দেবীপক্ষের আগের রাতেই কলকাতায় অভিনেত্রীর শ্লীলতাহানি, ৪০ বার কান ধরে ওঠ-বসের হুমকি
শ্যুটিং সেরে ফেরার পথে শ্লীলতাহানির শিকার হলেন অভিনেত্রী কাঞ্চনা মৈত্র। এই ঘটনায় পুলিশ আপাতত ২ জনকে গ্রেফতার করেছে। বেহালা থানায় দায়ের হয়েছে এফআইআর।
চূড়ান্ত লজ্জার হাতে কোনওভাবে নিজেকে বাঁচালেন অভিনেত্রী কাঞ্চনা মৈত্র। দেবীপক্ষের আগের রাতে যে ধরনের ঘটনার সম্মুখিন তাঁকে হতে হল তা নিজেই হতবাক এই অভিনেত্রী। যদিও, পুলিশের জন্য নিজেকে ভাগ্যবান বলেই মানছেন কাঞ্চনা। ঘটনাস্থলে পুলিশ না এলে কি করতেন তা ভেবে শিউড়ে উঠছেন।
কাঞ্চনা নিজেই জানিয়েছেন, পুজোর জন্য এখন প্রায়ই শ্যুটিং শেষ হতে রাত হয়ে যাচ্ছে। সোমবার অনেকটা রাত করেই তাঁর শ্যুটিং শেষ হয়। এরপর গাড়ি নিয়ে বেহালার বাড়িতে ফিরছিলেন কাঞ্চনা। অভিযোগ, সিরিটি শ্মশানের কাছে তিন মাথার মোড়ে আচমকাই তাঁর গাড়ির উপরে ইট এসে পড়ে।
কী ঘটেছে দেখার জন্য গাড়ি থেকে নেমে আসেন কাঞ্চনা। তাঁর অভিযোগ, সে সময় দুই মত্ত যুবক এসে তাঁর গাড়ির চাবি ছিনিয়ে নেয়। কাঞ্চনা জানিয়েছেন, ওই দুই মত্ত যুবক দাবি করে যে আর একটু হলে নাকি তারা গাড়ির ধাক্কা খাচ্ছিল। এমনকী, কাঞ্চনা তাঁর গাড়ি দিয়ে দু'জনকে পিষে মারার চেষ্টা করছিলেন বলেও ওই দুই মত্ত যুবক দাবি করতে থাকে। রাত তখন ১২.১০টা। কাঞ্চনার দাবি, আশপাশে প্রচুর লোকই ছিল, কিন্তু কেউ তাঁকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেনি। সাহায্যের জন্য আবেদনও নাকি জানান কাঞ্চনা। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি বলে তাঁর দাবি। দুই মত্ত যুবক ততক্ষণে কাঞ্চনার হাত ধরে টানাটানিও করছিল বলে অভিযোগ।
এরই মধ্যে আরও এক যুবক এসে ওই দুই মত্ত যুবকের সঙ্গে যোগ দেয়। এমনকী কাঞ্চনাকে চড় মারা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হতে থাকে। কাঞ্চনার দাবি, তিনি গাড়ি চাবি দিয়ে দেওয়ার জন্য অনুনয়-বিনয় করতে থাকেন। কিন্তু, মত্ত যুবকরা তাদের গলা আরও চড়িয়ে দেয়। পুলিশও তাদের কিছু করতে পারবে না বলেও হুমকি দেওয়া হয়।
মত্ত যুবকদের দলটি এরপর কাঞ্চনাকে ৪০ বার কান ধরে ওঠ-বস করার নিদান দেয়। কান ধরে ওঠ-বসের জন্য জোর করতে থাকে। তাদের কথা না শুনলে কাঞ্চনা গাড়ির চাবি ফেরত পাবেন না বলেও হুমকি দেওয়া হতে থাকে।
কাঞ্চনা জানিয়েছেন, এমনই সময়ে ঘটনাস্থলের কাছে বেহালা থানার একটি পুলিশ জিপ দেখতে পেয়ে ছুটে যান তিনি। পুলিশের গাড়ির সামনে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন কাঞ্চনা। এরপরই পুলিশ ওই মত্ত যুবকদের ঘিরে ফেলে। ঘটনাস্থলেই একজনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে আরও একজনকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতদের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শেষ হলে আরও কয়েকটি ধারা এফআইআর-এ সংযুক্ত হতে পারে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
মঙ্গলবার সকালে রাতে এই দুর্বিসহ অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে কার্যত শিউরেই উঠছেন কাঞ্চনা। পুজোর উৎসবের আবহে এমন ঘটনায় রীতিমতো আতঙ্কিত তিনি।
পুজো শুরুর মুখে রাতের কলকাতায় এভাবে মত্ত যুবকদের চড়াও হওয়ার ঘটনায় নানা প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে। ঠাকুর দেখার ভিড়ে রাতের কলকাতা আদৌ কতটা নিরাপদ তা নিয়েও অনেকে পুলিশের দিকে আঙুল তুলেছেন।