#MeToo-রেশ কলকাতাতেও! জেনে নিন এই তালিকায় কাদের নাম
মি-টু রেশ এবার কলকাতাতেও। সাংবাদিক দেবদূত ঘোষ ঠাকুরের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ করলেন মহিলা সাংবাদিক সাবেরি গুপ্ত। একটি ইংরেজি দৈনিকের সাংবাদিক শতদ্রু ওঝার বিরুদ্ধেও যৌন হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে।
মি-টু রেশ এবার কলকাতাতেও। সাংবাদিক দেবদূত ঘোষ ঠাকুরের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ করলেন মহিলা সাংবাদিক সাবেরি গুপ্ত। একটি ইংরেজি দৈনিকের সাংবাদিক শতদ্রু ওঝার বিরুদ্ধেও যৌন হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে। দুই ঘটনাতেই সংবাদমাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে।
প্রথম ঘটনার ক্ষেত্রে সাংবাদিক সাবেরি গুপ্ত রিপোর্টে জানিয়েছেন, কলকাতা থেকে প্রকাশিত সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে কাজ শুরু করেন তিনি। শুরু থেকেই দেবদূত ঘোষ ঠাকুর ছিলেন তাঁর বস, চিফ রিপোর্টার।
তিনি যে সময়ে ওই সংবাদমাধ্যমে যোগ দিয়েছিলেন, সেই সময় ২২-২৩ বছর বয়সী অনেক মহিলাই কাজে যোগ দিয়েছিলেন। দেবদূত ঘোষঠাকুর সংবাদমাধ্যমে সিনিয়র বলেই পরিচিত। সাবেরি গুপ্তের লেখা রিপোর্ট অনুযায়ী, শুরু থেকেই দেবদূত ঘোষঠাকুর তাঁর কাঁধে হাত রেখে কথা বলতেন। দফতের বাকি মহিলাদের সঙ্গে তিনি একই ব্যবহার করতেন বলে অভিযোগ। মহিলাদের পোশাক নিয়ে মন্তব্য করতেন। অনুজ মহিলা সহকর্মীর অন্তর্বাসে হাত দেওয়ার জন্যই এই কাজটি তিনি করতেন বলে অভিযোগ। 'কী অশ্লীল জামা পড়েছিস'-এমন কথাও তিনি বলতেন বলে অভিযোগ।
সেই সময় তাঁর মতো সদ্ময চাকরি পাওয়া মহিলা সাংবাদিকরা কোনটা যৌন নির্যাতন, তা নিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন বলে রিপোর্টে জানিয়েছেন সাবেরি গুপ্ত। একদিকে ওই সাংবাদিকের জনপ্রিয়তা, অন্যদিকে খবরের কাগজের অফিসে কীভাবে কাজ চলে, সেটা না জানা, তা নিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন তাঁরা। এটাই কি কাজের পরিবেশ সেই প্রশ্নও করেছেন তিনি?
সাবেরি তাঁর প্রতিবেদনে আরও অভিযোগ করে বলেছেন, বিয়ের পর থেকে শুরু হয় অন্যধরনের নির্যাতন। তাঁকে অফিসে হাই তুলতে দেখলেই নাকি দেবদূত অস্বস্তিকর সব প্রশ্ন করতেন বলে অভিযোগ সাবেরির। তিনি তাঁর প্রতিবেদনে লিখেছেন, দেবদূত তাঁকে হাই তুলতে দেখলেই বলতেন, 'এখন সারারাত জাগতে হচ্ছে, তারজন্য হাই তুলছেন সাবেরি।' শুধু তিনিই নন, অন্য পুরুষ ও মহিলা সাংবাদিক- সবাইকেই একই ধরনের প্রশ্ন দেবদূত করতেন বলে অভিযোগ করেছেন সাবেরি গুপ্ত। তাঁকে উদ্দেশ্য করে নানা অশ্লীল জোকস দেবদূত করতেন বলে অভিযোগ। দেবদূত নাকি এমন কথা বলতেন যে মহিলারা ভাল কর্মী নন, কেননা তাড়াতাড়ি বিয়ে করে এবং তারপরেই সন্তান সম্ভাবা হয়ে পড়ে, এমন কথাও দেবদূত ঘোষঠাকুর বলতেন বলে অভিযোগ।
তিনি ও দেবদূত ঘোষঠাকুর, দুজনেই দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা। ফলে অফিস থেকে বাড়ি ফেরার জন্য একই গাড়ি দেওয়া হত অফিস থেকে। অফিস থেকে বাড়ি ফেরার সময়কার একদিনের ঘটনা বর্ণনা করেছেন সাংবাদিক সাবেরি গুপ্ত। তিনি জানিয়েছেন রাতের অফিস কার ড্রপের গাড়িতে ফেরার সময় দেবদূত তাঁর নিতম্বে অশ্লীলভাবে হাত রাখেন। এতে আতঙ্কে গাড়ির পিছনের আসন থেকে ছিটকে বেরিয়ে এসে চালকের সঙ্গে সামনের আসনে নাকি বসে পড়েছিলেন সাবেরি। সে কথাও ফলাও করে এই প্রতিবেদনে লিখেছেন সাবেরি।
