বাঁকুড়ার সোনামুখির বিখ্যাত মাইতো কালী, জেনে নিন নামকরণের ইতিহাস
মাইতো কালী। বাঁকুড়ার সোনামুখির এই কালী জেলার অন্যতম বিখ্যাত পুজো। প্রথা মেনে প্রতিদিনই হয় পুজো। কালীপুজোর সময় পাঁচদিন ধরে পুজো চলে। একসময় বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের পুজো হলেও এই পুজো আজ সকলের
মাইতো কালী। বাঁকুড়ার সোনামুখির এই কালী জেলার অন্যতম বিখ্যাত পুজো। প্রথা মেনে প্রতিদিনই হয় পুজো । কালীপুজোর সময় পাঁচদিন ধরে পুজো চলে আড়ম্বরের সঙ্গে। একসময় বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের পুজো হলেও এই পুজো আজ সকলের।
প্রাচীন শহর বাঁকুড়ার সোনামুখি । এখানে কালী পুজোর রমরমা। তাই মানুষ কালীর শহর নামেই একডাকে চেনে এই ছোট্ট পুরএলাকাকে। পুরসভার অনুমোদনপ্রাপ্ত ১৯ টি বড় পুজো হলেও ভিন্নভিন্ন নামে প্রায় শতাধিক পুজো হয় এখানে। যেমন মাই-তো-কালী, রক্ষা কালী,ডাকাত কালী , ঘুঘু কালী, সার্ভিস কালী, জামাই কালী সহ কত কী। আর সব নাম করণেরই এক একটা ইতিহাস রয়েছে। যেমন দামোদর নদ পার্শ্ববর্তী এই শহরে বেশির ভাগ শিক্ষিত মানুষজন একসময় ডিভিসি সহ বিভিন্ন সংস্থায় চাকরি পান। তারপরই আনন্দে মেতে ওঠেন কালীর আরাধনায়। নাম দেন সার্ভিস কালী। সেরকমই সোনামুখির জামাইরা শুরু করেন জামাইকালী।
তবে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য মাইতো কালী। বহু ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে এই পুজোয়। প্রায় ৪০০ বছরের প্রাচীন এই পুজো । এই নামকরণেও রয়েছে ইতিহাস। ইংরেজি সাল ১৭৪২ সাল, বাংলা ১১৪৯ সালে মারাঠা সেনাপতি ভাস্করপন্ডিত বর্গীদের একটি দলসহ বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর থেকে সোনামুখিতে যায় লুঠপাট করার জন্য বাদ্যভাণ্ডসহ 'হর হর বোম বোম' শব্দ করতে করতে। সোনামুখির রানিরবাজার এলাকায় মা কালীর মন্দিরের সামনে বর্গীদস্যুদল সমবেত হয় লুঠতরাজের জন্য। এই এলাকার চারদিক তখন গাছপালায় ভরা ছিল। তারই মধ্যে ছিল কালীর মন্দির। দিনের বেলাতেই অনেকে ভয়ে মন্দিরের সামনে আসতে সাহস করতো না।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধের মুখ। এই অঞ্চলের মানুষজন সকলে বর্গী দস্যুদের ভয়ে বাইরে বেরোননি। শুনশান চারপাশ। হঠাৎ বর্গীদস্যুদল বাজনা বাজাতে বাজাতে নাচতে লাগলো। তখন এক বৃদ্ধ সাহস করে সন্ধ্যায় দেবীমন্দিরে আলো দেওয়ার জন্য একটি প্রদীপ নিয়ে মন্দিরে ঘটের সামনে রেখে বলিস্থানে হাড়িকাঠের সামনে প্রণাম করছিলেন। এমন সময় বর্গীদলের সর্দার একটি খাঁড়া উঠিয়ে প্রণামরত বৃদ্ধকে বলি দিতে উদ্যত হয়। কিন্তু কোনওভাবেই বৃদ্ধকে বলি দিতে পারেনি বর্গীর দল। কথিত আছে খাঁড়া নামানো যায়নি। উপরন্তু বর্গীদের সর্দার অন্ধও হয়ে যান। পরে ওই বৃদ্ধের চেষ্টাতেই সর্দার দৃষ্টি শক্তি ফিরে পান। এই সময় বর্গীদল বলে তারা আর লুঠপাট করবে না। এরপরেই বাজনা বাজাতে বাজাতে " মায়ী-ত কালী হ্যায়, মায়ী-ত কালী হ্যায়" বলতে বলতে সোনামুখি ছেড়ে চলে যায় বর্গীদল। তখন থেকেই এই কালীর নাম হয় " মাই- তো- কালী "।
প্রতিদিনই হয় পুজো প্রথা মেনে। কালীপুজোর সময় পাঁচদিন ধরে চলে পুজো আড়ম্বরের সঙ্গে। একসময় বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের পারিবারিক পুজো হলেও এখন এই পুজো সকলের।