'সেকেন্ড ম্যান করে রেখেছে, সেনাপতি করেনি', দলের অস্বস্তি বাড়িয়ে হঠাৎ 'বেসুরো' তৃণমূলী দুলাল
'সেকেন্ড ম্যান করে রেখেছে, সেনাপতি করেনি', দলের অস্বস্তি বাড়িয়ে হঠাৎ 'বেসুরো' তৃণমূলী দুলাল
সামনেই বিধানসভা নির্বাচন। আর সেই নির্বাচনের আগে ক্রমশ চাপ বাড়ছে শাসকদল তৃণমূলের। কার্যত প্রত্যেকদিনই একের পর তৃণমূল বিধায়ক, নেতা বেসুরো গাইছেন। তেমন সোমবার হঠাৎ করেই দল ছাড়েন দীপক হালদার। সেই অস্বস্তি কাটতে না কাটতেই ফের বসুরো আরও এক তৃণমূল নেতা। এবার দলের বিরুদ্ধেই প্রকাশ্যে ক্ষোভ উগরে দিলেন মালদা জেলা তৃণমূলের জেলা কোঅর্ডিনেটর দুলাল সরকার। তাঁর অভিযোগ, দল তাঁকে জেলায় সেকেন্ড ম্যান করে রেখেছে, সেনাপতি করেনি। দল চায়নি বলেই তাঁকে ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান করা হয়নি বলে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন দুলাল।
কি বলছেন জেলা নেতৃত্ব?
তাঁর এই মন্তব্যে মালদহ জেলাজুড়ে রীতিমত বিতর্ক তৈরি করেছে। তাহলে কি এবার তিনিও বিজেপির পথে? মালদহ জেলাজুড়ে এখন একটাই প্রশ্ন! যদিও সেই বিষয়ে কিছুই পরিষ্কার করে এখনও জানাননি দুলালবাবু। এমনকি বিজেপি জেলা নেতৃত্বও এই বিষয়ে স্পিকটি নট! তবে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, প্রত্যেকদিনই উইকেট পড়ছে তৃণমূলের। তাদের পায়ের তলার মাটি হালকা হচ্ছে। আগামিদিনে আরও চমক অপেক্ষা করছে বলে দাবি বিজেপি নেতৃত্বের। যদিও দুলালবাবুর মন্তব্য নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। এমনকি, কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরিও দুলাল সরকারের মন্তব্য নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি জানিয়েছেন, যা বলার রাজ্য নেতৃত্ব বলবে। বিষয়টি ইতিমধ্যে সুব্রত বক্সিকে জানানো হয়েছে বলে দাবি জেলা নেতৃত্বের। তিনিই এই বিষয়ে বিস্তারিত বলবেন বলে জানিয়েছেন কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরি।
ঠিক কি মন্তব্য করেছেন দুলাল সরকার?
মালদা জেলা তৃণমূলের জেলা কোঅর্ডিনেটর দুলাল সরকারের অভিযোগ, দল তাঁকে জেলায় সেকেন্ড ম্যান করে রেখেছে, সেনাপতি করেনি। ইংরেজবাজার পুরসভার প্রশাসক মণ্ডলীর সদস্য দুলালের আরও দাবি, তৃণমূলের দুঃসময়ে তিনি ও তাঁর পরিবার পার্টি ছাড়েননি, অথচ দল তাঁকে প্রাপ্য মর্যাদা দিচ্ছে না বলে দাবি জেলা তৃণমূলের কোঅর্ডিনেটরের। তাঁর এই মন্তব্য ঘিরে জোর জল্পনা।
মালদহের রাজনীতিতে শুভেন্দুর প্রভাব
২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মালদহে ভরাডুবির পরেই তৃণমূলের জেলার পর্যবেক্ষক হন শুভেন্দু। কার্যত শুভেন্দুর নেতৃত্বেই কংগ্রেসের শক্তঘাটি হিসাবে পরিচিত ইংরেজবাজার ও পুরাতন মালদহ পুরসভার দখল নেয় তৃণমূল। বিধানসভায় ভরাডুবি হলেও পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল সাফল্য পায় জেলায়। তৃণমূলের একাংশের দাবি, শুভেন্দু জেলার পর্যবেক্ষক থাকার সময় প্রতিটি বিধানসভায় জেলার দ্বিতীয় এবং তৃতীয় সারির নেতাদের পর্যবেক্ষক করে বসিয়েছিলেন। সেই পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে ফোনে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন শুভেন্দু। এমনকি, কংগ্রেসের ঘরে ঢুকে মৌসমকে ভাঙিয়ে আনেন এই শুভেন্দুই।
রাজনৈতিকমহলের ব্যাখ্যা, মালদহের রাজনীতিতে যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে শুভেন্দুর। একেবারে তৃণমূল স্তরে গিয়ে সংগঠনকে মজবুত করার কাজ চালিয়ে গিয়েছেন প্রাক্তন এই তৃণমূল নেতা। ফলে তাঁর একটা অঙ্গুলি হেলনেই অনেক কিছু ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েই গিয়েছে শাসকদলে। তাই শুভেন্দুর দলবদলের পরেই জরুরি বৈঠক ডাকেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও শুভেন্দুর চলে যাওয়ার পর তৃণমূলের জেলা কোঅর্ডিনেটর দুলাল সরকারের মন্তব্য ছিল, শুভেন্দুর চলে যাওয়াতে জেলায় কোনও প্রভাব পড়বে না। নেতা- কর্মীরা সবাই তাঁদের সঙ্গেই রয়েছে বলে দাবি করে ছিলেন তিনি। ফলে হঠাৎ করে তাঁর বেসুরো হওয়াতে বিভিন্ন আশঙ্কার কালো মেঘ তৈরি হয়েছে উত্তরের রাজনীতিতে।
রদবদলেই কি ক্ষোভ দুলালের?
মালদহের জেলা থেকে শুভেন্দু অধিকারীর প্রভাব মেটাতে জেলা নেতৃত্বে ব্যাপক রদবদল হয়। মোয়াজ্জেম হোসেনের পরবর্তে তৃণমূল কংগ্রেসের জেলার চেয়ারম্যান হন প্রাক্তণ মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী। অন্যদিকে, নতুন করে কো-অর্ডিনেটর করা হয় সাবিনা ইয়াসমিন ও হেমন্ত শর্মাকে। কিন্তু সেভাবে নাম ছিল দুলাল সরকারের! সেটাই কি আসল ক্ষোভের কারন? প্রশ্ন রাজনৈতিকমহলের।
বাংলায় বিজেপি কাদের নেতৃত্বে সরকার গড়তে চাইছে! মুকুল রায় দিয়ে রাখলেন আভাস, তুঙ্গে জল্পনা