জয়ললিতার পথেই মা ক্যান্টিন! কোটি কোটি টাকা সরকার লুঠ করার ছক কষছে বলে অভিযোগ মান্নানের
জয়ললিতার পথেই মা ক্যান্টিন! কোটি কোটি টাকা সরকার লুঠ করার ছক কষছে বলে অভিযোগ মান্নানের
প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা আম্মা ক্যান্টিন চালু করেছিলেন। এবার সে পথে হেঁটেই মা প্রকল্পের ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ সোমবার থেকে এই মা ক্যান্টিনের পথ চলা শুরু। মাত্র পাঁচ টাকায় এখানে মিলবে পেট ভর্তি খাওয়াদাওয়া। একেবারে দরজার কড়া নাড়ছে বিধানসভা নির্বাচন। আর নির্বাচনের আগে মমতার এই প্রকল্পকে কটাক্ষ করতে ছাড়লেন না বিরোধীরা। শুধু কটাক্ষ নয়, ভোটের আগে মা ক্যান্টিন নিয়ে বড়সড় কেলেঙ্কারি তৈরি হবে বলে মনে করছেন কংগ্রেস নেতা তথা বর্ষীয়ান বিধায়ক আব্দুল মান্নান। শুধু তাই নয়, এই পিছনে বড় দুর্নীতিও হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ তাঁর।
লুঠ করার ছক করছে সরকার
সামনেই ভোট। ভোট অন অ্যাকাউন্ট পেশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যপাধ্যায়। আর ভোটের আগে মে মাস পর্যন্ত চলার জন্যে এই বাজেট পেশ করা হয়। এরপর ভোটের পর নতুন করে সরকার গঠন হলে ফের বাজেট পেশ করা হয়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোট অন অ্যাকাউন্ট বাজেটে একেবারে কল্পতরু ছিলেন। বেতন বৃদ্ধি সহ একাধিক নতুন প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ছিল এই মা ক্যান্টিন। বাজেটে প্রস্তাব দেওয়া হলেও ভোটের আগে চালু হয়েছে এই ক্যান্টিন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই উদ্যোগকে ভোটের আগে গিমিক ছাড়া আর কিছু হতে পারে না বলেই দাবি আব্দুল মান্নানের।
তাঁর অভিযোগ, "গরিব মানুষকে আহার দেওয়ার নাম করে কোটি কোটি টাকা লুঠ করার ছক করছে সরকার। আর লোককে দেখাচ্ছে আমি ৫ টাকার খাবার দিচ্ছি। সাহস থাকলে মুখ্যমন্ত্রী জানান, মার্চ মাস পর্যন্ত যে হিসেব আপনি বিধানসভায় পেশ করেছেন, তাতে এই প্রকল্পের খরচের হিসেব আছে কিনা।" বাজেট পেশ হয় আগামী অর্থবর্ষের খরচের নিরিখে। তাহলে ভোটের আগে কীভাবে এই ক্যান্টিন চালু হল তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আব্দুলসাহেব।
মা ক্যান্টিন নিয়ে শুরু রাজনৈতিক তরজা
মাত্র পাঁচ টাকায় ডাল, ভাত সঙ্গে আরও অনেক কিছু। কার্যত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সিদ্ধান্ত মাস্টারস্ট্রোক বলছেন অনেকেই। অন্যদিকে আবার এই নিয়ে শুরু হয়েছে জোর রাজনৈতিক তরজাও। এই প্রসঙ্গে বিজেপির রাহ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, বাংলার মানুষকে গরিব করে রেখেছে এই সরকার। তাই লঙ্গরের ধাঁচে ৫ টাকায় ডিমভাত খাওয়ানো হচ্ছে। শুধু তাই নয়, মুখ্যমন্ত্রী বলেন ৮০ শতাংশ মানুষকে ২ টাকা করে চাল খাওয়াবো। কারণ বাংলার মানুষের কাছে ৩০ টাকা করে চাল কেনার পয়সা নেই। দিদিমণি চাকরি-বাকরি কাউকে দেননি। বাংলার মানুষকে গরিব করে রেখেছেন। তাই ৮০ শতাংশ লোককে ২ টাকা কিলো চাল খাইয়েছে। একটা সময় বাংলায় লঙ্গর চলত ৭০-৭২ সালের দিকে। মানুষ খেতে পেত না তাই লঙ্গর চলত। আজকে বাংলার সাধারণ মানুষের কাছে খাওয়ার পয়সা নেই। রোজগার নেই। তাই ৫ টাকা করে ক্যান্টিনে খাবার খাওয়াতে হচ্ছে। এই পাঁচ টাকা করে খাবার বিলি করে নিজের সরকারেরই ব্যর্থতা তুলে ধরলেন মুখ্যমন্ত্রী, এমনটাই বিস্ফোরক দাবি করেছেন দিলীপ ঘোষ। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সুজন চক্রবর্তীও। তিনিও ভোটের সময় এমন ক্যান্টিন খোলার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর মতে, মা ক্যান্টিনের মাধ্যমে কি ভোট কিনতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী!
বাজেটে ঘোষণার পর ৭-৮ দিনেই চালু করেছি, বললেন মমতা
আজ ভার্চুয়াল মাধ্যমে এই ক্যান্টিনের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। আপাতত কলকাতার ১৪৪টি ওয়ার্ডের ১৬টি বরোয় শুরু হল এই প্রকল্প। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, 'পরীক্ষামূলকভাবে আপাতত চালু হল। পরে গোটা রাজ্যেই শুরু হয়ে যাবে।' শুধু তাই নয়, মুখ্যমন্ত্রীর মতে, এটা নজিরবিহীন প্রকল্প। প্রথমে কিছু সমস্যা হবে। খাবার ফুরিয়ে যেতে পারে। পরে চাহিদা দেখে বন্দোবস্ত করা হবে। বাজেটে ঘোষণার পর ৭-৮ দিনেই চালু করেছি। প্রকল্পের জন্য বাজেটে বরাদ্দ করা হয়েছে ১০০ কোটি। বক্তব্য শেষে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই ক্যান্টিন মা মাটি মানুষের জন্যে। অন্যদিকে, রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের মতে, এই মা কিচেন গরিব মানুষের জন্য আশীর্বাদ হতে চলেছে। তবে দিলীপ ঘোষ সহ বিরোধীদের বক্তব্য প্রসঙ্গে ফিরহাদ জানিয়েছেন, এই বিষয়টি ওরা বুঝবে না।
শোভন-বৈশাখী 'উধাও' ভ্যালেন্টাইন্স সপ্তাহে, অমিত শাহের সফরের আগে জল্পনা