আবশ্যিক বাংলা: স্বাগত জানাল শিক্ষামহল, কিছু প্রশ্নে বিতর্ক
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইচ্ছানুসারেই বাংলাকে আবশ্যিক করার চিন্তাভাবনা। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ভাষা হিসেবে যেকোনও ভাষা চয়নের অধিকার থাকছে পড়ুয়ার হাতে।
মাতৃভাষাকে মর্যাদা দিয়ে সরকারি, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বা বেসরকারি স্কুলের পাঠ্যক্রমে বাংলাকে আবশ্যিক করার সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে রাজ্য। প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত এই বিধি চালু করার কথা ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইচ্ছানুসারেই বাংলাকে আবশ্যিক করার চিন্তাভাবনা। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ভাষা হিসেবে যে কোনও ভাষা চয়নের অধিকার থাকছে পড়ুয়ার হাতে। তবে তার মধ্যে যে কোনও ভাষা হিসেবে রাখতেই হবে বাংলাকে।
তা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া বাংলার শিক্ষামহলে। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার বলেন, প্রথম কথা প্রাথমিক থেকে বাংলা ভাষা আবশ্যিক করাটা ঠিক নয়। এক্ষেত্রে শিশুদের উপর চাপ পড়ে যাবে। প্রথমে তার নিজের ভাষা, তারপর ইংরেজি, আবার বাংলা। ক্লাস সিক্স থেকে টেন পর্যন্ত এই নীতি চালু করলে ভালো হত।
দ্বিতীয়ত, নদিয়ার সরকারি প্রাথমিক স্কুলে ইংরেজিকে প্রথম ভাষা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে বাংলা হয়ে যাবে দ্বিতীয় বা তৃতীয় ভাষা। এই দুটি নীতি একসঙ্গে যায় না বলেই মনে করেন তিনি। তামিলনাড়ু, কেরালা, কর্ণাটকে মাতৃভাষার প্রতি এই গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু অসমে বাঙালিদের অসমিয়া আবশ্যিক। সেক্ষেত্রে কী হবে? প্রশ্ন রয়েই যায়।
ইতিহাসবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি অবশ্য এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, 'বাংলা ভাষার এই মর্যাদা অনেক আগে প্রাপ্য ছিল। কিন্তু এইভাবে কেউ ভাবেনি। বাংলা ভাষা আবশ্যিক করার যে ভাবনা রাজ্যের সরকার নিয়েছে, তা সাধুবাদযোগ্য। বাংলার জন্য এই ভাবনা, বাংলা ভাষার জন্য এই ভাবনা খুব ভালো পদক্ষেপ। প্রথম শ্রেণি থেকে বাংলা পড়া আবশ্যক হোক। অনেকে ভাবে স্কুলে বাংলা পড়ানো মানে পড়ুয়ারা ইংরেজি শিখতে পারবে না। তা একেবারেই ভুল। আমরা বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করেই বড় হয়েছি, কোনও ইংরেজি মাধ্যমের পড়ুয়ার থেকে কম ইংরেজি জানি বলে মনে হয় না।'