বিজেপির লালবাজার অভিযানে আসল কাঠিটা নাড়লেন মোদী! ব্যাকফুটে মমতা?
মমতা চেয়েছিলেন বুধবারই রাজ্যের দাবি আদায়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক সারতে। কিন্তু মোদী কি তাহলে পুলিশকে সংযত রাখতে সেই সুযোগ কাজে লাগানোর জন্যই একটা দিন পিছিয়ে দিলেন বৈঠক?
কলকাতায় বিজেপি-র লালবাজার অভিযানের দিনই দিল্লিতে মমতা-মোদী বৈঠক। রাজ্যের জন্য দাবি আদায়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে সুযোগ দিয়েই কি বিজেপির লালবাজার অভিযানে পুলিশকে নির্লিপ্ত থাকতে বাধ্য করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী?
বৃহস্পতিবার লালবাজার অভিযানে বিজেপি-র রণংদেহি মূর্তির পরও পুলিশের নিয়ন্ত্রিত প্রতিরোধ সেই জল্পনাই উসকে দিয়েছে। রাজ্যের স্বার্থে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকের সুফল লাভের জন্য তাহলে কি মমতার নির্দেশেই বিজেপি কর্মীদের শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধের রাস্তায় হেঁটেছে পুলিশ? নাহলে কীভাবে তিনদিনেই বদলে গেল পুলিশের রূপ? প্রশ্ন উঠছে রাজনৈতিক মহলে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হঠাৎ করেই তাঁর দিল্লি সফরে রাজ্যের জন্য দাবি আদায়ে নরেন্দ্র মোদীর সাক্ষাৎ প্রার্থী হতে চাইলেন। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের অনুমোদন মিলল ঠিকই, কিন্তু বৈঠক পিছিয়ে গেল একটা দিন। মমতা চেয়েছিলেন বুধবারই বৈঠক সারতে। কিন্তু মোদী কি তাহলে সেই সুযোগ কাজে লাগাতেই একটা দিন পিছিয়ে দিলেন বৈঠক? কলকাতায় লালবাজার অভিযান। সেদিনই দিল্লিতে সাক্ষাৎ। সংঘাতের পথে হাঁটলে সাক্ষাতে কোনও ফলই মিলবে না।
প্রধানমন্ত্রী এমনই চাল দিলেন, মুখ্যমন্ত্রী পড়ে গেলেন বিপাকে। তাই বিজেপির লালবাজার অভিযানের মোকাবিলায় সংঘাতের পথে না গিয়ে পুলিশকে নিয়ন্ত্রিত প্রতিরোধের পরামর্শ হয়তো দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীই। সেই কারণেই যে পুলিশ তিনদিন আগে বামকর্মীদের বেমালুম পিটিয়েছিল, সেই পুলিশই নখদন্তহীন হয়ে গেল এদিন। ফোঁস করেই থেমে গেল মমতার পুলিশ। ছোবল বসাতে পারল কই!
সেদিন বামেদের নবান্ন অভিযানে আপাত শান্ত ছিলেন বামকর্মীরা। পুলিশ আক্রমাণাত্মক হয়ে বেধড়ক পিটিয়েছিলেন বামেদের। একেবারে মারকুটে বাহিনীর ভূমিকায় সেদিন দেখা গিয়েছিল পুলিশকে। আর বৃহস্পতিবার শহর দেখল পুলিশের নির্লিপ্ত রূপ। একেবারে উল্টো ছবি এদিন। তুলনায় অনেক বেশি রণংদেহী মুর্তিতে ছিলেন বিজেপি কর্মীরা। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি তো ছিলই, পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা ছুড়তেও পিছপা হননি তারা। তবু পুলিশের নিয়ন্ত্রিত আচরণ? কেন?
এদিন ব্র্যাবোর্ন রোডে বিজেপি-র মিছিল আটকানোর পরই ধুন্ধুমার কাণ্ড ঘটে যায়। পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে দেয় বিজেপি কর্মীরা। খণ্ডযুদ্ধ বেধে যায় পুলিশ ও বিজেপি কর্মীদের মধ্যে। পুলিশকে লক্ষ্য করে বোতল ছোঁড়া হয়। ইটবৃষ্টি করা হয়। ইট-বোতলের মধ্যেই উড়ে আসে বোমাও। পুলিশ পাল্টা প্রতিরোধ করতে লাঠিচার্জ করে। কিন্তু সেই লাঠির আঘাতে আগের দিনের মতো তেজ নেই। বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিটে পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগানো হয়। মোট ৫টি গাড়ি ভাঙচুর হয়। গাড়িটি আর্মহার্স্ট থানার অতিরিক্ত ওসির গাড়ি ছিল বলে জানা গিয়েছে।
ফিয়ার্স লেনেও একইরকম উত্তেজনা তৈরি হয়। পুলিশকে সর্বত্রই নিয়ন্ত্রিত হয়ে প্রতিরোধ করতে দেখা যায়। এমনকী বিজেপি-র কর্মী সমর্থকদের নিয়ে একটি বাস লালবাজারের কাছাকাছি চলে আসে। লালবাজার-বিবি গাঙ্গুলি সংযোগস্থলে সেই বাসটিকে আটক করা হয়। গ্রেফতার করা হয় নদিয়ার হরিণঘাটা থেকে আগত কর্মী সমর্থকদের। এদিকে কলেজ স্কোয়ারে মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন কৈলাশ বিজয়বর্গীয়। তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এছাড়াও দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিনহা, জয়প্রকাশ মজুমদার, রূপা গঙ্গোপাধ্যায় ও লকেট চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে পুলিশ ।
ব্র্যাবোর্ন রোডে মিছিল আটকানোর পর পুলিশের প্রতিরোধের মুখে অসুস্থ হয়ে পড়েন বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়। পুলিশ এদিন অনেক নিয়ন্ত্রিত ভূমিকা পালন করেছে। আরও নজরদারি বাড়িয়েছে। টিয়ার গ্যাস, জলকামান, র্যাফ কমব্যাট ফোর্স তো ছিলই, সিসিটিভি নদরদারির পাশাপাশি ড্রোনেও নজরদারি চালানো হয়েছে।