পরের দিন বার্তা সম্পাদকের কাছে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ জানান সাবেরি গুপ্ত। সেই সময় হেসে ফেলেন নিউজ এডিটর। তাঁকে (সাবেরি গুপ্ত) থামিয়ে বলেন, বিষয়টি তিনি দেখবেন।
এরপর একদিন সকালের ডিউটির কথা উল্লেখ করেছেন সাবেরি গুপ্ত। গাড়ির ব্যবস্থা করার সময় দেবদূত ঘোষঠাকুর পিছন থেকে গিয়ে তাঁকে জড়িয়ে ধরেন। চিৎকার করে ওঠেন সাবেরি। বলেন এই আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়। তখন, দেবদূত ঘোষঠাকুর নাকি বলেন, শুধুমাত্র মজা করতেই এই কাজ তিনি করছেন। এই ঘটনা নিয়ে কেউ কিছুই বলেনি। আর সেই সময় চাকরিটা জরুরি ছিল বলে, তা হারানোর ভয়ে তিনি কিছু বলেননি।
২০১৫-তে উচ্চমাধ্যমিকের ফল বেরনোর দিন সকাল ৯ টায় তিনি কাজে যোগ দেন। সাড়ে বারোটা নাগাদ খাওয়ার জন্য তিনি ব্রেক নেন। অভিযোগ, দেবদূত ঘোষঠাকুর তাঁকে (সাবেরি গুপ্ত) পিছন থেকে গিয়ে চাটি মারেন। এই ঘটনা তিনি কোনওভাবেই মেনে নিতে পারেননি বলে জানিয়েছেন সাবেরি। তিনি চিৎকার করে ওঠেন। কেউই এর সমর্থনে এগিয়ে আসেননি। বার্তা সম্পাদককে বিষয়টি বলার পর তিনি দফতরের সিনিয়রদের জানাতে বলেন। তবে সিনিয়র সাংবাদিকের উত্তর ছিল ভয়ানক।
এরপর তিনি সেই সময়রকার এইচআর ডিপার্টমেন্টের দায়িত্বে থাকা শিউলি বিশ্বাসকে বিষয়টি জানান। সাবেরি গুপ্তের দাবি, শিউলি বিশ্বাস সে সময় জানান, ঘোষঠাকুরের বিরুদ্ধে তিনি একই অভিযোগ শুনেছেন। কয়েক ঘন্টা পরেই তিনি, তাঁকে(সাবেরি) ডেকে ওই সংবাদগোষ্টীর অন্য একটি বিভাগে বদলি করে দেন। তৎকালীন এডিটর-ইন-চিফের নির্দেশেই এই ব্যবস্থা বলে জানানো হয়েছিল এইচআর থেকে। এই ঘটনার মাস দেড়েক পরে সেই গোষ্ঠীর চাকরি তিনি ছেড়ে দেন বলে জানিয়েছেন ওই সাংবাদিক।
দ্বিতীয় ঘটনাটিতে অভিযোগ উঠেছে সাংবাদিক শতদ্রু ওঝার বিরুদ্ধে। অভিযোগের জেরে তদন্ত শুরুর কথা জানিয়েছে ওই ইংরেজি মাধ্যমের সংবাদপত্র।
অমিতা ঘোষ নামে ওই সাংবাদিক কলকাতা পুলিশের কাছে গত বুধবার অভিযোগ দায়ের করেছেন। সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, সেখানে তিনি যৌন নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন। ২০১৬ থেকে ২০১৭-র অগাস্টের মধ্যে অমিতা ঘোষ ওই সংবাদ গোষ্ঠীতে কাজ করতেন। তাকে রিপোার্ট করতে হত শতদ্রু ওঝার কাছেই। কিন্তু ওই সময়ে তাঁকে পুলিশে রিপোর্ট করা থেকে বিরত থাকতে হয়েছিল। এখন একের পর ঘটনা সামনে আসতে থাকায় তিনি বিষয়টি নিয়ে পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছেন, বলে দাবি করেছেন।
অমিতা ঘোষের অভিযোগ, প্রথম প্রথম মধ্যরাতে তাকে ফোন করে শতদ্রু ওঝা বলতেন, 'কোনও চাপ নেই তো? কোনও অসুবিধা হচ্ছে নাতো? লাইফে সব কিছু ঠিক আছে তো? তুমি আমাকে বলতে পারো'। মূলত পোশাক ও মেকআপ নিয়ে অভিযোগ করতেন শতদ্রু। দরকারে সহকর্মীর সঙ্গে সম্পর্ক শেষ করারও পরামর্শ দিয়েছিলেন। দাবি করেছেন অমিতা ঘোষ।
ভারতে মি-টু নিয়ে সম্প্রতি অভিযান শুরু হয়েছে। এই অভিযানে সিনেমা জগতের পাশাপাশি তোলপাড় সংবাদমাধ্যমও। কলকাতাও যে এই অভিযোগ থেকে মুক্ত নয়, তা এই দুই অভিযোগ থেকে পরিষ্কার।