বিজেপি কি পারবে তৃণমূলের বিজয়রথ আটকাতে, কলকাতায় কোন ওয়ার্ডে এগিয়ে কে
একুশের নির্বাচন পর্বের পর পরে কলকাতায় বসতে চলেছে ভোটের আসর। এবার ছেট লালবাড়ি দখলের লড়াই। লড়াই সেই তৃণমূল বনাম বিজেপির মধ্যেই।
একুশের নির্বাচন পর্বের পর পরে কলকাতায় বসতে চলেছে ভোটের আসর। এবার ছেট লালবাড়ি দখলের লড়াই। লড়াই সেই তৃণমূল বনাম বিজেপির মধ্যেই। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা তেমনটাই মনে করছেন। কিন্তু বিজেপিকে পারবে একুশের ভোটে শোচনীয় হারের পর কলকাতা পুরভোটে তৃণমূলের প্রবলতর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে। প্রশ্ন কিন্তু রয়েই যায়।
বিজেপি কি কোনও জাদু দেখাতে পারবে?
রাজনৈতিক মহলে প্রাক কলকাতা পুরভোট-পর্বে এ প্রশ্ন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে যে এবার কতখানি দাঁত ফোটাতে পারবে বিজেপি? কেননা একুশের নির্বাচনে বিজেপি শূন্যে নেমে এসেছিল। সেখানে মাত্র সাত মাসে বিজেপি কি কোনও জাদু দেখাতে পারবে? পারবে তৃণমূলকে কঠিন লড়াইয়ের সামনে দাঁড় করাতে?
কলকাতা পুরভোটে নিশ্চিত জয়ের দিকে এগোচ্ছে তৃণমূল?
একুশের কুরুক্ষেত্রে বিজেপি কলকাতার একটি বিধানসভা আসনও জিততে পারেনি। সমস্ত আসনেই তৃণমূল দখল করেছে পর্যাপ্ত প্রাধান্য নিয়ে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহল মনে করছে না, বিজেপি এর মধ্যে পুরসভা নির্বাচনে আহামরি ফল করে তাক লাগিয়ে দিতে পারবে। তৃণমূল কংগ্রেস এবারও কলকাতা পুরসভা নির্বাচনে নিশ্চিত জয়ের দিকেই এগোচ্ছে বলে তাঁদের দাবি।
২০১৫ সালের কলকাতা পুরসভা নির্বাচনে কে কত
২০১৫ সালের কলকাতা পুরসভা নির্বাচনেও তৃণমূল প্রাধান্য নিয়ে জয়যুক্ত হয়েছিল। কলকাতা পুরসভার ১৪৪ ওয়ার্ডের মধ্যে সেবার তৃণমূল পেয়েছিল ১১৪টি আসন। বামেরা পেয়েছিল ১৫টি আসন। কংগ্রেসের দখলে গিয়েছিল মাত্র পাঁচটি আসন। আর বিজেপি সাতটি ওয়ার্ডে জয় পেয়েছিল সেবার।
একুশের ফলে কতটা প্রভাব ফেলতে পারে বিজেপি
২০১৪-য় নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে দিল্লিতে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর হাওয়া উঠতে শুরু করেছিল সবে। তারপর বিজেপি বাংলায় শক্তি বাড়িয়ে তৃণমূলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী রূপে অবতীর্ণ হয়েছে। কিন্তু কলকাতায় তেমনভাবে নিজেদের ভিত তৈরি করতে পারেনি আজও। তার ফলে একুশের ফলেও ততটা প্রভাব ফেলতে পারেনি বিজেপি।
একুশের বিধানসভা ভোটের নিরিখে কলকাতার ১৪৪ ওয়ার্ড
একুশের বিধানসভা ভোটের পরিসংখ্যান বলছে, ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৩২টিতেই এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল। বিজেপি এগিয়েছিল ১১টিতে। আর কংগ্রেস এগিয়ে ছিল মাত্র একটি ওয়ার্ডে। বামেরা কোনও ওয়ার্ডে এগিয়ে ছিল না। তৃণমূল পিছিয়ে ছিল ভবানীপুরের ৭০ ও ৭৪ নম্বর ওয়ার্ড, রাসবিহারীর ৮৭ নম্বর ওয়ার্ড, জোড়াসাঁকোর ২২, ২৩, ২৫, ২৭ ও ৪২ নম্বর ওয়ার্ড, শ্যামপুকুরের ২১ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ড, মানিকতলার ৩১ নম্বর ওয়ার্ড এবং চৌরঙ্গীর ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডে।
ভবানীপুর উপনির্বাচনের পর সমীকরণ কলকাতার
ভবানীপুর উপনির্বাচনে দেখা গিয়েছে যে দুটি ওয়ার্ডে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল, সেই ওয়ার্ড দুটিতেও তারা এগিয়ে গিয়েছে বিজেপিকে পিছনে ফেলে। অর্থাৎ তৃণমূলের অগ্রগমন এই মুহূর্তে ১৩৪টি ওয়ার্ডে। বিজেপি ১১ ও কংগ্রেস ১টি ওয়ার্ডে এগিয়ে থাকছে। সাম্প্রতিক জনমত সমীক্ষা দেখাচ্ছে ওই ১৩৪ সংখ্যাকেও ছাপিয়ে যাবে তৃণমূল।
বিজেপি যেখানে এগিয়ে, নৈতিক জয়ই লক্ষ্য
বিজেপির ভরসা একটা পুরভোট হয় লোকাল ইস্যুতে। সেখানে স্থানীয় সমস্যাই বড় আকার ধারণ করে। ফলে অনেক ওয়ার্ডেই তারা লড়াইয়ে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কতগুলি আসন বিজেপি ধরে রাখতে পারে সেটা দেখার। বিজেপি ২০১৫-য় জয়ী হয়েছিল ৭, ২২, ২৩, ৪২, ৭০, ৭৪ ও ৮৭। এই ওয়ার্ডগুলি বিজেপি দখলে রাখতে পারে কি না, সেটাই এখন দেখার। আবার বিজেপি যদি আসন বাড়াতে পারে, সেটাই হবে তাদের নৈতিক জয়।