কলকাতা পুলিশের সার্জেন্ট এখলাক আহমেদ প্রথম প্লাজমা দান করে নতুন নজির গড়লেন
তিনি রক্তদান করেছেন বহুবার। কিন্তু প্লাজমা দান নতুন এবং অন্য ধরনের অভিজ্ঞতা তাঁর কাছে। কিছুটা তাঁর করোনা জয়ের লড়াইয়ের মতো। আর তাঁর প্লাজমা দিয়েই বাঁচবে বহু লোকের প্রাণ। কলকাতা পুলিশ সার্জেন্ট এখলাক আহমেদ রাজ্যের প্রথম পুলিশ যিনি প্লাজমা দান করলেন রাজ্যে চলতে থাকা প্লাজমা থেরাপির জন্য।
এখলাক আহমেদ বলেন, 'আমি যখন এ বিষয়ে জানতে পারলাম তখন আমি সঙ্গে সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিলাম যে আমি প্লাজমা দান করব। আমি করোনা সংক্রমিত ছিলাম, কিন্তু এখন আমি সুস্থ এবং আমার প্লাজমা যদি অন্যদের সুস্থ হতে সহায়তা করে তবে এটা আমার মানবিকতার প্রতি কর্তব্য বলে আমি মনে করব। চিকিৎসকরা এই দানের আগে কিছু টেস্ট করিয়ে নেন এবং আমার সবকিছু ঠিকঠাক দেখার পরই আমি প্লাজমা দান করি। অন্যদের সাহায্য করার অনুভূতি সর্বদাই খুব সুন্দর।’
কলকাতার বউবাজার পুলিশ থানার সার্জেন্ট এখলাকের ৯ জুন করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন এবং সাতদিন পর ১৬ জুন তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। সুস্থ হয়ে ওঠার কিছুদিন পরই প্লাজমা দান করা যায়। সুস্থ কোভিড–১৯ রোগীর প্লাজমা ব্যবহৃত হয় পজিটিভ রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে। দেশের অন্যান্য জায়গাগুলির মতো নয় যেখানে প্লাজমা থেরাপি হালকা করোনা উপসর্গের ক্ষেত্রে পরিচালিত হয়। কলকাতায় এই থেরাপির ট্রায়াল মারাত্মকভাবে কার্যকর হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও কাউন্সিল অফ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ–ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ কেমিক্যাল বায়োলজির যৌথ উদ্যোগে এই ট্রায়াল করা হয়।
সিএসআইআরের এক বৈজ্ঞানিক বলেন, 'প্রাথমিকভাবে, ভয় ছিল যে আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণ দাতা পাব কিনা কিন্তু মানুষ খুবই উদার এবং তাঁরা এর প্রয়োজনটা বুঝেছে। আমরা খুবই খুশি যে মানুষ ট্রায়ালের জন্য এগিয়ে এসে প্লাজমা দান করছে।’ আরও এক দাতা, যিনি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পোস্টগ্রাজুয়েটের ট্রেনি, তিনিও শুক্রবার ট্রায়ালের জন্য প্লাজমা দান করেন। এখনও পর্যন্ত ১২ জন দান করেছেন প্লাজমা। চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীরা এই ট্রায়ালের ওপর খুব কাছ থেকে নজর রাখবেন।
তবে বেশিরভাগ দাতাই সামনের সারির স্বাস্থ্য কর্মী যাঁরা কর্তব্য করতে গিয়ে করোনা আক্রান্ত হন। এখলাক আহমেদও তাঁদের মধ্যে একজন যিনি কর্তব্য করতে গিয়ে কোভিড–১৯–এ আক্রান্ত হন। তিনি প্রথম পুলিশ অফিসার হলেও একমাত্র নন যিনি প্লাজমা দান করেন। কলকাতা পুলিশের আর এক অফিসার যিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে প্লাজমা দান করবেন এবং তাঁর স্ক্রিনিং পদ্ধতি চলছে। ওই অফিসার সহ তাঁর স্ত্রী, পুত্র ও কন্যা সংক্রমিত হয়।
এখনও পর্যন্ত কলকাতা পুলিশের ৪৩৮ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। তাঁরা সকলেই ডিউটির সময়ই সংক্রমিত হয়েছে। তার মধ্যে ৩৬০ জন কর্মী সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই প্লাজমা দান করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।