সরস্বতী পুজোর পরের দিনই দুর্গোৎসব! শুরু ‘অকালবোধন’
বিশাল বটবৃক্ষের তলায় দেড়শো বছরের সুপ্রাচীন মন্ত্রপূত ত্রিশূল পোতা। ধূপ-ধুনোর কুণ্ডলী পাকানো ধোঁয়ায় মায়াবী আবেশ। বৈদিক মন্ত্রোচ্চারণে সরস্বতী পুজোর পরের দিনই ‘অকালবোধন’ দেবী দুর্গার।
বিশাল বটবৃক্ষের তলায় দেড়শো বছরের সুপ্রাচীন মন্ত্রপূত ত্রিশূল পোতা। ধূপ-ধুনোর কুণ্ডলী পাকানো ধোঁয়ায় মায়াবী আবেশ। বৈদিক মন্ত্রোচ্চারণে সরস্বতী পুজোর পরের দিনই 'অকালবোধন' দেবী দুর্গার।
শ্রীপঞ্চমীর পরের দিন শুক্লা ষষ্ঠীতে চিন্ময়ী দুর্গা ফের এসেছেন এই ধরাতে। তাঁর মর্ত্যে আগমন চিরাচরিত চার সন্তান পরিবৃতা হয়ে। তবে, এখানে তিনি দুর্গা নামে পরিচিতা নন, তাঁর 'পরিচয়' দেবী কাত্যায়নী।
গৌরবর্ণা, লাবণ্যময়ী মাতৃস্বরূপা দেবী। কাত্যায়ন মুনির আরাধ্যা গৌরবর্ণা দুর্গা। তাঁরই কঠিন তপস্যায় ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর এই মহাশক্তিশালিনী অপরূপাকে শস্যভাণ্ডারের মধ্যে এনেছিলেন। শস্যদায়িনী সেই দুর্গার আরাধনায় প্রথমব্রতী হয়েছিলেন কাত্যায়ন মুনি। অকালের এই দুর্গাকে তাই বলা হয় দেবী কাত্যায়নী।
বসন্ত ঋতুতে আরাধ্যা দেবী বাসন্তীস্বরূপা। রাবণ বধের উদ্দেশ্যে শ্রীরামচন্দ্র অকালবোধন করেছিলেন। সেই থেকেই শুরু শারদকালীন দুর্গা-বন্দনার। আবার অনেকেরই অজান্তে কাত্যায়নীরূপী দুর্গার আরাধনায় মেতে ওঠা সরস্বতী পুজোর ঠিক পরের দিন থেকেই। পাঁচদিনের পুজো, জমজমাট মেলা সাতদিনের। হাওড়ার আমতার কুরিট গ্রাম কাত্যায়নী আরাধনায় মাতোয়ারা হয়ে ওঠে বসন্ত পঞ্চমীর পরের দিন থেকেই।
সাতের দশকে হাওড়ার আমতার কুরিট, বড়মহরা, ছোট মহরা কোটালপাড়া, চাকপোতা, বলরামপুর, খোসালপুর-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা ছিল কখনও খরা, আবার কখনও বন্যার কবলে। এলাকার মানুষের একমাত্র জীবিকা ছিল চাষবাস। আজও সমানে চলছে সেই পরম্পরা।
শস্যের ফলনেই নিয়ন্ত্রিত জনজীবন। কিন্তু বছর বছর শস্যহানিতে মানুষের দুর্দশা ক্রমেই বেড়ে চলেছিল। তখনই দেবী কাত্যায়নীর পূজার্চনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। তাই এই পুজোর মূল উপাচারই হল শস্য। দুর্দশার হাত থেকে রক্ষা পেতে বছর ৪৫ আগে যে ব্রত নিয়েছিলেন কুরিটবাসী, তা আজও অমলিন। বেড়েছে আতিশয্য। সবুজ হয়েছে প্রান্তর। অকাল 'দুর্গোৎসব'-এর মণ্ডপও তাই চিরসবুজ।