনেক খাটা দরকার
কিন্তু একই সঙ্গে, সংসদে অধীরকে তাঁর ভাষার উপরেও নিয়ন্ত্রণ রাখা প্রয়োজন। গঠনমূলক সমালোচনা করা এক জিনিস আর ভাষার অপপ্রয়োগ আরেক। দায়িত্বভার নিয়ে অধীর প্রথমেই প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন এবং তাঁর দেওয়া নৈশভোজে যোগ দিয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ দেখিয়েছিলেন। কিন্তু পরে সংসদে স্বামী বিবেকানন্দের সঙ্গে মোদীর তুলনার প্রসঙ্গে "কোথায় গঙ্গা মা আর কোথায় গন্দি নালি" বলে এক বড় বিতর্ক তৈরি করেছেন। অধীরের মন্তব্য, তাঁর হিন্দি ভালো নয়। আসলে তিনি নালি বলতে "ক্যানাল" বুঝিয়েছিলেন। কিন্তু "গন্দি"র প্রয়োজনটাই বা কী ছিল? যেখানে অধীর নিজেই বলেছেন যে মোদী এখন দেশের প্রধানমন্ত্রী, তাঁকে শ্রদ্ধা দেখানোটাই দস্তুর; সেখানে নিজেই এমন কাণ্ড করে বসে তিনি দলেরই ক্ষতি করলেন। গঙ্গা-নালির তুলনা টানাই ভুল ছিল অধীরের। তিনি মার্জিত ভাষাতেও তাঁর বক্তব্য রাখতে পারতেন।
পশ্চিমবঙ্গের নেতাদের সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে এটাই সমস্যা। তাঁরা হিন্দিটা রপ্ত করতে পারেন না বলে পিছিয়ে পড়েন, তাঁদের কথাবার্তা নিয়ে তামাশা করা হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রেও একই সমস্যা বিদ্যমান। উত্তর ভারতের নেতারা যেমন দক্ষিণে কল্কে পান না স্রেফ ভাষা রপ্ত করতে পারেন না বলে, তেমনই বাংলার নেতাদের এবারে একটু মনোযোগী হওয়া উচিত হিন্দিটা শিখতে। অন্যথা, 'ক' বলতে গিয়ে 'খ' বলে তাঁরা এমন বিপত্তি ঘটাতেই থাকবেন।