শুরু হয় বিশ্বযুদ্ধ, এমন সময়েই ব্যাবসাকে অন্য রূপ দিলেন এক বাঙালি
শুরু হয় বিশ্বযুদ্ধ, এমন সময়েই ব্যাবসাকে অন্য রূপ দিলেন এক বাঙালি
তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। কলকাতার হাওড়ার হাটে দুলালদের কাপড়ের রমরমা ব্যবসা। দাদা, বাপ-চাচারা শ্বাস ফেলার সময় পাচ্ছেন না। নবীন দুলালচন্দ্রের মন গেল নতুন পথে। ধবধবে সাদা মিছরির দিকে। এর চাহিদা তখন তুঙ্গে। তবে অল্প দিনেই সাদা মিছরি ছেড়ে ধরলেন লালচে তালমিছরির কারবার। সাহস আর উৎসাহ জোগালেন দাদামশাই জওহরলাল ভড়।
দু-একজন খুদে ব্যবসায়ী আগে থেকেই ছিলেন এই ব্যবসায়। কিন্তু দুলালচন্দ্র নিয়োগ করলেন সর্বশক্তি। কাপড়ের ব্যবসায়ের দীর্ঘ দিনের সুনাম আর প্রতিপত্তিও কাজ দিল। দারুণ ফলও পেলেন হাতে হাতে। অন্যদের উঠে যেতে হলো অল্প দিনেই। আর দুলালচন্দ্র পেলেন একচেটিয়া বাজার।
নতুন এই ব্যবসায় প্রতিষ্ঠা লাভের জন্য দুলালচন্দ্রের একাগ্রতার কমতি ছিল না। অল্প দিনের মধ্যে তিনি তালমিছরির উৎপাদন আর বিপণন ব্যবস্থাকে নিয়ে গেলেন অন্য উচ্চতায়। গুণগত মানের কারণে হু হু করে বাড়ছিল বাজার। তখনকার দিনে কোনো ব্যবসাতেই ট্রেডমার্ক বা প্যাটেন্টের চল ছিল না। কিন্তু দুলালচন্দ্র ব্যবসাটাকে একান্তই নিজের করার জন্য শুরু করলেন চেষ্টা। অবশেষে ইংরেজ কর্তৃপক্ষের আস্থা অর্জন করেই বের করলেন রেজিস্ট্রেশন নম্বর৩৯৬৫। সেই থেকে আজও প্লাস্টিকের বোতলের গায়ে লেবেলে যুক্ত থাকে এই নম্বর। যদিও এখন আর এই নম্বর দরকার হয় না। তবু বাবার ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন ছেলে ধনঞ্জয় ভড়।
স্বনামধন্য এই তালমিছরির প্রকৃত রহস্য কী? আসলে দ্রব্যগুণ! তালের খাঁটি রস আর সামান্য চিনি ছাড়া তো তেমন কিছু থাকে না। ধনঞ্জয়বাবুর সরল জবাব। তাল-গুড় জ্বাল দিতে হয় একটা নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত। তালমিছরির এই পর্বটাই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। জ্বাল শেষে ফুটন্ত গুড় ঢালা হয় ট্রে বা পাত্রে। তারপর বিশেষ চট দিয়ে ঢেকে দিয়ে পাত্রগুলো একটা বন্ধ ঘরে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রেখে দিতে হয়।
সাত-আট দিন পর পাত্রের ওপর ও নিচের অংশ শুকিয়ে দানা শক্ত হয়ে মিছরিতে পরিণত হতে থাকে। তখন মাঝখানে জমে থাকা জলীয় অংশ বিশেষ পদ্ধতিতে বের করে নেওয়া হয়। চৈত্রের মাঝামাঝি থেকে শ্রাবণের প্রথম ভাগ মোট চার মাস মিছরির মৌসুম। তমলুকের খাঁটি গুড় আর বংশপরম্পরায় যুক্ত অভিজ্ঞ কারিগরের কারণে আট দশকে এতটুকুও টলেনি তালমিছরির ব্যবসাবলেছেন ধনঞ্জয় ভড়। ঝড় গেছে কিছু। তবে তেমন বেশি কিছু নয়। পারিবারিক বিবাদে জড়িয়েছে ভড়েরা। আদালত পর্যন্তও গড়িয়েছে। সেটা দুলালচন্দ্র বেঁচে থাকতেই ১৯৮০ সালে। ভাই সনাতনের সঙ্গে বিবাদ। উল্লেখ্য দুলালচন্দ্র পরলোকে গেছেন ২০০০ সালে।