দামি হচ্ছে মামলা দায়ের, অসুবিধায় মধ্যবিত্ত থেকে নিন্ম মধ্যবিত্ত বিচারপ্রার্থীরা
এবার থেকে আর সবুজ ড্যামি পেপারে নয়। মামলা দায়ের সহ যাবতীয় আইনী কাজ কারবার হবে এ-ফোর সাইজের সাদা এক্সিকিউটিভ পেপারে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এই প্রথমবার এমনই বড়সরো পরিবর্তন আসছে কলকাতা হাইকোর্টের ইতিহাসে। তবে এর ফলে মামলার খরচ বাড়বে বলেই মনে করছেন আইনজীবিরা। যাতে অসুবিধায় পড়তে হবে মধ্যবিত্ত থেকে নিম্ন মধ্যবিত্ত বিচারপ্রার্থীদের। জটিলতায় পড়বে আইনজীবীরাও।
আইনজীবী মহলের একাংশের বক্তব্য, শুরু থেকেই হাইকোর্টে আইনী কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে সবুজ ড্যামি পেপার। আইন স্বীকৃত এই বিশেষ ধরনের কাগজে আদালতে আর্জি, জবাব, বিভিন্ন দরখাস্ত দাখিল এবং ভূমি হস্তান্তরের দলিল লেখার কাজে ব্যবহূত হয়। চুক্তিপত্র করতে নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের সঙ্গেও সবুজ ড্যামি পেপার সংযুক্ত করতে হয়। হঠাই এই কাগজ বদলির ফলে সবাইকেই অসুবিধায় পড়তে হবে।
আইনজীবিরা জানান, মামলা দায়েরের সময় সবুজ ড্যামি পেপারে মামলাকারির বক্তব্য নথি আকারে টাইপ করে প্রিন্ট করাতে প্রত্যেকটি পৃষ্ঠার জন্য খরচ হত ১২ টাকা করে। এক্ষেত্রে তার দ্বিগুণ খরচ পড়ে যাবে। সবুজ ড্যামি পেপার যদি হতে ১ টাকা করে পড়ে এক্ষেত্রে পড়বে আড়াই টাকা করে। এক্ষেত্রে প্রিন্টিং খরচাও বাড়বে বলে অনুমান করছেন আইনজীবিরা।
এছাড়াও এ-ফোর সাইজের সাদা কাগজের তুলনায় সবুজ ডেমি পেপার দৈর্ঘ্যে প্রস্থে বড়ো হওয়ায় প্রতিটি পৃষ্ঠায় কুড়িটি করে লাইন ধরানো যেত কিন্তু এক্ষেত্রে তার থেকে অপেক্ষাকৃত কমসংখ্যক লাইন ধরবে। ফলে আগে যেখানে 20 টি পেপারে একটা মামলা গোটা নথি তৈরি হয়ে যেত, সেখানে এখন এ-ফোর সাইজের কাগজ ব্যবহার করে 30 টি কাগজ লাগবে বলে মনে করছেন আইনজীবীরা।
হাইকোর্ট ল-ক্লার্ক অ্যাসোসিয়েশনের তরফে ল-ক্লার্ক ব্রজগোপাল জানান, মামলার ড্রাফটিং থেকে ফাইলিং সবটাই করতে হয় তাদের, ল-ক্লার্কদেরকেই। আইনজীবিরা এটা করেন না। তাই তড়িঘড়ি এই পেপার বদলের সিদ্ধান্তে সব থেকে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন তাদেরকেই হতে হবে। কারণ একটা মামলার ফাইল হওয়া থেকে সমস্ত বিষয় তৈরি করতে কম পক্ষে ৩-৪ দিন সময় লাগে। মামলার সব নথি তৈরি হওয়ার পর সেগুলো বাতিল হলে আর্থিক ক্ষতি। এখনও পর্যন্ত দায়ের হওয়া মামলা যে গুলো এখনও শুনানির জন্য ওঠেনি সেই সব মামলার নথি সব বাতিল হয়ে যাবে। আবার নতুন করে মামলা ফাইল করতে হবে নতুন পেপারে। এছাড়াও মামলা দায়েরের সম্ভাবনাতেই অতিরিক্ত ড্যামি পেপারগুলো আগেই তাদেরকে তুলে রাখতে হয়। তাই সেই অবধি অতিরিক্ত সময় না দিলে তারা আন্দোলনে নামবে।
তবে হাইকোর্ট প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, এখনই বাতিল করা হচ্ছে না সবুজ ডেমি পেপার পরবর্তী বিজ্ঞপ্তি না জারি হওয়া পর্যন্ত সবুজ ড্যামি পেপার এবং সাদা এক্সিকিউটিভ পেপার দুটোই ব্যবহার করা যাবে। তবে সম্ভবত আগামী মাস থেকেই এই সবুজ ডেমি পেপার পুরোপুরি বাতিল হয়ে, পরিবর্তে সাদা রঙের এ ফোর পেপার চালু হবে।
এ প্রসঙ্গে হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল রাই চৌধুরী জানান, ডিজিটাল মাধ্যমের যুগে কাগজের ব্যবহার কমানোর জন্য ধীরে ধীরে এই পন্থা নেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও এই কাগজের স্থায়িত্ব বেশি দিন। হাইকোর্টের রেকর্ডে রাখারও সুবিধা রয়েছে। মামলার রেকর্ড ঠিক রাখতে ডিজিটালাইজেশনের জন্য এ ফোর সাইজের কাগজ সুবিধাজনক।
উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এবং হাইকোর্টের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকেই বাতিল হওয়ার কথা ছিল সবুজ ড্যামি পেপার। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতো গত ১৮ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের দেওয়া বিজ্ঞপ্তির প্রতিবাদে সোমবার দিনভর আন্দোলনের সামিল হাইকোর্টের ল ক্লার্করা। তবে আইনজীবী, ল-ক্লার্ক ও বিচারপ্রার্থীদের কথা ভেবে হাইকোর্ট প্রশাসনের তরফে এই মেয়াদ বাড়িয়ে আগামী মাস পর্যন্ত করা হয়। অর্থাৎ মার্চ শুরু থেকেই চালু হচ্ছে এ ফোর সাইজের নতুন এক্সিকিউটিভ পেপার। তার আগে পর্যন্ত সবুজ ডেমি পেপার এবং সাদা এক্সিকিউটিভ পেপার দুটোই ব্যবহার করা যাবে বলে জানানো হয়েছে হাইকোর্ট প্রশাসনের তরফে।