৪ মাসে ৮টি শর্টফিল্ম, এক অন্য রূপকথার কাহিনি লিখল সেলিম-শিখা-মণীষরা, চিন্তায় পড়তে পারে টলিউড
এ যেন আলোর ছুট। অসম্ভবকে সম্ভব করার গল্প। 'গল্প'-শব্দটা শুনলেই মনটা যেন কেমন হয়ে যায়। কতগুলো মুহূর্ত পরপর সেজেই তো একটা গল্পের আকার নেয়।
এ যেন আলোর ছুট। অসম্ভবকে সম্ভব করার গল্প। 'গল্প'-শব্দটা শুনলেই মনটা যেন কেমন হয়ে যায়। কতগুলো মুহূর্ত পরপর সেজেই তো একটা গল্পের আকার নেয়। যারমধ্যে ঘটনার ঘটনার প্রবাহমানতা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ছুটেতে থাকে। এরপর আসে একটা বিন্দু যেখানে সমস্ত পেরিয়ে আসা মুহূর্তগুলো একটা পূর্ণ আকার নেয়। আর তখনই তো আকার নেয় এক 'পূর্ণ-গল্প'। এমন সব গল্প-এর বিষয়ও ঘটনার ভিতে ভর করে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ নেয়। যার উপরে মানুষি তকমা পড়ে কোনও গল্পের রস হয় দুঃখের, কোনও গল্প আবার আনন্দের, আবার কোনও গল্প হয়ে ওঠে 'লার্জার দ্যান লাইফ'।
সেলিম-মণীষ-গোপাল-আতেশ্বর-রূপা-স্বান্তনা-সুজিত-শিখা-দের কাহিনিটাও এমনই। মুহূর্তের উপর মুহূর্ত গড়তে গড়তে অলক্ষ্যে তাঁরা যে কত গল্প সৃষ্টি করেছে সেটা একটা অন্য কাহিনি। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রয়াসমের মেন্টর অম্লানকুসুমের বুনে দেওয়া স্বপ্নের আরব্য রজনীতে একদিন চেপে পড়েছিল সেলিম-শিখারা। সেই মহীরূহ আজ বৃক্ষের আকার নিয়েছে। আর এই সফরে তৈরি হয়েছে একের পর এক গল্প। 'দ্য চেঞ্জ মেকার'-এর অ্যাখ্যা পাওয়া প্রয়াসমের তরুণ তুর্কীর দল এবার তৈরি করে ফেলেছে এক অন্য নজির। তৈরি করেছে এক নতুন গল্প। যা যে কোনও মানুষকে তাক লাগিয়ে দিতে পারে। মাত্র ৪ মাসের মধ্যে তাঁরা তৈরি করে ফেলেছে ৮টি শর্ট-ফিল্ম। এই ছবি তৈরি করিয়েদের দলে এমন কিছু জন আছে যাদের বয়স সবে ১৩ ছুঁয়েছে। বিষয় আঙ্গিক থেকে নির্মাণকৌশল-সবদিক দিয়েই ছবিগুলি সকলকে অবাক করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।
বছর পাঁচেক আগে প্রয়াসম তার ইয়াং চাইল্ড কমিউনিটি ডেভলপারদের নিয়ে শুরু করেছিল 'ব্যাড অ্যান্ড বিউটিফুল ওয়ার্ল্ড' চলচ্চিত্র উৎসব। সংক্ষেপে যার নাম 'বিবিডবলু'। এই বছর 'বিবিডবলু'-র পষ্ণম বর্ষ। এর জন্য এবার ৮টি শর্ট ফিল্ম-কে নির্বাচিত করা হয়েছে। যা তৈরি করেছেন প্রয়াসমের ছেলে-মেয়েরাই। আটটি ছবিতেই ফুটে উঠেছে বর্তমান জীবনের এক মিষ্টি প্রেমের গল্প। আর এই শর্টফিল্মের অভিনেতা-অভিনেত্রীরা কেউই পেশাদার নন। প্রত্যেকেই