অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপের জন্য উচ্ছেদ, খেলা শুরুর আগে দুর্গতিতে সল্টলেকের বেশ কয়েকহাজার মানুষ
বিবেকানন্দ যুবভারতী স্টেডিয়ামের আশপাশ থেকে উচ্ছেদ হওয়া মানুষদের জন্য চিঠি পাঠানো হচ্ছে ফিফার কাছে। অনূর্ধ্ব বিশ্বকাপের লক্ষ্যে উচ্ছেদের জেরে বেশ কয়েক হাজার মানুষ ইতিমধ্যেই রুটি-রুজি হারিয়েছেন।
বিবেকানন্দ যুবভারতী স্টেডিয়ামের আশপাশ থেকে উচ্ছেদ হওয়া মানুষদের জন্য চিঠি পাঠানো হচ্ছে ফিফার কাছে। অনূর্ধ্ব বিশ্বকাপের লক্ষ্যে উচ্ছেদের জেরে বেশ কয়েক হাজার মানুষ ইতিমধ্যেই রুটি-রুজি হারিয়েছেন। মাথার ওপর থেকে ছাদ হারিয়েছেন অনেকে। ঘটনায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে।
এযেন প্রদীপের নিচেই অন্ধকার। উপলক্ষ্য অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপ। সেই দিকে লক্ষ্য রেখে সেজে উঠেছে সল্টলেক। তবে সল্টলেককে সাজিয়ে তুলতে ইতিমধ্যেই বিবেকানন্দ যুবভারতী স্টেডিয়ামের আশপাশ থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে বহু মানুষকে। উচ্ছেদ করা হয়েছে ১২ নম্বর ট্যাঙ্ক এলাকার বস্তি। অনূর্ধ্ব বিশ্বকাপ শুরু আগেই তার প্রভাব পড়েছে ১০, ১২, ১৪, ১৬ নম্বর ট্যাঙ্ক এবং সিটি সেন্টার সংলগ্ন এলাকার হকারদের ওপর। কেবি-কেসি ব্লক সংলগ্ন এলাকার বস্তিও উচ্ছের করা হয়েছে বুলডোজার দিয়ে। বিধাননগরের মেয়র কিংবা সরকারি আধিকারিক সবাই জানাচ্ছেন, যাঁদের উচ্ছেদ করা হয়েছে তাঁদের কাছে বৈধ কাগজপত্র ছিল না। প্রশ্ন উঠছে যদি বৈধ কাজগপত্র না থাকবে, তাহলে তাদের এতদিন ধরে সেখানে থাকতে কিংবা ব্যবসা করার সুযোগ দেওয়া হল কেন? কিংবা কার স্বার্থে এতদিন সেই সুযোগ দেওয়া হল।
যেসব বস্তি উচ্ছেদ করা হয়েছে, সেখানকার মানুষদের বক্তব্য, তাঁদের কাছে আধার কার্ড, ভোটার কার্ড রয়েছে। পুনর্বাসন চেয়ে পুরসভার কাছে আবেদন করা হলেও, কোনও উত্তর মেলেনি বলে জানিয়েছেন উচ্ছেদ হওয়া বাসিন্দারা। অথচ এই মানুষগুলোকেই ভোটের সময় কাজে লাগায় শাসক দল। ভোটের সময় নেতাদের প্রয়োজন মতো কাজও করিয়ে নেওয়া হয় বলেও জানিয়েছেন তারা।
উচ্ছেদ হওয়া হকারদের দাবি, প্রায় আড়াই হাজার হকার উচ্ছেদ করা হয়েছে।
উচ্ছেদ হওয়া বস্তির বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, যে সময়ে তাঁরা সল্টলেকে এসেছিলেন, সেসময়ে এলাকা কার্যত ছিল জঙ্গলে ঢাকা। আস্তে আস্তে রাস্তা হয়েছে, দোকান হয়েছে। সল্টলেক বদলেছে। তাদের অবস্থাও কিছুটা বদলেছে। কিন্তু হঠাৎই যেন বোধনের জন্য বিসর্জন।
দিন কয়েক আগে প্রশাসনের তরফে জানানো হয় জায়গা খালি করে দিতে হবে। কেউ উঠে গিয়েছিলেন। তবে বেশির ভাগই উঠে যাননি। যাঁরা যাননি, তাদের ঝুপড়িগুলি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয়। ভেঙে দেওয়া হয় টিউবওয়েলও। ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়ার পর যা পড়েছিল পুরসভার কর্মীরা তা পরিষ্কার করে দেন। বন্ধ হয়ে যায় স্বেচ্ছাসেবীদের দ্বারা পরিচালিত স্কুলও।
বাম আমলে নানা সময়ে উন্নয়নের জন্য উচ্ছেদের বিরোধিতা করেছিলেন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী তথা, তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিভিন্ন জায়গায় উচ্ছেদের বিরুদ্ধে গণ আন্দোলনে নেতৃত্বও দিয়েছিলেন। তাই তাঁর আমলেই এই ধরনের কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বহু মানুষ।
এই সমস্ত অন্তজ মানুষগুলোর জন্য এলাকায় সিগনেচার ক্যাম্পেনের কাজও চলছে। যা পাঠানো হবে আয়োজক সংস্থা ফিফা এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের কাছে।