স্বপ্নে ছিল ক্রিকেট, কিন্তু দৌড়েই উঠল ঝড়! একনজরে বিশ্বের দ্রুততম মানুষ উসেইন বোল্টের বিশ্ব রেকর্ড
মাটিতে পা রাখলে ওঠে ঝড়, কম্পন ধরে ভূ-পৃষ্ঠে। জল্পনায় শোনা যায় অনেকেই বলেন দৌড়ে পশুরাজকেও হার মানতে সক্ষম বিশ্বের এই দ্রুততম মানুষ। কথা হচ্ছে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ দৌড়বিদ উসেইন বোল্টকে নিয়ে। এদিকে এই বোল্টই একদা হতে চেয়েছিলেন ক্রিকেটার। ক্রিকেটই ছিল তার ধ্যান-জ্ঞান -স্বপ্ন। সুযোগ পেলেই নেমে পড়তেন বাইশ গজের যুদ্ধে। অথচ তিনিই আবার ১০০ মিটার দৌড় ৯.৫৮ সেকেন্ডে এবং ২০০ মিটার দৌড় ১৯.১৯ সেকেন্ডে শেষ করেছেন। এই অনন্য নজির এখনও পর্যন্ত একমাত্র রয়েছে তাঁর ঝুলিতেই।
দারিদ্রকে সঙ্গী করেই লড়েছেন জীবনযুদ্ধে
এদিকে ইতিহাসের পাতায় বোল্টই একমাত্র অ্যাথলিট যিনি টানা ৩ অলিম্পিকে (২০০৮, ২০১২ এবং ২০১৬) ১০০ এবং ২০০ মিটার স্প্রিন্টে স্বর্ণপদক জিতেছেন। যদিও বোল্টের এই উত্থানের পড়তে পড়তে জড়িয়ে রয়েছে দারিদ্রের ছোঁয়া। বাবা ছিলেন মুদি দোকানদার। বাবার সাথে মা-ও দোকান চালাতে সাহায্য করতেন তাকে। আর সংসারের ঘানি টানতে চাল-ডাল বিক্রি করতে বাবা-মাকে সাহায্য করতো ছোট্ট বোল্টও।
জামাইকাতে জন্ম বিশ্বের এই দ্রুততম মানবের
১৯৮৬ সালের ২১ অগাস্ট জামাইকার ছোট্ট শহর ট্রিলনি পারিশে জন্ম উসেইন বোল্টের। পুরো নাম উসেইন সেন্ট লিও বোল্ট।বাবা ওয়েলেসলি বোল্ট, মা জেনিফার বোল্ট, ভাই সাদেকি ও বোন শেরিনকে নিয়ে ছোট্ট সংসার ছিল তাদের। নিদারুণ দারিদ্র ও অভাবের সঙ্গে ঝুঁজেই ছোটবেলার পড়াশোনার পাঠ শেষ করেন বোল্ট। তবে স্কুল জীবন থেকেই দেখতেন ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন। স্বপ্ন দেখতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়েই একদিন নামবেন বাইশ গজের লড়াইয়ে।
স্বপ্ন ছিল ক্রিকেটার হওয়ার
এমনকী জামাইকার অনেক মাঠেই ব্যাট-প্যাড পরে ক্রিকেট খেলতে দেখা গেছে বিশ্বের এই দ্রুততম মানবকে। এমনকী দৌড়বিদের জীবন থেকে অবসর নেওয়ার পর ফের ক্রিকেট খেলা শুরু করারও সম্ভাবনার কথাও শোনা গিয়েছিল।অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া টি-২০ লীগ 'বিগ ব্যাশে' তিনি খেলতে পারেন বলেও গুঞ্জন তৈরি হয়েছিল। শেন ওয়ার্নের নেতৃত্বাধীন দল মেলবোর্ন স্টার্সের সঙ্গে এই বিষয়ে একপ্রস্থ আলোচনাও হয়েছিল বলে শোনা যায়।
গড়েছেন পাঁচবারের বিশ্বরেকর্ড
এদিকে এই ক্রিকেট পাগল লোকটিই গড়েছেন পাঁচবারের বিশ্বরেকর্ড। যদিও শুরুটা হয়েছিল সেই প্রাইমারি স্কুলেই। স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় প্রথমবার স্প্রিন্টে অংশ নিয়েই বাজিমাত করেন বোল্ট। ১০০ মিটারে স্কুলের সেরা দৌড়বিদ হন তিনি। শোনা যায় সেই সময় বোল্ট চোখে পড়েন প্রাক্তন এক অলিম্পিকের স্প্রিন্টারের। তিনিই নাকি প্রথম বোল্টকে পরামর্শ দেন অ্যাথলেটিক্সে মনোযোগ দেওয়ার জন্য।
অধ্যাবসায়, পরিশ্রম ও অদম্য জেদেই বাজিমাত
যদিও তখন এত সহজে সাফল্যের দরজায় পৌঁছাতে পারেনি বোল্ট। হাঙ্গেরিতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব যুব চ্যাম্পিয়নশিপে ২০০ মিটারে অংশ নিলেও ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হন। তবে ২০০১ সালে জ্যামাইকার হয়ে ক্যারিবীয় অঞ্চলের ইভেন্টে প্রথম অংশ নেন তিনি। প্রথমবার অংশ নিয়েই ২০০ ও ৪০০ মিটারে জিতে নেন রুপা। পরবর্তীতে অধ্যাবসায়, পরিশ্রম ও অদম্য জেদের কারণেই তাঁকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একাধিক বার মাথায় উঠেছে নতুন নতুন বিশ্বজয়ের পালক।
একনজরে বোল্টের বিশ্ব রেকর্ড
বোল্টের একাধিক বিশ্ব রেকর্ডের মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য তাঁর তিনবার ২০০ মিটার স্প্রিন্ট জয়। এর আগে দু-বার করে এই রেকর্ড পকেটস্থ করতে পেরেছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাইকেল জনসন ও ক্যালভিন স্মিথ। একইসাথে পর পর ১০০ ও ২০০ মিটারের 'ডাবল' জয়েরও একমাত্র কীর্তি বোল্টের। রয়েছে ৮টি স্বর্ণ জয়ের বিরল রেকর্ড। এমনকী বোল্ট সর্বমোট পাঁচ বার বর্ষসেরা অ্যাথলেট (পুরুষ) হিসেবে নির্বাচিতও হয়েছেন।