মুকুলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ! এবার বিজেপি ছাড়তে চলেছেন দলের ডাকসাইটে নেত্রী
মুকুল রায়কে ব্যবহার করে তাই তৃণমূল ভাঙার যে পরিকল্পনা করেছিল বিজেপি, তা এখন প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে। এখন মুকুল রায়ই বিজেপির বড় ভাঙনের কারণ হয়ে উঠেছেন।
মুকুল রায় দলে আসার পর তলে তলে দুটি ভাগ হয়ে গিয়েছে বিজেপি। একটা বড় অংশ যে মুকুলকে দলে নেওয়ার বিপক্ষে ছিলেন, তা প্রকট হয়ে উঠছে ক্রমশ। মুকুল রায়কে ব্যবহার করে তাই তৃণমূল ভাঙার যে পরিকল্পনা করেছিল বিজেপি, তা এখন প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে। এখন মুকুল রায়ই বিজেপির বড় ভাঙনের কারণ হয়ে উঠেছেন। তারই প্রতিফলন দেখা গেল মুকুলের খাসতালুকে।
[আরও পড়ুন:স্বামীজির জন্মদিন পালনের জন্য পতাকার কী প্রয়োজন, বিজেপিকে সু-'পরামর্শ' দিলেন পার্থ]
মুকুল রায় বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে ইতিমধ্যেই বিজেপির সমস্ত পদ ত্যাগ করেছেন দলের দীর্ঘদিনের নেত্রী আলোরানি সরকার। বাকি রয়েছে শুধু সদস্যপদটুকু। শীঘ্রই তিনি সেই সদস্যপদও ত্যাগ করবেন। তাঁর কথায়, 'মুকুল রায় যে দলে রয়েছেন, সেই দলে থেকে একই মঞ্চ শেয়ার করার মানসিকতা নেই। তাই বিজেপি ত্যাগের সিদ্ধান্ত। দল নয়, আমার কাছে আদর্শই আগে, বীজপুরবাসীর কাছে আমি দায়বদ্ধ। তাঁদের জন্যই আমার এই লড়াই।'
এখনও পর্যন্ত তৃণমূল ভাঙিয়ে একজন হেভিওয়েটকেও বিজেপিতে আনতে পারেননি মুকুল রায়। আনিসুর রহমানের মতো এক-আধজনকে আনলেও, তাঁরা দলে আসার পরই এমন অভিযোগে লিপ্ত হয়েছেন যে, তাতে পার্টির ভাবমূর্তি কলুষিত হয়েছে। বরং মুকুল রায় আসার পর দীপ্তাংশু চৌধুরীর মতো বড়মাপের নেতা দলত্যাগ করে তৃণমূলে নাম লিখিয়েছেন। এবার দীপ্তাংশুবাবু পথ অনুসরণ করে বিজেপি ত্যাগের সিদ্ধান্ত নিলেন আলোদেবী।
[আরও পড়ুন:এ কেমন সংকল্প, ধিক্কারের ভাষা নেই! বিজেপিকে খোঁচা তৃণমূল নেতৃত্বের]
তিনি দীর্ঘদিনের বিজেপি নেত্রী। বীজপুরের তৃণমূল বিধায়ক মুকু-পুত্র শুভ্রাংশুর বিরুদ্ধে তিনি বিজেপির প্রার্থীও হয়েছিলেন। নবদ্বীপ বিজেপির দায়িত্ব ছিলেন তিনি। তিনি বীজপুরের মানুষকে সুশাসন দেওয়ার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। দীর্ঘদিন তিনি মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনের মুখ ছিলেন। এখন তিনি বিবেকহীনতায় ভুগছেন। কারণ মুকুল রায় তাঁদের দলে। তিনি মুকুল রায়কে নারদ-সারদাকাণ্ডে অভিযুক্ত বলেই মনে করেন। এমন একজনের সঙ্গে তিনি পার্টিতে থাকতে নারাজ।
তিনি নিজের কাছেই প্রশ্ন রাখছেন, 'আমি আমজনতার কাছে কী জবাবদিহি করব? এতদিন মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছি, এখন তাঁর পাশে বসে কী করে বলব, তিনি সাধুপুরুষ!' সেই বিবেকের দংশন থেকেই দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছেন আলোরানি সরকার। তিনি বৃহস্পতিবার ন্যাশনালিস্ট তৃণমূল কংগ্রেসের মঞ্চেও এসেছিলেন। মুকুল রায়ের ইঙ্গিতেই গড়া এই দলের মঞ্চে আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'এই দলের সঙ্গেও মুকুল রায় বেইমানি করেছেন। নতুন দল গড়ে তিনি কিছু না বলে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন শুধু নিজেকে বাঁচাতে।'
[আরও পড়ুন:ব্যর্থ মমতার প্রশাসন! সঙ্কল্প-যাত্রা স্থগিত করে রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি দিলীপের]
বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর শুধুমাত্র কয়েকজন ছোটমাপের নেতা ও কর্মীকে তৃণমূল থেকে ভাঙাতে পেরেছেন। বিজেপি ভেবেছিল, তৃণমূলের একদা সেকেন্ড ইন কম্যান্ডকে দলে নিলে তৃণমূল ভেঙে বিজেপিতে আসার হিড়িক পড়ে যাবে। তার বিন্দুবিসর্গও ঘটেনি। উল্টে বিজেপিতেই বিভাজন স্পষ্ট হচ্ছে। একাধিক বড় নেতা দল ছাড়ছেন। এই ধারা চলতে থাকবে। বিজেপির আরও ক্ষতি হবে বলেই আশঙ্কা প্রকাশ করেন আলোদেবী।
এদিন নোয়াপাড়া উপনির্বাচনে মঞ্জু বসুকে প্রার্থী ঘোষণা নিয়েও বিজেপির বালখিল্যতা করেছে বলে মনে করেন আলোদেবী। এতে শুধু মুকুল রায়ের মুখে চুন-কালি পড়েনি, মুখ পুড়েছে বিজেপিরও। মুকুল রায়ের উপর ভরসা করলে আরও বড় ক্ষতি হবে বিজেপির, দলের সমস্ত পদত্যাগ করে এই কথা জানান বীজপুরের বিডেপি নেত্রী আলোরানি সরকার। এদিন মুকুল-পুত্র শুভ্রাংশুকে নিয়েও মত প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, 'তলে তলে বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে তাঁর। তিনি ঘরে বসে বিজেপি করছেন।' তাঁর মতে, 'শুভ্রাংশু রায় এখন কুমড়ো তৃণমূলের ভূমিকা পালন করছেন।'