রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও চোখের জলে বিলীন হলেন অপু, পড়ে রইল অন্তহীন শূন্যতা
রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও চোখের জলে বিলীন হলেন অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। পড়ে রইল অন্তহীন শূন্যতা ও একরাশ স্মৃতি। মৃত্যু তো অনিবার্য! আর শোক চিরস্থায়ী। সেই বেদনা বুকে নিয়েই এবার দিন কাটবে বাংলার।
রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও চোখের জলে বিলীন হলেন অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। পড়ে রইল অন্তহীন শূন্যতা ও একরাশ স্মৃতি। মৃত্যু তো অনিবার্য! আর শোক চিরস্থায়ী। সেই বেদনা বুকে নিয়েই এবার দিন কাটবে বাংলার। তাই সৌমিত্রের বিদায়বেলায় মিলেমিশে একাকার হল সব রঙ। নীতি ও মতের উর্ধ্বে উঠে প্রাধান্য পেল আবেগ, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা। এক অন্য রাতের সাক্ষী থাকল কলকাতা।
বেলভিউ থেকে যাত্রা শুরু
রবিবার দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াণের খবর ঘোষণা করে বেলভিউ ক্লিনিক। বিবর্ণ হয়ে পড়ে রঙিন কলকাতা তথা বাংলা। হাসপাতাল থেকে গল্ফগ্রিনের বাড়ির পথে এগোয় ফেলুদা-র মরদেহবাহী শকট। অগনিত মানুষ রাস্তায় ভিড় জমাতে শুরু করেন ধীরে ধীরে। তাঁদেরই বুক ভেঙে টেকনিশিয়ান স্টুডিও হয়ে রবীন্দ্র সদনে পৌঁছয় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের নিথর দেহ। অতিমারীর আতঙ্ক দূরে ঠেলে যেখানে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে কালো মাথা।
রবীন্দ্র সদনে শ্রদ্ধা
প্রায় দুই ঘণ্টা রবীন্দ্র সদনে শায়িত থাকে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের নিষ্প্রাণ দেহ। একে একে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ রাজ্যের অন্যান্য মন্ত্রীরা। অপু-কে শেষ বিদায় জানান বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, সিপিএম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী। কিংবদন্তি অভিনেতাকে ফুল-মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বাংলার চলচ্চিত্র তারকারা।
শেষ যাত্রা
সন্ধ্যায় রবীন্দ্র সদন থেকে কেওড়াতলা মহাশ্মশানের পথে অগ্রসর হয় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শবদেহবাহী শকট। ততক্ষণে রাস্তার দখল নিয়েছেন শহরবাসী। কারও হাতে ফুল, কারও হাতে মোমবাতি, ছবি, পোস্টার ও প্ল্যাকার্ড। গান, কবিতায় শিল্পীকে নিয়ে এগিয়ে চলে শোকযাত্রা। নেতৃত্বে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গী অভিনেতা তথা সাংসদ দেব, নাট্য পরিচালক তথা অভিনেতা কৌশিক সেন সহ প্রমুখরা। একটু পিছনে থেকে মিছিলে পা মেলান বাম নেতারাও। শরিক অগণিত ভক্ত। মুখে তাঁদের জয়ধ্বনি 'সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অমর রহে'।
গ্যান স্যালুটে বিদায়
মানুষের ভিড় এবং শোক ঠেলে অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শবদেহবাহী শকট পৌঁছয় কেওড়াতলা মহাশ্মশানে। এককোণায় বসে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর চোখেমুখে হতাশা ও ক্লান্তি। দূরে দাঁড়িয়ে পড়ে বাকরুদ্ধ ভিড়। অকৃত্রিম নিস্তব্ধতা ভেদ করে গর্জে ওঠে রাইফেল। গ্যান স্যালুটে প্রিয় অভিনেতাকে শেষ বিদায় জানায় রাজ্য। কিছু পরে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। কপালে ঠোঁট ঠেকিয়ে বাবাকে শেষ বিদায় জানান কন্যা পৌলমী বসু।