বহিরাগত তকমা এখনও ঘোচেনি, মানুষের কাছে যেতে কাজই সোপান করেছেন বালুরঘাটের সাংসদ
‘এলাকার কোনও সমস্যা থাকলে জেলা সভাপতিদের জানান। প্রতি বছর সাংসদ তহবিলের টাকায় যতটা উন্নয়ন করা যায়, তার থেকেও বেশি উন্নয়ন করব।’
বালুরঘাট, ২০ ডিসেম্বর : ভোটের আগেই তাঁর নামের পাশে সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছিল বহিরাগত তকমা। একটা সময়ে দলীয় কর্মীরাই তাঁর বিরুদ্ধে এই অভিযোগে সরব হয়েছিলেন। তবে সেই অভিযোগ দূরে সরিয়ে বালুরঘাটের তৃণমূল সাংসদ তথা নাট্যকর্মী অর্পিতা ঘোষ মন দিয়েছিলেন কাজ দিয়ে সবকিছুর জবাব দিতে। সেই কাই তিনি করে চলেছেন সবার অলক্ষ্যে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে যে সুযোগ দিয়েছেন, পাঁচ বছর ধরে মানুষের জন্য কাজ করে তিনি তার প্রতিদান দিতে চান।
নিয়মিত এলাকায় যেতে না পারলেও নিয়ম করে সাংসদ তহবিলের উন্নয়নমূলক কাজগুলি তদারকি করেন তিনি। সার ভেবেছেন, তাঁর হয়ে এলাকা উন্নয়নেরই কাজই প্রতিনিধিত্ব করবে এলাকায়। মানুষের ক্ষোভ জমাট বাঁধবে না, যদি তিনি কাজ দেখাতে পারেন। তাই তো সাংসদ হওয়ার পর বহুদিন এলাকায় না যেতে পারায় যখন তিনি ক্ষোভের মধ্যে পড়ে করজোড়ে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন। বলেছেন, এলাকার কোনও সমস্যা থাকলে জেলা সভাপতিদের জানান। প্রতি বছর সাংসদ তহবিলের টাকায় যতটা উন্নয়ন করা যায়, তার থেকেও বেশি উন্নয়ন করব।
সাংসদ হওয়ার পর কী কী কাজ?
- রাস্তা তৈরি, অ্যাম্বুলেন্স প্রদান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য ও সংস্কৃতিকেন্দ্রের উন্নয়নমূলক ৩০টি প্রকল্পের কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে বালুরঘাটের সাংসদ তহবিলে।
- ২০১৬-১৭ আর্থিক বর্ষে ৪৬টি প্রকল্পের কাজ চলছে। সেগুলির অনেকগুলিই শেষের পথে।
- সরকারি সংস্থার পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থার উন্নয়নেও সমান জোর দেওয়া হয়েছে।
- উত্তর দিনাজপুরের ইটাহার ব্লকে সাংসদ কোটায় ন'লক্ষ ও চার লক্ষ টাকা ব্যয়ে দু'টি রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে।
- ৪ কোটি ৫৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৮টি ব্লকে ১৫টি সিমেন্ট ঢালাইয়ের রাস্তা হয়েছে।
- চারটি স্কুলে টেবিল-চেয়ার দেওয়া হয়েছে।
- হরিরামপুর বানিহারা হাইস্কুলে জেনারেটর দেওয়া হয়েছে।
- গঙ্গারামপুরের রবীন্দ্রভবনে ট্রান্সফর্মার স্থাপন করা হয়েছে।
- হরিরামপুরে ইটপাতা রাস্তা তৈরি করা হয়েছে।
- কুশমণ্ডি পঞ্চায়েত সমিতিকে অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়েছে।
- বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে বজ্রপাত নিরোধক যন্ত্র বসানো হয়েছে।
- সাংসদ কোটার টাকায় ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসার সরঞ্জাম প্রদান করা হয়।
- গঙ্গারামপুর হাসপাতালে তৈরি করা হয়েছে রোগীদের আত্মীয়দের জন্য যাত্রীশেড।
- বংশীহারিতে বালিকাদের মাদ্রাসায় শৌচালয় তৈরি করা হয়।
- শ্মশানের উন্নয়নে কাজ হয় বংশীহারী এলাকায়। শ্মশানযাত্রীদের প্রতীক্ষালয়ও তৈরি হয়।
- হিলি ব্লকে ২০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে অডিটোরিয়াম তৈরির পরিকল্পনা হয়। কাজও চলছে।
- হিলি আরএন হাইস্কুলে শ্রেণিকক্ষের উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষা সামগ্রী দেওয়া হয়।
- হিলি ব্লকের ৬টি এলাকায় বিশুদ্ধ ঠান্ডা পানীয় জলের যন্ত্র বসানো হয়।
- তপন পঞ্চায়েত সমিতিকে একটি অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়।
- বালুরঘাটে জেলা সংগ্রহশালায় ন'লক্ষ টাকা ব্যয়ে পানীয় জল-সহ একাধিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
- গ্রন্থাগার উন্নয়নে বই বিতরণ করা হয় বালুরঘাটে।
কোথায় খামতি রয়েছে?
