শান্তিপুরের রাস যাত্রা এবার বরানগরে, কৃষ্ণপ্রেমে মেতেছে নগরী
শান্তিপুরের রাস যাত্রা এবার বরানগরে, কৃষ্ণপ্রেমে মেতেছে নগরী
বরানগর জগন্নাথ মন্দিরের উদ্যোগে ৯'দিনব্যাপী বরানগর রাস যাত্রা উৎসবের (২০২২) আয়োজন করা হয়েছে আজ তার দ্বিতীয়তম দিন। পরিচালনায় বান্ধব ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন।
বরানগর রাস যাত্রা উৎসবের শুভ সূচনা করলেন আদ্যাপীঠ মন্দিরের মহারাজ ব্রহ্মচারী মুরাল ভাই। উক্ত এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আমাদের অভিভাবক দমদম লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ অধ্যাপক শিক্ষাবিদ মাননীয় শ্রীযুক্ত সৌগত রায় মহাশয়।
উক্ত এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিধানসভার বিধায়ক পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উপ মুখ্য সচেতক মাননীয় শ্রীযুক্ত তাপস রায় মহাশয। উক্ত এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বরানগর পৌরসভার পৌর প্রধানা মাননীয় শ্রীমতি অপর্ণা মৌলিক মহাশয়া।
উক্ত এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বরানগর থানার ভারপ্রাপ্ত শিকারি মাননীয় শ্রীযুক্ত দেবাশীষ পাহাড়ি মহাশয়। উক্ত এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বরানগর পৌরসভার ( CIC ) সদস্য বৃন্দ গণ এবং বরানগর পৌরসভার পৌর পিতা ও পৌর মাতা গন। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন সমাজের অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ গন।
পৃথিবীর সকল স্তরের মানুষের মধ্যে ভালোবাসা বিতরণের এই কর্মকাণ্ড কীভাবে ধীরে ধীরে ধর্মীয় ব্যঞ্জনার উৎসবে পরিণত হল, তা আমরা জানিনা। তবে আরাধনার মত্ততা থেকে নিজেদের বিযুক্ত করে, অন্তরআত্মার শুদ্ধিকরণের চেষ্টা করি প্রতিবারই।তেমনই একটি দিন হল রাস। কার্তিক পূর্ণিমা তিথিতে সূচনা হয় এই উৎসবের।
মূলত বৈষ্ণবীয় ভাবধারায় গড়ে উঠলেও, রাধাকৃষ্ণের এই মিলোনোৎসব বাংলার এক এক স্থানে, এক এক মতে পালন করা হয়। এই মতবিরোধ আমাদের মধ্যে যতটা না তাত্ত্বিক ভাবধারাকে ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করে, তার চেয়ে বেশী তৈরী করে ধর্মীয় দ্যোতনা, যার ফলে উৎসবের ক্ষেত্রগুলো ছোট হয়ে আসে, প্রাধান্য পায় নিজস্বতা।
ষোড়শ শতাব্দীর প্রারম্ভে নবদ্বীপে সূচনা হয় এই উৎসবের। এখানে রাধাকৃষ্ণের সঙ্গে মৃন্ময়ী মূর্তির নানা রূপকে পূজিত হতে দেখি আমরা। সমগ্র নবদ্বীপ জুড়ে এই সমস্ত পুজোতেই শাক্ত রীতির পূর্ণ প্রতিফলন দেখা যায়।
অন্যদিকে, নদীয়ার শান্তিপুরের রাস মূলত শ্রী শ্রীঅদ্বৈতাচার্যের বৈষ্ণব রীতির মূল ভাবধারায় গড়ে উঠলেও, এখানে বৈষ্ণব ও শাক্ত এই দুয়ের মিলনেই, রাসের প্রেমসাধনার ভক্তি আর লীলার দুই ভাব, একসূত্রে মিলিত হতে দেখা গেছে। যার ফলে তিনদিন ব্যাপী এই উৎসবে এখানে বিগ্রহ বাড়ি এবং বারোয়ারি পুজোগুলির মধ্যে এই দুই রীতিরই প্রকাশ দেখতে পাই আমরা। এর পাশাপশি কোচবিহারের মদনমোহনতলার রাস উৎসব এবং মণিপুরের রাস উৎসবও পরিচিত সকলের কাছেই।
অন্যান্য সব উৎসবের মতই রাসও কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণে বিভিন্ন প্রাচীন মন্দিরে পালিত হতে দেখা যায়। এর মধ্যে চেতলার টালিগঞ্জ রোডের বড় রাসবাড়ির উৎসব বহুলভাবে জনপ্রিয় সকলের কাছেই। এই রাসবাড়ি প্রতিষ্ঠা করেন বজবজের বাওয়ালির মন্ডল পরিবার। বড় রাসবাড়ির নিকটস্থ অঞ্চলেই অবস্থিত ছোট রাসবাড়ি, এখানে অবশ্য চৈত্রমাসের পূর্ণিমায় রাসের উৎসব পালন করা হয়। এছাড়া গঙ্গার ওপারে বেলুড়ে পূর্ণচন্দ্র দাঁর ঠাকুরবাড়িতে শ্রীশ্রী৺ রাধারমন জীউর উৎসবও প্রতি বছর মহাসমারোহে পালিত হয়।
রাসের উৎসব মূলত প্রতিষ্ঠিত বিগ্রহের উপাসনা তাই এখানে বিসর্জনের কোন রীতি না থাকলেও, প্রাচীন বিগ্রহ পরিবারগুলির ভাঙ্গারাসের আলোকপূর্ন শোভাযাত্রা রাসলীলার মাহাত্ম্যকে এক ভিন্ন মাত্রা এনে দেয়। তাই লৌকিক আর পৌরাণিক প্রেক্ষাপটের সংমিশ্রণে, রাস উৎসব চৈতন্যদেবের ভাবধারাকে জনমানবের প্রেম সংকীর্তনের মাধ্যমে এভাবেই পূর্ণতা দিয়ে চলেছে।
হারিয়েছে উৎসব, জীর্ন অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে দুই মন্দির