
বিজেপিতে ঘরে ঘরে কোন্দল, মিঠুন-সুকান্তের সামনেই ফাঁস করলেন নেতা-কর্মীরা
পঞ্চায়েত ভোট এগিয়ে আসছে, পাল্লা দিয়ে কোন্দল বাড়ছে বিজেপিতে। ঘরোয়া সেই কোন্দল এবার প্রকট হয়ে দেখা দিল বিজেপির কর্মী সম্মেলনে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও বাংলায় নয়া মুখ মিঠুন চক্রবর্তীকে সামনে পেয়ে স্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন দলের কর্মীরা। তার ফলে অস্বস্তি পড়লেন সুকান্ত-মিঠুনরা।

শনিবার সন্ধ্যায় বর্ধমান দুর্গাপুরের লাউদোহার ঝাঁঝরা কলোনিতে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে দলের কর্মী-সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকের ঝাঁঝরা কলোনিতে শনিবার বিকেলের সেই পঞ্চায়েত কর্মী-সম্মেলনে এক পক্ষের অভিযোগের তিরে বিদ্ধ হন দলেরই অন্য একটা পক্ষ। পঞ্চায়েত ভোটের আগে সেই কোন্দল বুমেরাং হতে পারে বিজেপির পক্ষে, মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
বর্ধমান দুর্গাপুরের এই কর্মী-সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বীরভূমের বিজেপি বিধায়ক অনুপ সাহা, দুর্গাপুরের বিধায়ক লক্ষণ ঘড়ুই, দলের জেলা সভাপতি দিলীপ দে এবং মিঠুন চক্রবর্তী-সহ অন্যরা। প্রকাশ্য এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিম বর্ধমান জেলার নানা প্রান্ত থেকে আসা কয়েক হাজার বিজেপি কর্মী সমর্থক। নির্ধারিত সময়ের প্রায় এক ঘন্টা পর সভাতে উপস্থিত হন দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও মিঠুন চক্রবর্তী।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সরব হন রাজ্য সরকার ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, "তৃণমূল চারদিকে সন্ত্রাস করছে। ডিসেম্বর মাস আসতে দিন তখন কে কার হাত কাটে দেখা যাবে। কয়লা-বালি চোরেরা সব জেলে যাবে। ছাড় পাবে না কেউ। রাজ্যের মানুষের টাকা আত্মসাৎ করে রাজ্য সরকার ৫০০ টাকা করে দিচ্ছে। বিজেপি সরকার এলে কথা দিচ্ছি সবাই দু-হাজার টাকা করে পাবে।"
সুকান্ত মজুমদারের পর বক্তৃতা দিতে ওঠেন মিঠুন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, "আজ আমি কিছু বলব না। সবার কথা শুনব।" এরপরেই তিনি মাইক তুলে দিতে বলেন দলের কর্মীদের হাতে। মাইক হাতে নিয়ে বারাবনি থেকে আসা এক মহিলা কর্মী অভিযোগ করেন বিধানসভা ভোটের পর কর্মীরা আক্রান্ত হলেও সেইসময় দলের কোনও নেতা পাশে এসে দাঁড়ায়নি।
সালানপুরের বাসিন্দা বিক্রম নামে এক বিজেপিকর্মী বলেন, জেলায় দলের নেতারা তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে গোপন আঁতাত করে চলছে। যোগ্যরা দলে সম্মান পাচ্ছেন না। দুখীরাম চক্রবর্তী নামে অন্য এক কর্মী অভিযোগ করেন, তিনি আগে কিষান মোর্চার সভাপতি ছিলেন। তাঁকে সেই পদ থেকে হটিয়ে অযোগ্য একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় এক বৃদ্ধা মহিলা বলেন স্বামী অসুস্থ ভিক্ষে করে খাই, স্থানীয় নেতাদের কাছে সাহায্য চেয়েও পাইনি।
সুযোগ পেয়ে একে একে অন্য কর্মীরাও মিঠুন চক্রবর্তী-সুকান্ত মজুমদারদের সামনে ক্ষোভের কথা উগরে দেন। সবার অভিযোগ শোনার পর মিঠুন চক্রবর্তী বলেন, "দলের উপর ভরসা রাখুন, আপনাদের সবার সমস্যার সমাধান করব।" পাশাপাশি তিনি বলেন, "তৃণমূল রাজ্যজুড়ে সন্ত্রাস করছে, আসলে ওদের দেওয়ার কিছু নেই। তাই সন্ত্রাস করে মানুষের মুখ বন্ধ করে রাখতে চাইছে। তবে বেশিদিন এসব চলবে না। রাজ্যে বিজেপির সরকার হবে, তক দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ে উঠবে।"