ফের যাদবপুরের আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের পাশে সুব্রত, অস্বস্তিতে সরকার
কলকাতা, ২৬ ডিসেম্বর: সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা অহিংস পদ্ধতিতে যে আন্দোলন করেছেন, তাকে পূর্ণ সমর্থন জানালেন রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। মঞ্চে উঠে যে ছাত্রী রাজ্যপালের হাত থেকে সার্টিফিকেট নিতে অস্বীকার করেছেন, তাঁর প্রশংসাও করেন সুব্রতবাবু। এতে রাজ্য সরকার চূড়ান্ত অস্বস্তিতে পড়ে গেল বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও
পড়ুন:
যাদবপুর
যেন
'উপদ্রুত
কাশ্মীর',
পুলিশি
কড়াকড়িতে
ম্লান
সমাবর্তন
আরও
পড়ুন:
ছাত্ররা
সরল,
বুঝিয়ে
সামলাতে
হয়,
যাদবপুরে
পুলিশি
হামলার
নিন্দায়
সরব
মন্ত্রী
২৪ ডিসেম্বর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন বয়কট করেন সিংহভাগ ছাত্রছাত্রী। যাঁরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন, তাঁদের গলাতেও ছিল প্রতিবাদে সুর। তেমনই এক ছাত্রী বাংলা বিভাগের গীতশ্রী সরকার মঞ্চে উঠেও রাজ্যপাল তথা আচার্য কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর কাছ থেকে মেডেল ও সার্টিফিকেট নিতে অস্বীকার করেন। হতভম্ব আচার্য কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে পুলিশ ডেকে তাঁর বন্ধুদের মার খাইয়েছিল উপাচার্য। তাই তিনি পদত্যাগ না করলে এই শংসাপত্র নেওয়া সম্ভব নয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন রাজ্যপাল। তিনি রূঢ়ভাবে ছাত্রীটিকে নেমে যেতে বলেন। পরে একইভাবে অন্যান্য ছাত্রছাত্রীরাও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্যের হাত থেকে শংসাপত্র নিতে অস্বীকার করেন।
এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া হল প্রবল। তৃণমূল তো বটেই, এমনকী বিজেপিও রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর পাশে দাঁড়ায়। অথচ প্রথম দিকে বিজেপি পড়ুয়াদের পক্ষে ছিল।
কিন্তু শুক্রবার একটি অনুষ্ঠানে পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় সমর্থন করেন পড়ুয়াদের। তিনি বলেন, "গীতশ্রী সরকার তো মারামারি করেনি। অহিংস পদ্ধতিতে প্রতিবাদ জানিয়েছে। এটা কারও ভালো লাগতে পারে, কারও আবার খারাপ। আমার মনে হয়, এটা প্রতিবাদের একটা অভিনব পদ্ধতি। ওই দিন যে ছাত্রছাত্রীরা অহিংস পথে আন্দোলন করেছে, তারা তো অন্যায় কিছু করেনি।" গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে যখন যাদবপুরে পুলিশ ঢুকে ছাত্রছাত্রীদের ওপর বর্বর হামলা চালিয়েছিল, সেই সময়ও সুব্রতবাবু পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।
সুব্রতবাবুর এই মন্তব্যকে সমর্থন করেছেন গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অচিন্ত্যকুমার বিশ্বাস। তিনি বলেছেন, "সুব্রতবাবু সঠিক কথা বলেছেন। ওঁকে অভিনন্দন জানাই।" বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য তথা যাদবপুরের প্রাক্তনী আনন্দদেব মুখোপাধ্যায়ও সুব্রতবাবুকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ সুজন চক্রবর্তী বলেন, "দম্ভ দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চালানো যায় না। ছেলেমেয়েদের আবেগটা বুঝতে হয়। সংবেদনশীল হতে হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, শিক্ষামন্ত্রী এ সব বোঝেন না। অথচ তাঁর সতীর্থ এটা বোঝেন। তৃণমূলের নেতাদের বোধবুদ্ধি না থাকলেও সুব্রতবাবুর খানিকটা আছে। তাই তিনি সত্যটা বলে ফেলেছেন।"
কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান বলেন, "রাজ্যপাল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য। কিন্তু তিনি প্রতিবাদী ছাত্রীটির সঙ্গে পিতৃসুলভ আচরণ করেননি। এটা দুঃখজনক। আসলে সুব্রতদা নিজে ছাত্র আন্দোলন করেছেন। তাই উনি ব্যাপারগুলো হৃদয় দিয়ে অনুভব করেন।"
সিপিএম নেতা তথা কলকাতার প্রাক্তন মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, "সম্মান জোর করে আদায় করা যায় না। সেটা অর্জন করতে হয়। এই সত্যিটা শিক্ষামন্ত্রী থেকে শুরু করে আচার্য, সবার বোঝা উচিত।"