সারা জীবন এক টাকায় চিকিৎসা করে নিজের চিকিৎসায় জালিয়াতির শিকার ডাক্তারবাবু, পুলিশের চেষ্টায় উদ্ধার টাকা
সারা জীবন এক টাকায় চিকিৎসা করে নিজের চিকিৎসায় জালিয়াতির শিকার ডাক্তারবাবু, পুলিশের চেষ্টায় উদ্ধার টাকা
এক টাকার ডাক্তার। এই নামেই বোলপুর শহরে বিখ্যাত ছিলেন পদ্মশ্রী ডাঃ সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি দরিদ্র রোগীদের সেবায় নিজের জীবন উজাড় করে দিয়েছিলেন। এই রোগীদের জন্য তাঁর ফি ছিল মাত্র এক টাকা। দেবতাজ্ঞানে পূজিত ডাঃ বন্দ্যোপাধ্যায় গত ২৬ জুলাই কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে ৮৪ বছর বয়সে কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর জীবনের শেষ সময়ে যে বড় জালিয়াতির শিকার হন।
জুলাই মাসে বাবার অবস্থার অবনতি বুঝে তাঁর জন্য একটি হিমো-ডায়ালিসিস মেশিন কেনার চেষ্টা করছিলেন ডাক্তারবাবুর কন্যা ডাঃ মন্দিরা ব্যানার্জি। অনলাইন সার্চ করে 'রাধে কিডনি ইকুইপমেন্ট' নামক এক সরবরাহকারীকে খুঁজে বের করেন তিনি, ঠিকানা আহমেদাবাদ, গুজরাত। বেশ কয়েক দফা কথোপকথনের পর ১৩ জুলাই থেকে শুরু করে তাঁর নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে বিক্রেতার অ্যাকাউন্টে মোট ৪ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা কয়েক কিস্তিতে জমা করেন ডাঃ ব্যানার্জি।
মেশিন ডেলিভারি হওয়ার কথা ২২ জুলাই, কিন্তু সেদিন ফোনে আর কিছুতেই বিক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন না ডাঃ ব্যানার্জি, কারণ ফোন ক্রমাগত সুইচড অফ। যে 'ইনভয়েস' অর্থাৎ চালানের ভিত্তিতে তিনি টাকা দিয়েছিলেন, সেখানে যে ফোন নম্বর দেওয়া ছিল, তাতে ফোন করে জানতে পারেন, নম্বরটি এক সম্পূর্ণ অপরিচিত ভদ্রমহিলার, যা অবৈধভাবে ব্যবহার করছে বিক্রেতা, এবং ডাঃ ব্যানার্জির মতো আরও অসংখ্য প্রতারিত গ্রাহকের ফোনে জর্জরিত হয়ে চলেছেন তিনি। এবারে ডাঃ ব্যানার্জি নিঃসন্দেহে বোঝেন, ঠকে গিয়েছেন মারাত্মক রকম।
এরপর মাণিকতলা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ডাঃ ব্যানার্জি, যেখান থেকে তা চালান যায় ইস্ট সাবার্বান ডিভিশনের সাইবার শাখার কাছে। সঙ্গে সঙ্গেই যেসব ব্যাঙ্কে টাকা জমা পড়েছিল, সেগুলির নোডাল অফিসারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সাইবার শাখা, এবং বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্ট খতিয়ে দেখা যায়, সেইসব অ্যাকাউন্ট থেকে ততক্ষণে পাচার হয়ে গিয়েছে টাকা, দ্বিতীয়বার জমা পড়েছে অন্যান্য আরও কিছু অ্যাকাউন্টে। এই শেষোক্ত অ্যাকাউন্টগুলির মালিকানা নির্ধারণ করার কাজ শুরু করে সাইবার শাখা, এবং KYC নথিপত্র ও অন্যান্য দলিল থেকে তথ্য সংগ্রহ করে সেগুলি 'ফ্রিজ' অর্থাৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তাদের অ্যাকাউন্ট কেন ফ্রিজ করা হয়েছে জানতে সাইবার শাখার সঙ্গে যোগাযোগ করে দুটি সংস্থা। প্রথম অ্যাকাউন্টের মালিক একটি গাড়ির শোরুম, যেখান থেকে চোরাই টাকা দিয়ে কেনা হয় একটি দু-চাকার গাড়ি। দ্বিতীয় অ্যাকাউন্টের মালিক জানান, ডায়ালিসিস মেশিনের ভাড়া বাবদ অ্যাকাউন্টে ১৪ হাজার টাকা জমা করেন এক গ্রাহক।
দুই ক্ষেত্রেই গ্রাহকের নামধাম ও অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করতে ব্যাঙ্কের কাছ থেকে নেওয়া KYC দলিল ঘেঁটে পাওয়া যায় তিনটি নাম - মিলন মানসুখভাই ভদোদরিয়া, কৃত্তিকা রবীন্দ্র কুমার, এবং রবীন্দ্র কুমার সুতার। তিনজনেই আহমেদাবাদের বাসিন্দা।
ইস্ট সাবার্বান ডিভিশনের মনিটরিং সেল-এর সাহায্যে প্রযুক্তিগত তথ্য ও অন্যান্য খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ করে তিন অভিযুক্তের অবস্থান নিশ্চিত করার পরএফআইআর দায়ের করে মাণিকতলা থানা, যার ভিত্তিতে আহমেদাবাদের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় থানার একটি দল। শেষ পর্যন্ত স্থানীয় পুলিশ ও অন্যান্য সূত্রের সহায়তায় ১ অগাস্ট ভদোদরিয়া ও সুতারকে গ্রেফতার করে কলকাতায় নিয়ে আসেন মাণিকতলা থানার আধিকারিকরা, এবং সাইবার শাখার সাহায্যে উদ্ধার করা হয় পুরো টাকাটাই।
গত ৮ অগাস্ট ই-মেইল মারফত ডাঃ মন্দিরা ব্যানার্জি মামলার বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে আমাদের জানান, পুলিশের উপস্থিতিতে তাঁকে খোয়া যাওয়া টাকার সবটাই ফেরত দিয়েছে অভিযুক্তরা, এবং এটি ঘটেছে তাঁর অভিযোগ দায়ের করার ১০ দিনের মধ্যে। কলকাতা পুলিশকে এই দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য কৃতজ্ঞতা জানানো ছাড়াও বিশেষভাবে ইনস্পেকটর মৃণালকান্তি মুখার্জি (ওসি মাণিকতলা থানা), সাব-ইনস্পেকটর রাজেশ মোদক (মামলার তদন্তকারী অফিসার), সাব-ইনস্পেকটর মহঃ আসরিফ রেজা দুই সার্জেন্ট ব্রজেন সরকার ও প্রসেনজিৎ শিকদার (ইএসডি সাইবার শাখা), এবং সার্জেন্ট অলোক ঘোষকে (মাণিকতলা থানা) বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ডাঃ ব্যানার্জি।
বিজেপি নতুন সেনাপতি বেছে নিল ত্রিপুরায়, ২৩-এর ভোটের আগে কোন্দল রোখাই চ্যালেঞ্জ