সারদা গ্লানি ঝেড়ে ফের রাজনীতির ছন্দে ফিরছেন মদন মিত্র, জোর জনসংযোগে
সারদা মামলায় অভিযুক্ত মদন মিত্রের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠতেই আবারও স্বমহিমায় ফেরার চেষ্টা করছেন তিনি। আবারও জনসংযোগ বাড়িয়ে নিতে রাজনীতির আবর্তে ঢুকে পড়েছেন প্রাক্তন এই মন্ত্রী।
কলকাতা, ১৬ ফেব্রুয়ারি : নিজের প্রভাবশালী তকমা ঝেড়ে ফেলতে এতদিন নিজেকে রাজনীতি থেকে শতযোজন দূরে রেখেছিলেন পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ তৃণমূলের এক সময়ের দুঁদে মন্ত্রী মদন মিত্র। সারদা মামলায় অভিযুক্ত মদন মিত্রের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠতেই আবারও স্বমহিমায় ফেরার চেষ্টা করছেন তিনি। আবারও জনসংযোগ বাড়িয়ে নিতে রাজনীতির আবর্তে ঢুকে পড়েছেন প্রাক্তন এই তৃণমূলী মন্ত্রী।
দীর্ঘ ২১ মাস জেলে থাকার পরে গত বছর সেপ্টেম্বরে জামিনে মুক্ত হয়েছেন মদন। এক রকম রাজনৈতিক সন্ন্যাসই বেছে নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু জামিনের পরেও তো পাঁচ মাস কাটতে চলল। ধীরে ধীরে ফের জন-সংযোগ ঝালিয়ে নিতে জনতার দরবারে ফিরতে দেখা যাচ্ছে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী মদন মিত্রকে। রাজনীতির ময়দানে মদনবাবুকে আবারও যে দেখা যাবে, সেই সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে ফের।
কখনও তিনি এলাকার মানুষের কাছ থেকে তাঁদের সমস্যার কথা শুনছেন, কখনও তাঁকে দেখা যাচ্ছে প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রীর মেজাজে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়য়ের ঘোষিত সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ' প্রকল্পের উদ্বোধনে। একটু একটু করে ফর্মে ফিরছেন তিনি।
গত বছর জেল থেকে প্রার্থী হয়ে সিপিএমের মানস মুখোপাধ্যায়ের কাছে খোয়াতে হয়েছে বিধানসভা কেন্দ্র কামারহাটি। কিন্তু পরাজিত মদন এখনও জনসংযোগে রীতিমতো টেক্কা দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন বিধায়ক মানস মুখোপাধ্যায়কে। সারদা-কাণ্ডে ২০১৪-র ডিসেম্বরে গ্রেফতার হয়েছিলেন মদন। শেষ পর্যন্ত গত সেপ্টেম্বরে জামিন পেলেও আদালতের নির্দেশ ছিল, মদন ভবানীপুর এলাকা ছেড়ে বেরোতে পারবেন না।
আদালতের সেই নিষেধাজ্ঞা এখন উঠে গিয়েছে। তাই মদনও এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সরস্বতী পুজোর দিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে গিয়ে টিএমসিপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় কাটিয়ে এসেছেন। তবে এখনও সরাসরি তৃণমূলের কোনও মূলধারা কর্মমূচিতে তাঁকে দেখা যায়নি।
প্রকাশ্য কর্মসূচিতে দেখা গেলেও মুখ খোলার ব্যাপারে বেশ সংযত প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী। প্রশ্ন করলে বলছেন, 'আমি তৃণমূলের সাধারণ কর্মী। দলের কথা মতো কাজ করছি।' যদিও কামারহাটিতে একেবারে বিধায়কের মতোই জনসংযোগ তৈরিতে সক্রিয় মদন। কখনও বিবেক মেলায় পিঠেপুলি উৎসবের উদ্বোধন করতে গিয়েছেন, কখনও আবার চিত্তরঞ্জন মাতৃসদনে সদ্যোজাতের বার্থ কিট তুলে দিতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
খাতায়-কলমে তিনি আর বিধায়ক নন ঠিকই, তবু তবে তাঁকে সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে কামারহাটি বিধানসভা এলাকাতেই। ওই এলাকার যে কোনও সমস্যায় পাশে থাকা'র আশ্বাস মিলছে তাঁর কাছ থেকে। তৃণমূল সূত্রের খবর, বেলঘরিয়া এলাকায় গিয়ে সম্প্রতি মদন জানিয়েছেন, সেখানকার মানুষের যা প্রয়োজন তাঁকে বলতে। তিনি চেষ্টা করবেন মানুষের পাশে থাকতে।
এ ব্যাপারে কী বলছেন বিধায়ক মানস মুখোপাধ্যায়? কামারহাটির বিধায়ক খনিক কটাক্ষের সুরে বলেন, 'হ্যাঁ, এখন তো জেল থেকে মুক্ত হয়ে উনি আবার আসছেন। পাঁচ বছর তো বহু উন্নয়ন করেছেন! কিন্তু কামারহাটির মানুষের পানীয় জল নিকাশির সমস্যা মেটেনি। আর কী বলব।'
মদনের হাত ধরে সম্প্রতি উত্তর ২৪ পরগণার সিপিএম নেতা নইম খান- সহ ৩৭৫ জন তৃণমূলে যোগ দেন। কামারহাটি পুরসভার সব কাউন্সিলরও এই অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন। রথতলা কামারহাটি মোড়ে দেশপ্রেমিক ক্লাব সংহতির পরিচালনায় অনুষ্ঠিত 'সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ' প্রকল্পের উদ্বোধক ছিলেন মদন মিত্র।