কাতারে ফাঁকা পড়ে ওদের আসন, বিশ্বকাপ এবারে পান্নালাল চৈতালিহীন
কাতারে ফাঁকা পড়ে ওদের আসন, বিশ্বকাপ এবারে পান্নালাল চৈতালিহীন
১৯৮২ থেকে ২০১৮। পর পর দশটি বিশ্বকাপে মাঠে থেকে খেলা দেখেছেন তাঁরা। সামনে ফুটবল বিশ্বকাপ কিন্তু কলকাতার এই দম্পতির আর এই বছর মাঠে থাকা হল না। ২০১৯ সালে পান্না লাল বাবুর মৃত্যুর কারণে একা হয়ে গেছেন চৈতালি দেবী। গত ৩৬ বছরে ১০টি বিশ্বকাপ দেখা এই মানুষ এই বছরে আলাদা হয়ে গিয়েছেন। একজন ছেড়েছেন এই পারের মায়া। অপরজন চৈতালি দেবী থেকে গিয়েছেন একা।
আর
পাঁচজন
বাঙালির
মতো
মাছ
খেতে
খুব
ভালোবাসতেন
তাঁরা।
কিন্তু
সে
মাছ
ছুঁয়েও
দেখতেন
না।
একটা
পয়সাও
বেশি
খরচা
করতেন
না।
একটা
আহ্লাদও
তাঁরা
মেটাতেন
না।অসহনীয়
দারিদ্র
নয়
ফুটবল।
বাঙালি
মধ্যবিত্ত
ঘরের
অত
টাকা
কোথায়
যে
বিশ্বকাপ
দেখতে
বিদেশে
যাবেন?
তাই
আগলে
রাখতেন
মানিব্যাগটা।
প্রথমজন
পান্নালাল
দ্বিতীয়জনের
চৈতালি
দেবী।
১৯৮২ সালে তাঁদের প্রথম বিশ্বকাপ দেখা। না, সশরীরে নয়, স্বচক্ষে। টিভিতে। আর যেই না দেখা, অমনি তাঁরা দুজনেই বুঝে যান একটা চতুষ্কোণ পর্দা পারবে না তাঁদের আবেগের প্রতি সঠিক বিচার করতে। তাই সশরীরে হাজির হতেন তাঁরা। আর তারপর থেকেই শুরু হয়েছিল বিশ্বকাপ ফান্ড জমানোর কাজ।
ঠিক
যেটুকু
খরচা
না
করলে
বেঁচে
থাকা
যায়
না,
তার
বেশি
আর
একটাকাও
খরচা
করেন
না
১৯৮২
সাল
থেকেই।
সময়
গড়ায়
এভাবেই।
প্রতিটা
ফুটবল
বিশ্বকাপের
তাঁরা
একনিষ্ঠ
ফুটবল-নাগরিক।
সেখানেও
কী
করে
সবচেয়ে
কম
খরচে
থাকা-খাওয়া
করা
যায়,
কী
করে
সবচেয়ে
বেশি
কষ্টসহিষ্ণু
হওয়া
যায়,
এই
বার্ধক্যেও
প্রতি
চার
বছর
অন্তর
নতুন
করে
তার
পাঠ
নিতেন
এই
বিস্ময়
মানব-মানবী।
কিন্তু
কাতার
বিশ্বকাপে
আর
যাওয়া
হল
না
তাঁদের।
পান্নালালবাবু
আর
যে
নেই।
তাই
চৈতালি
দেবীর
দীর্ঘশ্বাস
তো
একটা
আছে
ঠিকই।
তবে
সবচেয়ে
বেশি
আছে
ফুটবলের
প্রতি
ভালোবাসা।
১৯৮২ সালে স্পেনে হওয়া বিশ্বকাপ দিয়ে তাদের ফুটবল বিশ্বকাপ খেলা দেখা শুরু। তারপর থেকে তাদের সংসারের আয়ের কিছুকিছু অংশ সঞ্চয় করে চার বছর পরপর বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখতে যেতেন দেশ ভ্রমণ করেন।
১৯৮৬ সালে মেক্সিকো, ১৯৯০ সালে ইতালি, ১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র, ১৯৯৮ সালে ফ্রান্স, ২০০২ সালে জাপান-কোরিয়া, ২০০৬ সালে জার্মানি, ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপের সবকটিই গ্যালারিতে বসে দেখেছেন তারা। ২০১৮তেও দেখেছেন বিশ্বকাপ।
কলকাতার খিদিরপুরের এ বৃদ্ধ দম্পতিকে ফুটবলের প্রতি অফুরন্ত ভালোবাসার কারণে ভারতে ফিফা অনুর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের সময় বিশেষ সম্মান দিয়েছিল। যুব ভারতীয় স্টেডিয়ামের সব ম্যাচের টিকিট তাদের দিয়েছিল ফিফা। শুধু তাই নয়, বয়স বিবেচনায় ফিফা তাদের সঙ্গে একজন ডাক্তার রাখতে বাড়তি একটি টিকিটও দিয়েছিল।
ফুটবল প্রেমী এই দম্পতিদের দেখা ১০টি বিশ্বকাপের মধ্যে দুটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল, '১৯৮৬ সালে মারাডোনার হাতে ট্রফি দেখা এবং ২০১৪ সালে জার্মানির কাছে ব্রাজিলের ৭-১ গোলের হার। এমনটাই বলতেন তাঁরা। আজ পুরোটাই অতীত।