ভিন্ন ভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত- কেউ গৃহবধূ তো কেউ কলেজ পড়ুয়া, কেউ আবার সাংবাদিক, রেডিও জকি। আবার কেউ জড়িয়ে আছেন অন্য কোনও পেশার সঙ্গে। বলতে গেলে অধিকাংশ জনই এই প্রথম কোনও ফিল্মে অভিনয় করেছেন। এই আটটি শর্ট ফিল্মের মধ্যে আবার বারোটি ক্যাটিগরিতে সেরা বাছাই করা হবে। এরমধ্যে ৩টি ক্রিকিটিকস অ্যাওয়ার্ড এবং ৯টি পপুলার অ্যাওয়ার্ড।
কথা হচ্ছিল প্রয়াসমের মেন্টর অম্লানকুসুম গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে, তিনি স্পষ্টতই জানালেন, 'বর্তমান জীবনে ছবি বা ফিল্ম মানেই তাতে এমন কিছু যৌনাচার থাকতে হবে যাতে মানুষ আকৃষ্ট হয়। অথচ বাংলা ছবি এককালে গল্প বা কনটেন্টের গভীরতার জন্য খ্যাত হয়েছিল। বিবিডবলু-তে প্রদর্শিত হতে চলা এই ৮টি ছবি বাংলা চলচ্চিত্রের সেই গল্প বলার আমেজটাকেই ফিরিয়ে এনেছে। আটটি মিষ্টি প্রেমের গল্প যা মানুষকে ভীষণভাবে আকৃষ্ট করবে।'
কীভাবে সম্ভব হল এই আটটি শর্টফিল্ম? অম্লানের ভাষায় প্রয়াসমের 'ছেলে-মেয়েদের অক্লান্ত পরিশ্রম আর ইচ্ছে ফের এক অসম্ভবকে সম্ভব করেছে।' মাত্র আট বছর বয়সে কমিউনিটি ডেভলপার হিসাবে কাজ শুরু করেছিলেন শিখা-সেলিমরা। একে একে তাঁদের সঙ্গে জুড়েছে মণীশ, সুজিত, গোপাল, স্বান্তনা, রূপাদের নাম। চাইল্ড কমিউনিটি ডেভলপার নিয়ে সমাজ উন্নয়নের পথিকৃৎ হয়েছে প্রয়াসম। আজ আমেরিকা থেকে রাষ্ট্রসংঘ, দক্ষিণ আফ্রিকা, নরওয়ে, কেনিয়া-সহ আরও বেশকিছু দেশ সমাদৃত হচ্ছে সেলিম-শিখা-মণীশদের মতো কমিউনিটি ডেভলপারদের কাজ। তাঁদের তৈরি করা ছবি প্রদর্শিত হচ্ছে মুম্বই, আমেরিকায়।
বলতে গেলে যে ভাবে এই শর্টফিল্মগুলো তৈরি হয়েছে তা যে কোনও পেশাদার সিনেমা করিয়েদের তাক লাগিয়ে দেবে। কারণ, এই শর্টফিল্মগুলি বিষয় আঙ্গিক থেকে শুরু করে চিত্রনাট্য,সংলাপ সংযোজন, ক্যামেরার কাজে যে কোনও পেশাদার কলাকুশলীদের তৈরি করা সিনেমাকে চ্যালেঞ্জ ফেলে দেবে। কিছু আনকোরা ছেলে-মেয়ে শুধুমাত্র ইচ্ছে আর ভালবাসার জোরে যে এমন শর্ট ফিল্ম বানাতে পারে তা না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন।
৮টি সিনেমার ৮ জন পরিচালকের সঙ্গে অবশ্যই জুড়ে রয়েছে প্রয়াসমের একটি বিশাল টিম। যার সংখ্যা অন্তত ৬০। এই টিম প্রয়াসমই মাত্র ৪ মাসে এক অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। কলকাতা শহরের বুকে লিখেছে এক অন্য রূপকথা। যার প্রথম প্রকাশ ঘটবে ৩জুন। রবীন্দ্র তীর্থ নিউটাউনে।