দক্ষিণ কলকাতার আন্ত্রিক প্রকোপে মিলল ইকোলাই জীবাণু, অস্বস্তি বাড়ল শোভনের
দক্ষিণ কলকাতায় আন্ত্রিকের প্রকোপে ফের অস্বস্তি বাড়ল মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের। এবার স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন জানিয়ে দিয়েছে বাঘাযতীন এলাকায় পুরসভার সরবরাহ করা জল থেকে ইকোলাই জীবাণু মিলেছে।
দক্ষিণ কলকাতায় আন্ত্রিকের প্রকোপে ফের অস্বস্তি বাড়ল মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের। এবার স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন জানিয়ে দিয়েছে বাঘাযতীন এলাকায় পুরসভার সরবরাহ করা জল থেকে ইকোলাই জীবাণু মিলেছে। এর আগেই জানা গিয়েছিল ধাপার আজাদ হিন্দ জল প্রকল্পে কলিফর্ম জীবাণু পাওয়ার খবর। যদিও, মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় এই কলিফর্ম পাওয়ার খবর স্বীকার করেননি। তাঁর পরিস্কার যুক্তি ছিল আজাদ হিন্দ জল প্রকল্পের জল পান করার পক্ষে একদমই নিরাপদ।
মেয়রের এই বক্তব্যের পাল্টা বক্তব্য অবশ্য থামেনি। স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী পরিস্কারই বলে দেন যখন একসঙ্গে এত সংখ্যক মানুষ একটা বিশাল এলাকা জুড়ে আন্ত্রিকে আক্রান্ত হয়েছেন, তখন ধরে নিতে হবে জলের একটা বড় ভূমিকা আছে। সুতরাং, আক্রান্ত এলাকার মানুষের উচিত জল ফুটিয়েই খাওয়া বা নিশ্চিত বিশুদ্ধ জলই পান করা।
স্বাস্থ্য অধিকর্তার এই মন্তব্যের পর বিতর্ক আরও দানা বাধে। এই পরিস্থিতির মধ্যে স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন বাঘা যতীনের জল থেকে যে ইকলোই জীবাণু পেয়েছে তাতে মেয়রের যুক্তি কতটা ধোপে টিকবে তাতে প্রশ্ন উঠেছে। তবে, ইকোলাই-এর কোন ধরণের জীবাণু পাওয়া গিয়েছে তা নিশ্চিত করেনি স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন। এই নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা করে শুক্রবারই পুরসভার কাছে একটি রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা ছিল স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের।
এদিকে, বাঘাযতীন এলাকাতে এদিন স্থানীয় দোকানে বোতলবন্দি জল বিক্রিতে অভিযান চালায় কলকাতা পুরসভা। বেশকিছু বোতল আটক করেন পুরসভার কর্মীরা। তাঁদের দাবি, বেশিরভাগ বোতলের জল মিনারেল ওয়াটার নয়। নিম্নমানের জল ভরে তা লেবেল সেঁটে বিক্রি করা হচ্ছে। এমনকী লেবেলে থাকা আইএসআই মার্ক জাল বলে দাবি করেছেন পুরসভার কর্মীরা। আন্ত্রিকের প্রকোপ বাড়ার পর এই ধরনের জলের বোতল রমরম করে বিক্রি হচ্ছে। আন্ত্রিকের সংক্রমণে এই সব নিম্নমানে বোতলবন্দি জলের কোনও ভূমিকা আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বেলেঘাটা আইডি-র অধ্যক্ষও আন্ত্রিকের সংক্রমণে জলকেই দায়ী করেছেন। তাঁর মতে, একসঙ্গে এত গুলি এলাকার মানুষের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা প্রমাণ করছেন সংক্রমণ একটা কমন সোর্স থেকে আসছে। তাঁর মতে এই কমন সোর্স অবশ্যই জল। তবে, ধাপা আজাদ হিন্দ প্রকল্পের জলেই এই সংক্রমণ কি না তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি বেলাঘাটা আইডি হাসপাতালের অধ্যক্ষ।
দক্ষিণ কলকাতার আন্ত্রিকের প্রকোপ এখনও নিয়ন্ত্রণ হয়নি। প্রায়ই নতুন নতুন আক্রান্তে ভিড় বাড়ছে সরকারি হাসপাতালে। রুবির পর থেকে ই এম বাইপাস সংলগ্ন এলাকায় আন্ত্রিকের প্রকোপ সবথেকে বেশি। এরমধ্যে আছে বাইপাস সংলগ্ন ঢাকুরিয়া, সন্তোষপুর, যাদবপুর, বাঘাযতীন, গড়িয়া, পাটুলি, বৈষ্ণবঘাটা এবং বিজি এলাকার মানুষজন। বাঘাযতীন হাসপাতালে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চিকিৎসার জন্য লাইন লাগাচ্ছেন আন্ত্রিক আক্রান্তরা। তবে, এখনও পর্যন্ত কারোরই শারীরিক অবস্থা আয়ত্তের বাইরে চলে যায়নি।
দক্ষিণ কলকাতার আন্ত্রিকের প্রকোপের উৎস খোঁজা নিয়ে বিতর্ক এতটাই চরমে যে বৃহস্পতিবার কলকাতা পুরসভার অধিবেশনে মেয়রের বিরুদ্ধে তীব্র হইচই করেন বিরোধী দলের কাউন্সিলাররা। এমনকী মেয়রের 'জল শোভন' নাম বদলে 'ডায়ারিয়া শোভন' বলে ডাকা হোক বলেও দাবি ওঠে।