- বালুরঘাট পুর এলাকার উন্নয়ন স্তব্ধ হয়ে রয়েছে। পঞ্চায়েত স্তরে যেভাবে উন্নয়ন হয়েছে, সেই উন্নয়নের স্পর্শও লাগেনি পুর এলাকায়। প্রশ্ন উঠেছে কেন পুরসভা এলাকায় উন্নয়ন হল না। সাংসদের সঙ্গে পুরসভার বিরোধ কোথায়?
- বালুরঘাট শহরে হাইমাস্ট আলো বসেনি। ত্রিফলা পথবাতিও বসানো হয়নি। সাংসদ পুরসভাকে বলেছিলেন প্রকল্প জমা দিতে।
- আত্রেয়ী সেতুর সংস্কার হয়নি।
- খাঁড়ির বাঁধ এলাকায় শহরের প্রবীণ নাগরিকদের বসার জন্য প্রকল্প জমা দেওয়ার পরও, তা রূপায়ণ হয়নি।
- শহরের বিভিন্ন এলাকায় শৌচাগার তৈরির দাবি থাকলেও তা বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
- পুরসভা এলাকারর সৌন্দর্যায়ণ বিশবাঁও জলে। কোনো পরিকল্পনাই গৃহীত হয়নি।
- পার্কিং সমস্যা মেটানোর কোনও চেষ্টা নেই কোনও কারও।
- এলাকায় সেই অর্থে ঢালাই রাস্তা হয়নি। গ্রাম যেখানে এগিয়ে গিয়েছে, শহর পিছিয়ে পড়েছে উন্নয়নে।
- পিছিয়ে পড়া এলাকা আজও পিছিয়েই রয়েছে। কোনও উন্নয়ন হয়নি। যেখানে গরিব মানুষের বাস, তাঁদের জীবন জীবিকা নিয়ে কোনও পরিকল্পনা নেই জনপ্রতিনিধিদের।
- জনগণের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক তৈরি হয়নি সাংসদের।
- শহর এলাকায় কিছু সৌন্দর্যায়ণের কাজ হয়েছে। বড় প্রকল্প রূপায়ণের কোনও উদ্যোগ নেই।
- এলাকায় কমিউনিটি হল নেই। খেলার মাঠের বিবর্ণ চেহারা। নেই আদর্শ স্টেডিয়াম।
- আদর্শ সুইমিংপুল নেই।
- সেচ ব্যবস্থার পরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠেনি। ক্যানেল সিস্টেম নেই।
- পর্যটন উন্নয়নেও পরিকল্পনার অভাব সুস্পষ্ট।
কী বলছেন বিরোধীরা?
কিছু যে কাজ হয়নি, তা বলা যাবে না। কিছু কাজ অবশ্যই হয়েছে। কিন্তু তা কোনও কোনও বিশেষ এলাকায়। কোনও বড় প্রকল্পের কাজের পরিকল্পনা প্রায় নেই-ই। যা কাজ হচ্ছে, সবই প্রায় ঠিকাদারদের আগ্রহে। পাবলিক ইন্টারেস্ট কাজ আর হচ্ছে কোথায়। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক নারায়ণ বিশ্বাসের কথায়, সাংসদ হন বা কোনও জনপ্রতিনিধি কখনও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে কোনও আলোচনা করার প্রয়োজন মনে করেননি। বিরোধীদেরও যে কোনও মতামত নেওয়া গণতান্ত্রিক রীতি তা মানেন না রাজ্যের শাসকদলের জনপ্রতিনিধিরা। আর তৃণমূল সাংসদ বা বিধায়ক কিংবা কোনও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তো আগে তৃণমূল হতে হবে।
কী বলছেন সাংসদ?
মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। কাজ দিয়েই তার স্বাক্ষর রেখে যেতে চাই। তাই তো শুধু প্রকল্পের সুপারিশ করেই থেমে থাকিনি। অনির্দিষ্টকালের জন্য কাজ ফেলে না রেখে দ্রুত তা রূপায়ণের তদারকি করেছি। ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হওয়ার পথে। প্রথম থেকেই মনিটরিং শুরু করিছ তার ফল পেয়েছি হাতে নাতে। কাজের গতি বেড়েছে। ভবিষ্যতেও একইভাবে কাজ চালিয়ে যাব। দিদি যে সুযোগ দিয়েছেন, তার প্রতিদান তো দিতেই হবে। কাজ দিয়েই মানুষের পাশে থাকব।