পরের সপ্তাহেই কলকাতার রাস্তা থেকে উধাও হতে পারে ওলা-উবার, শনিবার ঘোষিত হবে সিদ্ধান্ত
শুধু যাত্রীরাই নয়, ক্যাব মালিকদের পকেটও সমানে কেটে চলেছে ওলা-উবার। যার জেরে এবার আন্দোলনে নামতে চলেছেন কলকাতায় ওলা-উবার-এর মতো অনলাইন ক্যাব পরিষেবায় গাড়ি দেওয়া মালিক এবং চালকরা।
শুধু যাত্রীরাই নয়, ক্যাব মালিকদের পকেটও সমানে কেটে চলেছে ওলা-উবার। যার জেরে এবার আন্দোলনে নামতে চলেছেন কলকাতায় ওলা-উবার-এর মতো অনলাইন ক্যাব পরিষেবায় গাড়ি দেওয়া মালিক এবং চালকরা। সবকিছু ঠিকঠাক এগোলে পরের সপ্তাহেই কলকাতার রাস্তা থেকে উধাও হতে পারে ওলা-উবার।
২০১৭ সালের মার্চ মাসে কলকাতায় তৈরি হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ অনলাইন ক্যাব অপারেটস গিল্ড। যার প্রেসিডেন্ট মদন মিত্র। এই মুহূর্তে এই সংগঠনের ছাতার তলায় ২২,০০০ অনলাইন ক্যাব অপারেটর্স রয়েছেন বলে জানিয়েছেন সাধারণ সম্পাদক পার্থসারথি সেন।
তাঁর অভিযোগ, অনলাইন ক্যাবগুলো এখনও গাড়ি পিছু কিলোমিটারে ৭ টাকা রেট দিচ্ছে। ডিজেল ও পেট্রোলের দাম যে ভাবে লাগাতার বেড়ে চলেছে তাতে এই অর্থে গাড়ি চালানো কার্যত অসম্ভব। অথচ, অনলাইন ক্যাব সংস্থাগুলি বিশেষ করে ওলা ও উবার-এর মতো সংস্থা যাত্রীদের কাছ থেকে বিপুল অর্থ আয় করলেও তার ছিঁটেফোটা লভ্যাংশ গাড়ির মালিকদের দিচ্ছে না।
পার্থসারথি সেনের দাবি, পরিস্থিতি যে দিকে গিয়েছে তাতে আন্দোলনে নামা ছাড়া আর কোনও গতি নেই। ২০১৭ সালে এই সংগঠন তৈরি হলেও খুব দ্রুত এর সদস্য সংখ্য়া বেড়েছে বলেও পার্থসারথি জানিয়েছেন। শনিবার সংগঠনের একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। যেখানে কোর কমিটির সদস্য-রা সব উপস্থিত থাকছেন। পশ্চিমবঙ্গ অনলাইন ক্যাব অপারেটর্স গিল্ড সদস্যরা নীতিগতভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের পক্ষেই সায় দিয়েছেন বলে খবর। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পার্থসারথি সেন জানিয়েছেন ধর্মঘটের সঙ্গে সঙ্গে অনশন আন্দোলনের কর্মসূচিও নেওয়া হতে পারে।
[আরও পড়ুন: মমতার হয়ে প্রচার! জল্পনা উড়িয়ে এই মোদী জানিয়ে দিলেন কী হবে তাঁর ভূমিকা]
প্রাথমিকভাবে ৫, ৬ ও ৭ নভেম্বর এই ধর্মঘটের দিন স্থীর করা হয়েছিল। কিন্তু, ৫ ও ৬ দীপাবলি থাকায় উৎসবের মধ্যে সাধারণ মানুষকে বিপাকে ফেলতে চাইছে না পশ্চিমবঙ্গ অনলাইন ক্যাব অপারেটর্স গিল্ড। সেই কারণ ধর্মঘট ৭ তারিখ থেকে শুরু করা যায় কি না তা নিয়েই মূলত শনিবারের বৈঠকে আলোচনা হতে চলেছে বলেই জানিয়েছেন পার্থসারথি সেন।
