'বঙ্গে বিজেপির শক্তি বাড়ছে', একেবারে বামেদের নাকের উপর দিয়ে করাত চালিয়ে দিলেন কারাট
বিগত কয়েকটি বড় নির্বাচনে ভোট শতাংশের হার শুধুই কমেছে তাঁদের। ২০০৯ সালে পতনশীল সাম্রাজ্যেও পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম-এর ভোট শতাংশ ছিল ৩৩।
বিগত কয়েকটি বড় নির্বাচনে ভোট শতাংশের হার শুধুই কমেছে তাঁদের। ২০০৯ সালে পতনশীল সাম্রাজ্যেও পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম-এর ভোট শতাংশ ছিল ৩৩। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তা কমে দাঁড়ায় ৩০ শতাংশে। ২০১৪-র সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাটি একলাফে কমে হয় ২৩ এবং ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে তা কমে দাঁড়ায় ২০ শতাংশতে।
অন্যদিকে, এই চারটি নির্বাচনে রাজ্যে বিজেপির শতকরা ভোটের হিসেবে ছিল যথাক্রমে, ৮ শতাংশ, ৬ শতাংশ, ১৭ শতাংশ ও ১০ শতাংশ। সাধারণ বিশেষণে বলা হচ্ছে বামেদের এই ক্ষয়তে লাভবান হচ্ছে বিজেপি আর সেটা শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষেও ভাবার বিষয়। আর, বামেদের এই প্রবল দুর্দিনে সিপিএম-এর প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট এমন একটি মন্তব্য করলেন যাতে বিরক্ত বাম শিবিরের একাংশই।
দলের অন্যতম বড় নেতার মুখে এমন আত্মসমপর্ণের সুর?
বিজেপির ধাক্কায় যেখানে বামেরা রাজ্যে ক্রমশ তৃতীয় শক্তিতে পরিণত হচ্ছে এবং তৃণমূলের বিকল্প হিসেবে গেরুয়াবাহিনীকে সমর্থন না দিতে বারংবার রাজ্যবাসীর কাছে আর্জি জানাচ্ছেন তাঁরা, সেখানে কারাট ফস করে বলে বসেছেন যে বাংলায় বিজেপির শক্তি বাড়ছে বলেই মনে হচ্ছে। অস্ত্বিত্বরক্ষার লড়াইতে দলের অন্যতম বড় সেনানীকে এমন বিরূপ মন্তব্য করতে শুনে স্বাভাবিকভাবেই মনোবল বিগড়েছে কাস্তে-হাতুড়ি ব্রিগেডের।
কারাট কংগ্রেসের বিরুদ্ধেও মন্তব্য করে চলেছেন
সদ্য নিজের রাজ্য কেরালাতে লোকসভা নির্বাচনের পর্ব সঙ্গে হওয়ার পরে একটি মালায়ালম সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকারে সিপিএম পলিটব্যুরোর সদস্য কারাট তাঁর মতামত দিতে গিয়ে বলেন যে বাংলায় গেরুয়া দলের পালে হওয়া লাগতে পারে। পাশাপাশি, কংগ্রেসের দিকেও আঙ্গুল তোলেন এই বর্ষীয়ান নেতা; অভিযোগ করেন যে রাহুল গান্ধীর দল বিজেপি-বিরোধী ঐক্য গড়ে তুলতে সঠিক ভূমিকা পালনে ব্যর্থ। অতীতে রাহুলের কেরালার ওয়ানাড কেন্দ্র থেকে লড়া নিয়েও মন্তব্য করেছেন কারাট, বলেছেন বিজেপি নয়, আসলে কংগ্রেস সভাপতি লড়ছেন বামেদের বিরুদ্ধে।
কেন্দ্রে এবারে অ-বিজেপি সরকার আসবে বলে আশা করলেও কারাট পশ্চিমবঙ্গে তাঁর নিজের দলকেই তৃণমূলের বিকল্প হিসেবে ধরেননি, ধরেছেন বিজেপিকে -- অন্তত তাঁর কথাটা এটা পরিষ্কার। এবারে বাংলায় কংগ্রেস ও বামেদের একটি সমঝোতার কথা এগোলেও শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি। তার পরে কারাটের এই মন্তব্য স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন তুলেছে যে তিনি বাংলায় তৃণমূলের বিকল্প হিসেবে বামেদের সম্ভাবনা আর বিশেষ দেখছেন না।
গত ডিসেম্বরেই অভিযোগ উঠেছিল যে কারাট শিবির বিজেপির কাছে বিপুল অঙ্কের ঘুষ খেয়েছে
কারাটের এই মন্তব্যে সিপিএম-এর চটার কারণ আরও রয়েছে। গত ডিসেম্বরে কেরালা থেকে দলের এক প্রাক্তন সাংসদ এপি আব্দুল্লাকুট্টি অভিযোগ করেন যে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ ভোটকে ভাগ করার লক্ষ্যে সম্প্রতি রাজস্থানে বিজেপির থেকে কারাট শিবির ১০০ কোটি টাকা ঘুষ খেয়েছে। কান্নুর থেকে টানা দু'বারের সাংসদ আব্দুল্লাকুট্টি অভিযোগ করেন যে রাজস্থানে গত বিধানসভা নির্বাচনে একাধিক প্রার্থী দাঁড় করিয়ে সিপিএম বিজেপি-বিরোধী ভোটে থাবা বসিয়ে কংগ্রেসের জয়ের রাস্তায় বাধা সৃষ্টি করে। ২০০৯ সালে কেরালা সিপিএম-এর নেতৃত্বের সঙ্গে মতবিরোধের ফলে আব্দুল্লাকুট্টি দলত্যাগ করে কংগ্রেসে যোগ দেন।
কারাটের সঙ্গে কংগ্রেসের বৈরীর ইতিহাস সর্বজনবিদিত। ২০০৮ সালে তৎকালীন ইউপিএ-১ সরকার থেকে সমর্থন সরিয়ে নেন কারাটের নেতৃত্বাধীন বামেরা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু চুক্তির প্রসঙ্গে। সরকার বেঁচে যায় কিন্তু তার পরেই জাতীয় রাজনীতিতে বামেদের প্রাসঙ্গিকতা কমতে থাকে। ইউপিএ-২ তে যোগ দেয় তাঁদের রাজ্যস্তরের দুশমন তৃণমূল। ২০১৬ সালে বাংলায় বাম-কংগ্রেস জোটের পথেও কাঁটা বিস্তার করে কারাট শিবির।
আর এবারে তিনি সরাসরি বাংলায় বিজেপির উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকেই ইঙ্গিত দিলেন।
সত্যিই, আদর্শ বড় কঠিন ঠাঁই।