দেড় বছর বেতন নেই, বাড়ির জিনিস বেচছেন কিংফিশারের কর্মীরা
অথচ এর আগে কিংফিশার এয়ারলাইন্সে কাজ করা মানেই ছিল অর্থের প্রাচুর্য। ভালো বেতন, ভাতা ইত্যাদির কারণে অন্যান্য এয়ারলাইন্সের কর্মীরা কিংফিশারের কর্মীদের ঈর্ষাকাতর দৃষ্টিতে দেখতেন। খারাপ দশা শুরু হয় ২০১২ সালের মাঝামাঝি থেকে। এই সময় থেকেই বিজয় মাল্য পরিচালিত কিংফিশার এয়ারলাইন্সের শনির দশা শুরু হয়। আটকে যায় বেতন। ২০১৩ সালের এপ্রিলে দেওয়া হয় ২০১২ সালের জুলাই মাসের বেতন! তাও কর্মীদের বিক্ষোভের ভয়ে। তার পর থেকে বেতন বাবদ কানাকড়িও পাননি কর্মীরা।
কলকাতার বাসিন্দা তথা কিংফিশার এয়ারলাইন্সের কর্মী সুজিত ঘোষ জানালেন তাঁর বারোমাস্যার কথা। বললেন, "বাড়ির আসবাব যা যা বিক্রি করার করে দিয়েছি। সঞ্চয় যা কিছু ছিল, শেষ। কিছু সোনাদানা ছিল, তাও বেচে দিয়েছি। আমার মেয়ে কলেজে পড়ছে। টিউশন করে নিজের পড়াশুনোর টাকা জোগাচ্ছে। বাবা হয়ে দেখতে খারাপ লাগে। আমার এখন ৫৩ বছর বয়স। এই বয়সে কে চাকরি দেবে? আমি আর আমার স্ত্রীর মনে করছি, আত্মহত্যা করাটাই এখন আমাদের কাছে একমাত্র মুক্তির পথ।" সুজিতবাবু জানালেন, ভয়ে বাড়ি থেকে বেরোতে পারছেন না তিনি। মুদিখানা, দুধওয়ালা সবার টাকা বাকি। পাছে রাস্তায় কেউ দেখতে পেলে মারধর করে!
দিল্লির নীলমণি সিংয়েরও একই অবস্থা। ২৭ বছর বয়স। ছোটো বোনের পড়াশুনোর খরচের ভার তাঁর কাঁধে। অথচ এমসিএ পাঠরতা বোনের কলেজের ফি দিতে পারছেন না। কিছু আসবাব বিক্রি করে দিয়েছেন। কিন্তু এভাবে কতদিন চলবে, তা বুঝতে পারছেন না তিনি। অফিসে বেতনের ব্যাপারে খোঁজখবর করতে গেলে দুর্ব্যবহার জুটছে বলে অভিযোগ।
কিংফিশার এয়ারলাইন্সের দাবি, মামলা চলায় আদালতের নির্দেশ ছাড়া তাঁরা বেতন দিতে পারবেন না। কবে কত বেতন দেওয়া হবে, তা আদালতই ঠিক করবে বলে জানা গিয়েছে। বেতন দেওয়ার ব্যাপারে আদালতের অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছে বলে দাবি করেছে তারা।
কর্মীরা বেতন না পেলেও বিজয় মাল্যর কিন্তু ঠাটবাটের অভাব নেই। কয়েক কোটি টাকা তিনি ঢেলেছেন আইপিএলে। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরে মনপসন্দ খেলোয়াড়দের নিয়ে আসতে প্রচুর টাকা খরচ করেছেন। কর্মীদের একাংশের মতে, আদালতের নির্দেশের বিষয়টি অজুহাত মাত্র। আসলে বকেয়া বেতন দেওয়ার কোনও সদিচ্ছা নেই কর্তৃপক্ষের।