ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ চরিত্র বদলে ধনুষ্কোডি সুপার সাইক্লোন হবে না তো! মনে আছে ১৯৬৪-র কথা
ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ চরিত্র বদলে ধনুষ্কোডি সুপার সাইক্লোন হবে না তো! মনে আছে ১৯৬৪-র কথা
ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ ফুঁসে উঠেও শক্তি হারিয়ে ফেলেছে মাঝসমুদ্রে। পুরীর উপকূলে ধাক্কা খাওয়ার আগেই শক্তি হারিয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়ছে জাওয়াদ। তবু আশঙ্কা যাচ্ছে না কিছুতেই। যদি ফের সমুদ্রে শক্তি বাড়িয়ে ধেয়ে আসে বাংলার উপকূলের দিকে। কেননা ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের নিম্নচাপ রূপ যত ঘোরালো হচ্ছে ততই পূর্ব স্মৃতি ফিরে ফিরে আসছে।
জাওয়াদের গতিপথ পরিবর্তনে সঞ্চার হয়েছে ভীতির
আবহবিদদের কথায়, যতবার ডিসেম্বরে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছে বঙ্গোপসাগরে, ততবারই মহাপ্রলয়ের রূপ নিয়েছে পরিস্থিতি। এমনিতেই এ সময়ে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয় না। আর ঘূর্ণিঝড় তৈরি হলেও তা বাংলা বা ওড়িশা অভিমুখে আসে না। এবার তার ব্যতিক্রম ঘটেছে। ওড়িশা হয়ে বাংলার দিকে গতিপথ পরিবর্তন করেছে জাওয়াদ। তাতেই সঞ্চার হয়েছে ভীতির।
১২৯ বছরের ইতিহাসে বাংলায় বিরল ঘূর্ণিঝড়
ঘূর্ণিঝড়ের ১২৯ বছরের ইতিহাস ঘেঁটে কেবল একটিবারই এমন ঘটনা ঘটেছিল বাংলার উপকূলে। ১৯৮১ সালে সুপার সাইক্লোন আছড়ে পড়েছিল বাংলার উপকূলে। সুন্দরবন অঞ্চলে ওই ঝড় আছড়ে পড়ার পর বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে গিয়েছিল। তার ফলে প্রভূত ক্ষতি হয়েছিল। আর ওড়িশার উপকূলে এর আগে ১৯৯৩ সালের একটি ভিন্ন আর কোনও ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসেনি বা আছড়ে পড়েনি।
ভয় ধরায় ১৯৬৪ সালের ধনুষ্কোডি সুপার সাইক্লোন
কিন্তু এবার বাংলা বা ওড়িশাকে ভয় ধরাচ্ছে না ওই ঝড়, বরং ভয় ধরাচ্ছে শ্রীলঙ্কা উপকূলে ১৯৬৪ সালে আছড়ে পড়া একটি ঝড়। তখন নামকরণ হত না ঝড়ের। ওই ঝড় তবু ধনুস্কোডি সুপার সাইক্লোন নামে পরিচিত। ১৯৬৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর ধনুষ্কোডি সুপার সাইক্লোন আছড়ে পড়েছিল স্থলভাগে। ওই ঝড়ের ফলে প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল ধনুষ্কোডি দ্বীপ। সে কারণেই তা ধনুষ্কোডি সুপার সাইক্লোন রূপে পরিচিত।
কী ঘটেছিল ১৯৬৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর, আবহবিদের কথায়
এই ধনুস্কোডি সুপার সাইক্লোনের চরিত্র ছিল একেবারে ভিন্নরকমের। তার সঙ্গে বেশ মিলে যায় ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের চরিত্র। তাই বাংলার আবহবিদরা ভয় পাচ্ছেন জাওয়াদকে। যদি তেমন কোনও ঘটনা ঘটে। কী ঘটেছিল ১৯৬৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর। আবহবিদ সুজীব কর এদিন জনপ্রিয় এক টিভি শোয়ে এসে ব্যাখ্যা দিলেন সেদিনের সেই ভয়প্রদ ঘটনার।
২৭০ কিলোমিটার গতিতে আছড়ে পড়েছিল সুপার সাইক্লোন
শ্রীলঙ্কার উপকূলে ধেয়ে আসার পথে শক্তি হারিয়ে ফেলেছিল ওই ঘূর্ণিঝড়। জাওয়াদের মতোই ওই ঘূর্ণিঝড় নিম্নচাপের রূপ নিয়ে শ্রীলঙ্কা অভিমুখে ধেয়ে আসছিল। যখন নিম্নচাপটি ২০ কিলোমিটার দূরে ছিল উপকূল থেকে, তখন ফের শক্তিসঞ্চয় করে শ্রীলঙ্কার ধনুস্কোটি দ্বীপাঞ্চলে আছড়ে পড়েছিল। রামেশ্বরম থেকে ধনুষ্কোডি ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যায় ওই ঝড়ের দাপটে। ২০ কিলোমিটারের মধ্যে শক্তিসঞ্চয় করে ২৭০ কিলোমিটার গতিতে আছড়ে পড়েছিল ওই দ্বীপাঞ্চলে।
জাওয়াদ আছড়ে পড়ার আগে ভীতির কারণ ধনুষ্কোডি
আবহবিদ সুজীব কর, আরও একটি উদাহারণ দিয়েছিলেন অসময়ে তৈরি হওয়া ঝড়ের হঠাৎ শক্তি বাড়িয়ে আছড়ে পড়ার। ১৯৯৩ সালে সুপার সাইক্লোন পুরী পেরিয়ে পারাদ্বীপের দিকে ধেয়ে যাওয়ার সময় জলস্তম্ভের আকার নিয়ে আছড়ে পড়ে উপকূলে। তার প্রভাবেও ব্যাপক ক্ষত ক্ষতি হয়। ফলে এই সমস্ত পূর্ব স্মৃতি এবার জাওয়াদ আছড়ে পড়ার আগে ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলা ও ওড়িশার কাছে।