চাষের ক্ষেত থেকে এশিয়ার আসরে সোনা জয়, এবার কোন লক্ষ্যে স্বপ্ন বুনছেন স্বপ্না
এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ মিটে হেপ্টাথেলনে সোনা জিতেছেন স্বপ্না বর্মন। স্বপ্ন দেখছেন, স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপের টিকিটও মিলেছে, কী ভাবছেন স্বপ্না ও তাঁর কোচ।
ফাইট কোনি ফাইট আজও আছে, আছেন ক্ষিত দাও, তবে চরিত্রের নাম বদলে গেছে। বাংলার ক্রীড়াক্ষেত্রে লড়াই করে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার গল্পগুলো একই হয়। যখন সাফল্যের রঙ পেয়ে তা সত্যি হয় তখনই তা আসে সংবাদ শিরোনামে।[আরও পড়ুন:এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে সোনাজয়ী বাংলার স্বপ্নার হাত ধরে অনন্য নজির ভারতের]
বছর তেইশের স্বপ্না বর্মন এখন সেই সাফল্যের স্বাদে মজে। এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে হেপ্টাথেলনে সোনা জিতে স্বপ্না এখন স্বপ্নে বিভোর। তবে 'ক্ষিত দা'সুভাষ সরকার বাস্তবের মাটিতে থাকছেন এখনও। বড় সার্কিটে লড়াই করতে গেলে দক্ষতার পাশাপাশি মানসিক শক্তিটাকেও বাড়াতে হয়। সেই শক্তিটা প্রতি মুহূর্তে নিজের ছাত্রীর মধ্যে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন স্বপন বাবু। অনেক লড়াই।
বনমালি রায় ও বাসনা রায়ের সংসার থেকে উঠে এসেছেন স্বপ্না। স্টেডিয়ামের সিন্থেটিক ট্র্যাকে দৌড়ের আগেই আর্থিক অনটনের সঙ্গে সঙ্গে লড়াই করতে করতে নিজেক পরিণত করেছেন স্বপ্না। শক্ত করে নিয়েছেন নিজের পা দুটো। এ দুটোই তো ভরসা। কৃষিজীবী পরিবার থেকে উত্থান। মাটির মেয়ে মাটির কাছাকাছি গিয়ে নিজেকে খুঁজে পান। এই সোনার মেডেল তাঁর কাছে বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপের টিকিট তার থেকেও বড় এটাই হয়ত একটা চাকরির দরজা। যাতে পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে পারবেন তিনি।
এখনই ঘরে ফিরছেন না জলপাইগুড়ির সোনার মেয়ে। ভুবনেশ্বর থেকে সরাসরি গুন্টুরে যেতে হবে সেখানে আসর বসেছে আন্তঃরাজ্য প্রতিযোগিতা। ১৫থেকে ১৭ সেখানে বসবে প্রতিযোগিতার আসর। তারপর ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপের আসর। তবে কোচ সুভাষ সরকার ছাত্রীকে বুঝিয়ে দিয়েছেন সেখানে বিশ্বসেরাদের থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় যেন করে আসেন স্বপ্না। এই মুহূর্তে স্বপ্নার ঝোলায় ৫৯৪২ পয়েন্ট। বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে যাঁরা আসবেন তাঁরা ৬২০০-৬৩০০ পয়েন্ট তুলে আনা অ্যাথলিট। সুতরাং তাদের সামনে নিজেক মানসিক জোরটা স্থির রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
একটা লক্ষ্য সামনে না থাকলে সঠিকভাবে এগোন যায় না মানেন স্বপ্নার কোচ সুভাষ বাবু। সাইয়ের ক্যাম্পাসে তিলে তিলে তিলোত্তমা বানানোর কাজে তিনি সদাব্যস্ত। ছাত্রীর সামনে লক্ষ্য তিনি ঝুলিয়ে দিয়েছেন। এভাবেই তো তিনি স্বপ্নাকে ট্র্যাকে ফেরত এনেছিলেন। ২০১৫-১৬ চোটের কারণে সার্কিটের বাইরে চলে গিয়েছিলেন স্বপ্না।
হেপ্টাথেলনে ফেরার আশাও ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু কোচ তাঁকে লক্ষ্য ভুলতে দেননি। তাই মার্চে যখন চোট সারিয়ে ফিরলেন তখনই পাখির চোখ ঠিক করে নিয়েছিলেন। প্রথম লক্ষ্য পূরণ। এবারের লক্ষ্য আরও বড়। ২০২০-র টোকিও অলিম্পিক্স। পরিশ্রম ফল দেয় এটা এখন বুঝে গেছেন স্বপ্না। পেয়ে গেছেন রক্তের স্বাদ। সামনে আরও বড় শিকারের আশা। তৈরি হচ্ছেন ২১ বছরের এই তরুণ অ্যাথলিট। হেপ্টাথেলেন অলিম্পিক্সের মঞ্চে নিজেক নিয়ে যাওয়ার লড়াই শুরু আজ থেকেই।