একদল তরুণের উদ্যোগ, ছেলেবেলার সেই সন্দেশ এবার তথ্যচিত্রের পর্দায়
সন্দেশ পত্রিকার ১০৫ বছরের যাত্রাকে ধরে রাখল তথ্যচিত্র 'সন্দেশ ১০০'
দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে বাঙালির ছেলেবেলা জুড়ে ছিল সন্দেশ। না মিষ্টির কথা হচ্ছে না, হচ্ছে সন্দেশ পত্রিকার কথা। যার পাতায় প্রথম আত্মপ্রকাশ ফেলুদার, প্রফেসর শঙ্কুর। সেই পত্রিকা যে আজও বের হয় সেটা বোধহয় অনেকেরই জানা নেই। আজকের ইন্টারনেট ফেসবুকের যুগে চাপা পড়ে গিয়েছে সন্দেশের ইতিহাস। তাই পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এই ইতিহাসকে ধরে রাখতে উদ্যোগ নিয়েছেন একদল বাঙালি যুবক। বানিয়ে ফেলেছেন সন্দেশ পত্রিকা নিয়ে ঊনষাট মিনিটের একটি তথ্যচিত্র।
ফিল্মটির নির্মাতা ১৮ বছরের সৌম্যকান্তি দত্ত। তিনি জানিয়েছেন এই ফিল্মটি বানাবার কথা তাঁদের মাথায় আসে ২০১৭ সালের মার্চ মাসে। আইসিসিআর-এ ফেলুদার ৫০ বছর উপলক্ষ্যে এক প্রদর্শনি চলছিল। সেসময় অনেকেই এসে সত্যজিত রায়ের হাতের আঁকা রেখাচিত্র, লীলা মজুমদারের বা নলিনী দাসের লেখা ছোট গল্পের খোঁজ করেছিলেন। কিন্তু সন্দেশের কোনও আর্কাইভ নেই। তাই সন্দেশের ১০৫ বছরের যাত্রাকে ঘরে রাখতে তথ্যচিত্র বানাবার কথা মাথায় এসেছিল।
সৌম্যকান্তি ও তাঁর পাঁচ বন্ধু কাজ শুরু করেছিলেন ২০১৭-র জুলাইতে। সন্দেশের এখনকার সম্পাদক তথা পরিচালক সন্দীপ রায়ের লিখিত সম্মতি মিলে গিয়েছিল। কিন্তু সমস্যা হয় অর্থ নিয়ে। সৌম্যকান্তি জানিয়েছেন টলিউডের অনেক প্রযোজকের দরজায় দরজায় ঘুরেও লাভ হয়নি। অধিকাংশ আগ্রহই দেখাননি, আর বাকিরা এমন সব শর্ত চাপিয়েছেন, যা পূরণ করা সৌম্যকান্তিদের পক্ষে অসম্ভব ছিল।
শেষ অবধি সন্দীপ রায় ও সন্দেশের আরও কয়েকজন সদস্য ও সৌম্যকান্তিরা নিজেদের অর্থ দিয়েই ফিল্ম বানানোর কাজ শুরু করেন। সৌম্য জানিয়েছেন 'সন্দেশ ১০০'-য় সত্যজিতের হাতে আঁকা ছবি তো আছেই, আছে বুদ্ধদেব গুহ, নবনীতা দেবসেন-এর মতো লেখকদের সাক্ষাতকার। সন্দেশের কর্মীদের সাক্ষাতকার। আছে অভিনেতা শাশ্বত চ্যাটার্জি, চিরঞ্জিত, ফিল্ম পরিচালক অনিক দত্তের সাক্ষাতকারও। সব্যসাচি চক্রবর্তি ফিল্মটিতে ভয়েসওভার দিয়েছেন।
ফিল্মটির প্রথম প্রদর্শনী হয়ে গেল ২১ জুলাই আইসিসিআর-এ। অনেকেই এর ভুয়সী প্রশংসা করেছেন। সব্যসাচি চক্রবর্তী জানিয়েছেন, একদল তরুন যে একটি সাহিত্য পত্রিকা নিয়ে তথ্যচিত্র বানাতে চাইছে, যে পত্রিকা আজ প্রায় হারিয়েই গেছে, সেটাই তাঁর কাছে সবচেয়ে আগ্রহের বিষয় ছিল।