দু'মুঠো ভাত দিল না ছেলে, খিদের জ্বালায় বিষপান বাবা, মায়ের

মানিক মণ্ডল (৭১) এবং মীরা মণ্ডলের (৬৫) দুই ছেলে, এক মেয়ে। বড় ছেলে চঞ্চল মণ্ডল ইসিএল (ইস্টার্ন কোলফিল্ডস লিমিটেড) কর্মী। ছোট ছেলে উৎপল মণ্ডল ডিএসপি (দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট)-তে অফিসার। দু'জনেরই সচ্ছল অবস্থা। মেয়ে সীমা মণ্ডল বিবাহিতা। দুই ছেলের সঙ্গে বাবা-মায়ের কথা ছিল, তিন মাস-তিন মাস করে তাঁরা সংশ্লিষ্ট ছেলেদের বাড়িতে থাকবেন।
গত তিন মাস ছিলেন বড় ছেলে চঞ্চল মণ্ডলের আলাডি গ্রামের বাড়িতে। কিছুদিন আগে তিন মাসের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলেও বাবা-মাকে নিতে আসেননি উৎপল মণ্ডল। অভিযোগ, বড় ছেলে ক্রমশ দুর্ব্যবহার শুরু করে। দিন দশেক আগে থেকে বাবা-মাকে আর খেতে দিচ্ছিল না। নিজেদের খাওয়ার সময় বুড়ো বাবা-মাকে আলাদা ঘরে ঢুকিয়ে তালা দিয়ে দিত। বৃদ্ধ মানিক মণ্ডলের কাছে সামান্য যা টাকা ছিল, তা দিয়ে তিন-চারদিন শুকনো পাউরুটি কিনে তা জলে ভিজিয়ে খেয়েছিলেন। এক সপ্তাহ আগে সেই টাকাও শেষ হয়ে যায়। বারবার ছেলেকে অনুরোধ করেন, অন্তত দু'টো বাসি ভাতও যদি দেওয়া হয়! কিন্তু তাতে ছেলে কর্ণপাত করেনি। কেন বাড়িতে বসে দু'জনে 'অন্ন ধ্বংস' করছে, এই খোঁটা দেওয়া হয় বারবার। অতিষ্ট হয়ে শেষ পর্যন্ত শনিবার রাতে দু'জন বিষ খান। জানাজানি হওয়ায় প্রতিবেশীরাই দু'জনকে বাড়ি থেকে বের করে এনে রবিবার সকালে ভর্তি করেন আসানসোল জেলা হাসপাতালে। মীরা মণ্ডলকে ডাক্তাররা মৃত বলে ঘোষণা করেন। আর মানিকবাবুর অবস্থা আশঙ্কাজনক।
বাবা-মায়ের এই পরিণতি জানতে পেরে আসানসোল দক্ষিণ থানার দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন মেয়ে সীমা মণ্ডল। যদিও এখনও কাউকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। ইসিএলের অফিসার তথা স্থানীয় আইএনটিইউসি নেতা চণ্ডী চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, "মানিকবাবুর নিজের জমি ছিল। উনি ইসিএল-কে সেই জমি দিয়েছিলেন এই শর্তে যে, এক ছেলেকে চাকরি দিতে হবে। সেই ছেলেই এমন কাণ্ড ঘটাল! এত টাকা মাইনে পায়, অথচ বাবা-মাকে দু'টো ডাল-ভাতও কি দেওয়া যেত না? অমানুষ না হলে এমন ঘটনা কেউ ঘটায় না। পশুরাও লজ্জা পাবে।"