সরকারি সাহায্য নেই! তবে পুজোর ক'দিন জমিয়ে রাখেন এই ঢাকিরাই
যাঁদের ছাড়া পুজো একেবারেই সম্পূর্ণতা পাবে না, সেই ঢাকি কোথায়? পুজো তখনই সম্পূর্ণতা পাবে যখন ঢাকে কাঠি পড়বে।
শরতের নীল আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে পেঁজা তুলোর রঙের মেঘ, কাশ বনে ফুটেছে কাশফুল, পটুয়া পাড়ার প্রতিমায় পরেছে মাটির প্রলেপ, মন্ডপে মন্ডপে চলছে আগমনী বার্তা। এবার উমা পাড়ি দিচ্ছে নৌকায় চেপে। সব কিছুই তো হল কিন্তু যাঁদের ছাড়া পুজো একেবারেই সম্পূর্ণতা পাবে না, সেই ঢাকি কোথায়? পুজো তখনই সম্পূর্ণতা পাবে যখন ঢাকে কাঠি পড়বে।
এবার সব কিছুর সঙ্গে ঢাকিপাড়াতেও মহড়াও শুরু হয়েছে। বাংলার বিভিন্ন জেলার ঢাকিপাড়ায় ঢাকিরা তুলেছে তাদের ঢাকের বোল। কেউ বা যাচ্ছেন দিল্লি কেউ বা যাচ্ছেন মুম্বই, কেউ বা যাচ্ছেন গুয়াহাটির দুর্গা মন্ডপে মায়ের আরাধনায় ঢাক বাজাতে।
প্রতি বছরই বাংলা তথা এই রাজ্য থেকে ৫০০০ জনের বেশি ঢাকি পাড়ি দেয় ভিন রাজ্যে। বিদেশের পুজো মণ্ডপগুলোতেও যোগ দেন অনেকে। ঢাকের বোল তুলে মানুষের মনে আনন্দ দান করলেও সারাবছর নিজেরা থাকেন নিরানন্দে। পুজোর সময় দুটো পয়সা উপার্জন করলেও বছরের বাকি সময়গুলোয় তারা থাকেন চরম অর্থকষ্টে।
পুজোর চারটে দিন ঢাকের বোল তুলে যাঁরা মনে আনন্দের ঢেউ তুলবেন আট থেকে আশি সকলের, আর তাঁদের পরিবারের ছেলেমেয়েরা তাকিয়ে থাকবে তাদের ফিরে আসার পথ চেয়ে। পুজো শেষ হওয়ার পরেই হোক না কেন কিছু টাকা রোজগার করে ক'দিন তো পেটপুরে খেতে পারবে পরিবার।
[আরও পড়ুন:ভবানীপুর দুর্গোৎসব সমিতির থিম এবার 'কিশোর কুমার']
পুজোর ক'টা দিন কাঁধে ঢাক নিয়ে মন্ডপে মায়ের আরাধনায় ঢাক বাজিয়ে পুজোর সম্পূর্ণতা ফুটিয়ে তোলা ঢাকিরা সারা কেউ ভ্যান রিকশা চালান। কেউবা জোগাড়ের কাজ করেন। রতন বৈশ্য, সনাতন বৈশ্যদের মতো ঢাকিরা পুজোর সময়েই দুটি পয়সা রোজগার করেন। তাও চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। বাকী সময় চরম আর্থিক অনটনে দিন গুজরান হয় তাদের।
[আরও পড়ুন:বৃক্ষরোপন নিয়ে বার্তা! পল্লীমঙ্গলের এবারের থিম 'অক্সিজেন']
তাঁদের অভিযোগ, রাজ্য সরকার অন্যান্য বাদ্যকরদের শিল্পী ভাতা প্রদান করছেন। তারা ঢাক বাজান, তারাও শিল্পী অথচ সরকার আজও তাদের শিল্পীর মর্যাদা দেননি। স্থানীয় পঞ্চায়েত থেকে জেলা প্রশাসন সকলের কাছেই দরবার করেছেন তাদের শিল্পী কার্ড করে ভাতা প্রদানের ব্যাবস্থা করার জন্য। কিন্তু কেউই ফিরে তাকাননি তাঁদের দিকে।
[আরও পড়ুন:টাকি জমিদার বাড়ির পুজো! সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য ৩০০ বছরের বেশি সময় ধরে]
আরও অভিযোগ, ভোটের ঢাকে কাঠি পড়লেই এই ঢাকি পাড়ায় তখন আসেন অনেকেই। হাজারও আশ্বাসের বানী শুনে রাজনৈতিক নেতারা ভোট নিয়ে চলে যান। এভাবেই দিন যায়। ঢাকিরা সেই দুর্দশার মধ্যেই দিন কাটান।