আন্ত্রিক ‘মহামারী’র রূপ নিচ্ছে দক্ষিণ শহরতলিতে, জল-আতঙ্ক কাটাতে হিমশিম পুরসভা
কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের উল্টো পথে হেঁটে স্বাস্থ্য অধিকর্তা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন জল থেকেই আন্ত্রিকের প্রকোপ বাড়ছে কলকাতা পুর এলাকায়।
তিনদিন কেটে গেলেও নিয়ন্ত্রণে আসা তো দূরঅস্ত, উল্টে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আন্ত্রিকের প্রকোপ। নতুন করে আন্ত্রিকে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।পুরসভা তা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ বলে অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা। এই অবস্থায় কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের উল্টো পথে হেঁটে স্বাস্থ্য অধিকর্তা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন জল থেকেই এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। এদিন আবার নতুন উপদ্রবের হদিশ মিলেছে। পানীয় জলের পাইল লাইনে মিলেছে পোকা। তবে পুরসভা আশাবাদী, দু-তিনদিনের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।
[আরও পড়ুন: মা এখন সৎ মা! ভারতী ঘোষ কি বিজেপিতে স্বাগত, কী বলছেন দিলীপ ঘোষ, দেখুন ভিডিও]
বিশেষ করে কলকাতা পুরসভার দক্ষিণ কলকাতা শহরতলির বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ছে। রুবির পর থেকেই দক্ষিণ কলকাতার বাঘাযতীন, বৈষ্ণবঘাটা, যাদবপুর, পাটুলি, রামগড় প্রভৃতি এলাকায় ডায়রিয়া আক্রান্ত ঘরে ঘরে। একই পরিবারের প্রায় সবাই অসুস্থ। হাসপাতালের নথিই বলছে, নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন অনেকে।
নতুন করে আক্রান্তদের মধ্যে বেলেঘাটা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ২২ জন, বাঘাযতীন হাসপাতালে ১০০ জন এবং বিজয়গড় হাসপাতালেও ভর্তি হয়েছেন অনেকে। পেটের যন্ত্রণা, বমি আর পায়খানার সমস্যা নিয়ে তাঁরা ভর্তি হন। এই আন্ত্রিকের প্রকোপ পানীয় জল থেকেই হচ্ছে বলে নমুনায় প্রমাণ মিলেছে। সোমবার রাত থেকেই ১২২ জন আক্রান্তের খবর মিলেছে।
এদিকে বেড না থাকায় হাসপাতালে দুর্গতির শিকার হচ্ছেন অনেকে। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন হাসপাতাল ও গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীদের এনে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এদিকে আতঙ্ক ও উদ্বেগ বাড়ছে পানীয় জল নিয়ে। কলকাতা পুরসভার সরবরাহ করা জল কেউ-ই খেতে চাইছেন না। চিকিৎসকরাও পরামর্শ দিচ্ছেন- ওই জল না খেতে। তার উপর জলের পাইপ লাইনে মিলেছে পোকা।
এমনকী জল না খেলেও, ওই জলে বাসনপত্র ধুলেও তা থেকে সংক্রমণ হচ্ছে। ফলে মিনারেল ওয়াটার দিয়েই আপাতত থালা-বাসন মাজতে পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। বাড়িতে যদি আরও থাকে, সেই জল একমাত্র খাওয়া যেতে পারে, সাধারণ পিউরিফায়েড ওয়াটারও খেতে নিষেধ করছেন চিকিৎসকরা। আপাতত মিনারেল ওয়াটারের উপরই ভরসা রাখছেন স্থানীয়রা। কিন্তু এই অবস্থায় মিনারেল ওয়াটারও বিকোচ্ছে চড়াদামে।
কলকাতা পুরসভা ১০১ থেকে ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডেই এই আন্ত্রিকের প্রকোপ বেশি। ৯২ নম্বর ওয়ার্ডেও কিছু মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। তিনদিনে আক্রান্তের সংখ্যা ছড়িয়েছে হাজার। এখনও পুরসভা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। ২-৩ দিনের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে। কলকাতা পুরসভার পরিকাঠামোয় যে বিস্তর গলদ রয়েছে, এই আন্ত্রিকের প্রকোপে তা ফের প্রমাণিত। তবে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কলকাতা পুরসভা এই সমস্যার মোকাবিলা করতে নেমে পড়েছে আসরে।