'কাঁটার মুকুটের মতো', মমতাকে পুরস্কৃত করায় অ্যাকাডেমির সম্মান ফেরালেন রত্না
রবীন্দ্র-জয়ন্তীতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে বিশেষ সম্মান তুলে দিয়েছে বাংলা অ্যাকাডেমি। আর এরপর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়াতে জুড়ে বিতর্ক। প্রশ্ন তোলা হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর লেখা নিয়েও। আর এর মধ্যেই অন্নদাশঙ্কর সম্মান
রবীন্দ্র-জয়ন্তীতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে বিশেষ সম্মান তুলে দিয়েছে বাংলা অ্যাকাডেমি। আর এরপর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়াতে জুড়ে বিতর্ক। প্রশ্ন তোলা হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর লেখা নিয়েও। আর এর মধ্যেই অন্নদাশঙ্কর সম্মাননা ফিরিয়ে দিলেন লেখিকা ও গবেষক রত্না রশিদ বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সম্মান দেওয়ার প্রতিবাদেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন রত্নাদেবী।
২০১৯ সালে বাংলা অ্যাকাডেমির তরফে অন্নদা শঙ্কর রায় স্মারক দেওয়া হয় লেখিকাকে। আর সেই পুরস্কারই ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি। তবে ২০০৯ সালে বাংলা অ্যাকাডেমি পুরস্কারও পেয়েছিলেন। কিন্তু সেটি ফেরাননি বলেই জানা যাচ্ছে।
লেখিকার এহেন পদক্ষেপ ঘিরেই শুরু হয়েছে আরও বিতর্ক। এই প্রসঙ্গে সুবোধ সরকার জানিয়েছেন, সবদিক ভেবেই হাই-পাওয়ার কমিটি এই পুরস্কার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে কোনও লেখক আরেকজন লেখকের পুরস্কার প্রাপ্তিতে তাঁর আগে পাওয়া পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করে তা একমাত্র লেখকের ব্যক্তিগত ব্যাপার বলে দাবি সুবোধ সরকারের। এই বিষয়ে তাঁর কিছু বলার নেই বলেও মন্তব্য করেছেন। একই সঙ্গে আরও জানিয়েছেন, এতজন গুণী মানুষ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা ব্রাত্য বসু পরিস্কার ভাবে বলেছেন।
অন্যদিকে এই বিষয়ে ইতিমধ্যে একটি বিবৃতিও দিয়েছেন লেখিকা ও গবেষক রত্না রশিদ বন্দ্যোপাধ্যায়।
সেখানে তিনি লিখেছেন, '' মহাশয়, আমি রত্না রশীদ ব্যানার্জী ২০১৯ সালের ২৬ জুলাই পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির তরফ থেকে অন্নদা শঙ্কর রায় স্মারক সম্মানে ভূষিত হয়েছিলাম। আমি তখন সেই সম্মান সকৃতজ্ঞ চিত্তে গ্রহণ করি। গতকাল সংবাদ মাধ্যমের মাধ্যমে আমি অবহিত হলাম যে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি একটি নতুন পুরস্কার ঘোষনা করে প্রারম্ভিক বছরের সেই পুরস্কার পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অর্পণ করেছে বাংলা সাহিত্যে তাঁর নিরলস সাধনার স্বীকৃতি হিসেবে।
এই অভিধার চেয়ে বড় সত্যের অপলাপ হতে পারে না। মুখ্যমন্ত্রীকে এই পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি শুধুমাত্র একটি ন্যক্কারজনক দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে তাই নয়, এর মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যের সত্যিকারের নিরলস চর্চায় রত সমস্ত মানুষকে অপমানিত করেছে।
এই অবস্থায় ২০১৯ সালে এই সরকারের আমাকে দেওয়া সম্মান আমার কাছে কাঁটার মুকুটের মত প্রতীয়মান হচ্ছে। আমি এই চিঠির মাধ্যমে ২০১৯ সালের ২৬ জুলাই আমাকে দেওয়া অন্নদা শঙ্কর স্মারক সম্মান ফিরিয়ে দিচ্ছি। ওই সম্মানের সঙ্গে দেওয়া স্মারক আমি পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির ঠিকানায় অনতিবিলম্বে পাঠিয়ে দেবো। ইতি--- রত্না রশীদ ব্যানার্জী, বর্ধমান''
শুধু বিবৃতিই নয়, এই প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমকে লেখিকা জানিয়েছেন, বাংলা অ্যাকাডেমি অবিবেচকের মতো কাজ করেছে। যোগ্য বলে বাংলা অ্যাকাডেমি ওই সম্মান আমাকে দিয়েছিল। কিন্তু তা আমি ফিরিয়ে দেব। শুধু তাই নয়, মুখ্যমন্ত্রীর লেখা বইয়ের মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন রত্না রশীদ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, বইয়ের তো একটা মান থাকতে হবে।
বলে রাখা প্রয়োজন, এই বছর থেকেই 'রিট্রিভার্সিপ' পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাংলা অ্যাকাডেমির নামেই এই পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। সমাজের অন্যান্য কাজের মধ্যেও যারা সাহিত্য চর্চা করেন তাঁদেরকেই এই পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাংলা অ্যাকাডেমির। আর এবার তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা কবিতা বিতান কাব্যগ্রন্থের জন্যে দেওয়া হয়েছে। আর তা নিয়েই যাবতীয় বিতর্ক।