কলকাতা শহরে ট্যাক্সি-তে করে চলাচলের ক্ষেত্রে অনলাইন ক্যাব-এর উপর সাধারণ মানুষের নির্ভরতা বেড়েছে। কিন্তু, এই নির্ভরতার সুযোগ নিয়েই অনৈতিকভাবে অনলাইন ক্যাব পরিষেবা দেওয়া সংস্থাগুলি সাধারণ মানুষকে কার্যত ব্ল্যাকমেল করছে বলেও গত কয়েক বছর ধরে অভিযোগ উঠেছে। প্রাইম-টাইম ছাড়াও যে কোনও মুহূর্তে অনলাইন ক্য়াব-এর ভাড়ায় সার্জ জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। অনলাইন ক্যাব পরিষেবায় কলকাতায় সবচেয়ে দুই অগ্রণী সংস্থা হল ওলা এবং উবার। ফলে এদের বিরুদ্ধেই ৯৯ শতাংশ অভিযোগ। পরিস্থিতি এতটাই অসহনীয় হয়েছিল যে পুজোর কয়েক মাস আগে অনলাইন ক্যাব পরিষেবা দেওয়া সংস্থাগুলির সঙ্গে বৈঠক করেন পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। সার্জ নিয়ন্ত্রণের একটা কাঠামোও বেধে দেওয়া হয়। এতে যে কোনও সময়ে বেস ফেয়ারের উপরে সার্জে দাদাগিরি কমলেও ভাড়ায় খুব একটা লাভ হয়নি। বরং যে ভাড়াটা ১০০ টাকা ছিল তাতে অন্তত ৪০ থেকে ৫০ টাকা অতিরিক্ত যোগ হয়ে গিয়েছে বলেও বহু যাত্রী নানা সময়ে অভিযোগ করেছেন।
[আরও পড়ুন: এমএসএমই-তে আরও জোর, ১ ঘণ্টারও কম সময়ে মিলবে ১ কোটি টাকার ঋণ, পোর্টাল উদ্বোধনে মোদী]
ওলা-উবার-এর মতো অনলাইন ক্যাব পরিষেবা দেওয়াগুলো সাধারণ মানুষের পকেট কাটলেও আখেরে তাদের কোনও লাভ হয়নি বলেও বারবার জানিয়েছেন ক্যাব মালিক এবং চালকদের। পরিস্থিতি এমন জায়গা এসেছে এখন ওলা-উবারে গাড়ি দেওয়া মালিকরাও বহু সময় ব্যাঙ্কের ইএমআই দিতে পারছেন না। অনেকে ইএমআই না দিতে পারায় ব্য়াঙ্ক থেকে গাড়ি সিজ করে নিয়েছে। নাম পরিচয় জানাতে অনিচ্ছুক এক উবার চালকেরও অভিযোগ, গাড়ির মালিকদের টাকা কমে যাওয়ায় তাদের মাইনেতেও তার প্রভাব পড়ছে। এছাড়া নানা ধরনের ডিস্পিলিনারি কোডের কথা বলে তাদের অর্থ কেটে নেওয়া হচ্ছে।
[আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি অভিষেকের, বাঙালি-নিধনের প্রতিবাদে গর্জে উঠল কলকাতা]
সবমিলিয়ে ওলা-উবার-এর মতো অনলাইন ক্যাব সংস্থার বিরুদ্ধে জমে থাকা ক্ষোভ আছড়ে পড়তে চলেছে কলকাতার রাজপথে। এই মুহূর্তে একই ইস্যুতে মুম্বই-এ ওলা-উবার-এর মালিক ও চালকরা গাড়ি চালাচ্ছেন না। সেখানে এই আন্দোলন এখন ১১ দিনে পড়েছে।