বিজেপির ‘আলো’ কাড়ল তৃণমূল, নিমেষে বদলে গেল বীজপুরের রাজনৈতিক চিত্র
‘আলো’হীন হয়ে বিজেপি এখন দিশা খুঁজে পাচ্ছে না বীজপুরে। এক নিমেষেই সব অঙ্ক বদলে দিয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার বীজপুর।
যাঁকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছে বঙ্গ বিজেপি, তাঁর খাসতালুকেই দল এখন অন্ধকার দেখছে। 'আলো'হীন হয়ে বিজেপি এখন দিশা খুঁজে পাচ্ছে না বীজপুরে। এক নিমেষেই সব অঙ্ক বদলে দিয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার বীজপুর। বাংলায় পদ্ম ফোটাতে গিয়ে মুকুল রায়ের গড় বলে পরিচিত বীজপুরের মাটিতে পদ্ম ফোটানো দূরস্ত হয়ে গেল বিজেপির।
বৃহস্পতিবার নোয়াপাড়ায় একটি সভায় প্রাক্তন বিজেপি নেত্রী, যিনি আবার মুকুল-পুত্র শুভ্রাংশুর বিরুদ্ধে বিজেপির প্রার্থী হয়েছিলেন, সেই আলোরানি সরকার যোগ দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসে। তৃণমূল কংগ্রেসের যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে দলীয় পতাকা নেন আলোদেবী। তাঁর সঙ্গে যোগ দেন ছ'জন বিজেপি পদাধিকারী।
এদিন আলোরানি সরকার বিজেপি ছেড়়ে তৃণমূলে যোগ দিয়ে দাবি করেন, তাঁর সঙ্গে উত্তর ২৪ পরগনা ও নদিয়া থেকে প্রায় দেড় হাজার কর্মী যোগ দিলেন তৃণমূলে। আরও অনেক নেতা-কর্মী মুকুল রায়ের বিরুদ্ধচারণ করে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেবেন। মানুষের পাশে থাকতে মানুষের জন্য কাজ করতেই তাঁর এই যোগদান।
এদিন আলোরানি সরকারের দলবদল বীজপুরের রাজনীতিতে পালাবদলের মতোই ঘটনা। এতদিন বীজপুরের রাজনীতিতে তৃণমূল তথা মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে এসেছেন আলোদেবী। অসম লড়াই হলেও মুকুল রায়দের বিরুদ্ধে তিনি কখনও লড়াইয়ের পথ থেকে পিছপা হননি। কিন্তু যাঁর বিরুদ্ধে তাঁর লড়াই, সেই মুকুল রায়কে বিজেপিতে স্থান দেওয়া তিনি মেনে নিতে পারেননি।
দাঁড়াতে পারে যে, শাসকদলের ছত্রছায়ায় থেকে এতদিন যে ক্ষমতা ভোগ করে এসেছেন মুকুল রায় অ্যান্ড কোম্পানি, সেই সুযোগ এবার পাবেন আলোদেবী। রাজনৈতিক বাতাবরণটাই বদলে যেতে পারে বীজপুরের। শুধু মুকুল রায় নন, চ্যালেঞ্জ এবার বেড়ে গেল শুভ্রাংশু ক্ষেত্রেও।
এতদিন শুধু শুভ্রাংশুকে এক ঘরে হয়ে থাকতে হচ্ছিল মুকুল রায়ের বিজেপিতে যোগ দেওয়ার কারণে। তৃণমূলের অন্দরে তাঁর প্রতি অবিশ্বাসের বাতারবরণ তৈরি হয়েছিল। এবার গত ভোটে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী আলোরানি সরকার বিজেপে ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় তাঁর উপর চাপ বাড়ল। সেইসঙ্গে রাজনৈতিক মহলে চর্চা শুরু হয়ে গেল, তবে কি পরেরবারও শুভ্রাংশু বনাম আলোর লড়াই হবে বিধানসভায়? শুধু বদলে যাবে একে অপরের প্রতীক!
যদিও শুভ্রাংশুর বারবার যে কথা বলে চলেছেন, তারপর সেই সম্ভাবনা ক্ষীণ। শুভ্রাংশু বলেছেন, তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করতে এসেছেন। তিনি তৃণমূলে ছিলেন, তৃণমূলে আছেন, ভবিষ্যতেও থাকবেন। দল তাঁকে নেতা বা বিধায়ক হিসেবে না চাইলেও সাধারণ কর্মী হিসেবে তিনি কাজ করে যাবেন তৃণমূলের হয়ে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে আলোদেবী বলেন, 'আমার কাছে মুকুল রায়ই ফ্যাক্টর। শুভ্রাংশু নন। শুভ্রাংশু কখনও ফ্যাক্টর ছিলেন না। শুভ্রাংশুর সঙ্গে একসঙ্গে লড়াই করতে বা মঞ্চ শেয়ার করতে তার কোনও আপত্তি নেই।' তাঁর মতে, আসল লোক মুকুল রায়। তিনিই তো এখন বিজেপিতে। আর তিনি বীজপুরবাসীর জন্য কাজ করতে চান। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলে সেই সুযোগ মিলবে বলেই তিনি যোগ দিয়েছেন।