বাংলায় দ্বিতীয় সেরা কে, সবংয়ে প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পেয়ে বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ সিপিএমের
পদ্ম শিবিরের বাড়বাড়ন্ত রুখে সিপিএম তথা বামফ্রন্ট আবার দ্বিতীয় হয়ে বুঝিয়ে দিল, তারাই বাংলার দ্বিতীয় ক্ষমতাশালী দল। আসন্ন পঞ্চায়েত যুদ্ধেও তারা সেই প্রমাণ রাখতে তৈরি।
সবং উপনির্বাচনের ফলাফলে পঞ্চায়েত ভোটের আগে স্বস্তি ফিরে পেল সিপিএম। রাজ্য রাজনীতিতে ক্রমেই প্রাসঙ্গিকতা হারাচ্ছিল তারা। কিন্তু পদ্ম শিবিরের বাড়বাড়ন্ত রুখে সিপিএম তথা বামফ্রন্ট আবার দ্বিতীয় হয়ে বুঝিয়ে দিল, তারাই বাংলার দ্বিতীয় ক্ষমতাশালী দল। আসন্ন পঞ্চায়েত যুদ্ধেও তারা সেই প্রমাণ রাখতে তৈরি। বিজেপিকে খাতায়-কলমে শক্তিশালী দেখানো হলেও, সিপিএমই যে তৃণমূলের চ্যালেঞ্জার হতে চলেছে, তা একপ্রকার নিশ্চিত করে দিল সবং নির্বাচন।
[আরও পড়ুন: 'থার্ড বয়' বিজেপি! তিনপক্ষের ভোট কেটে বেজায় খুশি দিলীপের বার্তা মানসকে]
রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করেছিল সিপিএমকে এবার দূরবীন দিয়ে খুঁজতে হবে সবংয়ে। তৃতীয় বা চতুর্থ স্থান পাবে তারা। কিন্তু সেইসব হিসেব উল্টে দিয়ে ফের দ্বিতীয় দল হয়ে উঠে এসেছে সিপিএম তথা বামফ্রন্ট। বিজেপির থেকে পাঁচ হাজার ভোট বেশি পেয়েছে তারা। কংগ্রেসের সঙ্গে জোট না রেখে এককভাবে লড়ে এই ফলাফল তাদের অক্সিজেন দেবে বলেই মনে করছে নেতৃত্ব।
২০১৬-য় বাম কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে মানস ভুঁইয়া তৃণমূলকে ৪৯ হাজার ভোটে হারিয়েছিলেন। তার আগে ২০০৬ সালের নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে ত্রিমুখী লড়াইয়ে মানস ভুঁইয়া কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে জয়যুক্ত হয়েছিলেন তৃণমূল ও বামফ্রন্টের চ্যালেঞ্জ উপেক্ষা করে। ফলে এই কেন্দ্র কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল।
এবার সিপিএম এই কেন্দ্রে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটও করেনি, আর ফ্রন্ট-সঙ্গী বাংলা কংগ্রেসকেও ছাড়েনি এই কেন্দ্রটি। বরং পঞ্চায়েতের আগে শক্তি পরখ করতে নিজেদের প্রার্থীই দাঁড় করিয়েছিলেন। তার ফল পেয়েছে হাতেনাতে। সিপিএম দ্বিতীয় হয়েছে। তৃণমূলের কাছে ৬৪ হাজার ভোটে জিতলেও মানুষ বুঝিয়ে দিয়েছে বামেরা নিজেদের শক্তিতে লড়ুক, তা বুঝিয়ে দিয়েছে।
এতদিন কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে তাদের কোনও লাভ হয়নি, যা লাভের গুড় কংগ্রেসই খেয়েছে বলে ধারণা ছিল সিপিএমের একাংশের। এই মতাদর্শে বিশ্বাসীদের গুরুত্ব আরও বাড়ল। ফলে রাজ্যে আরও দুই কেন্দ্রের উপনির্বাচনে ও পঞ্চায়েতে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের সম্ভাবনাও কমল বামেদের।
বামসঙ্গ ছাড়া কংগ্রেসের হাল দুর্বিসহ হয়ে উঠল রাজ্যে। নিজেদের গড়েও কংগ্রেস ধরাশায়ী হল। একেবারে চতুর্থ স্থানে পৌঁছে গেল তারা। গোহারা হয়ে কংগ্রেস এখন সাংগঠনিক দুর্বলতাকেই বড় করে দেখছে। কংগ্রেস যুক্তি সাজাচ্ছে এই কেন্দ্রে আমাদের সংগঠন দুর্বল হয়ে পড়েছিল। কংগ্রেসের কথায় স্পষ্ট, মানস ভুঁইয়াই ছিল এই কেন্দ্রে কংগ্রেসের প্রাণভোমরা। তিনি তৃণমূলে চলে যাওয়ার পর লড়াইয়ের শক্তি ছিল না কংগ্রেসের।
এদিকে সিপিএম প্রার্থী রীতা মণ্ডল জানা সবং ভোট হেরে বলছেন, 'এই কেন্দ্রে জয় হয়েছে সন্ত্রাসের। ভোট-সন্ত্রাস করে, ছাপ্পা দিয়ে বিপুল ভোটে জেতেছে তৃণমূল। নইলে আমরা আরও ভালো ফল করতে পারতাম। এই নির্বাচন থেকে অন্তত এটা প্রমাণ হয়েছে, যে রাজ্যে দ্বিতীয় রাজনৈতিক শক্তি তাঁরাই।'
এই ভোট থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী দিনে সিপিএম একলা চলো নীতিতেই চলবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তাহলে সিপিএম অনেক ভালো রেজাল্ট করতে পারবে। এবং কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে নীতিহীনতায় ভুগতে হবে না। আর রাজ্যে অন্তত দ্বিতীয় হওয়ার বিষয়টিও প্রশ্নের মুখে পড়বে না বলে তাঁদের বিশ্বাস।
[আরও পড়ুন:প্রথম দফায় যুদ্ধে হেরে মুকুল-গর্জন, এবার তৃণমূলের 'কেষ্ট'কে বুঝে নেওয়ার দাওয়াই]