পুজোর ক'টা দিন কলকাতার বাদামতলা আষাঢ় সংঘে ঘাঁটি গাড়ছে নাবিক কলম্বাসের দেশ
এবারও চমক দিতে তৈরি বাদামতলা আষাঢ় সংঘ। মার্কিন মুলুকের পুজোকে এবার থিম করেছে এই পুজো মণ্ডপ
রাসবিহারী মোড়ের অদূরে এখন জোর ব্যস্ততা। দিন-নেই রাত নেই সমানে ডেকরেটারের লোকেদের খট-খটানি। এরই মধ্যে কাউকে দেখা যাচ্ছে এখানে ওখানে প্লাস্টার অফ প্যারিসের উপরে রঙের প্রলেপ দিতে। আসলে দুর্গাপুজোর এই সময়টা মানেই বাদামতলা আষাঢ় সংঘের সদস্যদের মধ্যে সাজো সাজো রব। আর হবে নাই বা কেন কারণ মণ্ডপ সজ্জা এবং প্রতিমার বৈচিত্র্যে বরাবরই কলকাতাবাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়ে আসছে এই দুর্গাপুজো কমিটি।
[আরও পড়ুন:প্রতিমার পাশে পার্বতীর দুই সহচরীর মূর্তি, এখনও আকর্ষণীয় ছাতুবাবু-লাটুবাবুর বাড়ির পুজো]
আর এবারের দুর্গাপুজোয় যা হচ্ছে তাতে তো একে দক্ষ-যজ্ঞ বললে অত্যুক্তি হয় না। কারণ, এবার বাদামতলা আষাঢ় সংঘের মণ্ডপে দেখা মিলতে চলেছে নাবিক কলম্বাসের দেশ আমেরিকার। বিষয়-ভাবনা এবং প্রতিমায় চমক দেওয়াটাই ট্রেন্ড বাদামতলা আষাঢ় সংঘের। একবার পুজো মণ্ডপের লাগোয়া সমস্ত বাড়িকে রঙে রাঙিয়ে দিয়েছিল তারা। কীভাবে একটি পাড়া দুর্গাপুজোর মেতে ওঠে তার ছবি সেবার তুলে ধরেছিল এই পুজো কমিটি।
পুজো প্রস্তুতি নিয়ে কথা হচ্ছিল ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সন্দীপ চক্রবর্তীর সঙ্গে। তিনি জানালেন, 'থিমের স্বকীয়তা এবং বৈচিত্রই বাদামতলা আষাঢ় সংঘের ইউএসপি। এই দিকটাতে জোর দিয়েই আমরা প্রতি পুজোতে দর্শনার্থীদের সামনে নতুন কিছু জিনিস তুলে ধরি। এবারও তার অন্যথা হচ্ছে না। স্বকীয়তা ও বিষয় ভাবনায় তাই এবার মণ্ডপে উঠে আসছে মার্কিন মূলুক। সাত সমুদ্র-তেরো নদীর পারের দেশ আমেরিকায় থাকা বাঙালিরা কীভাবে দুর্গাপুজো পালন করে, সেটা এবার তুলে ধরছে বাদামতলা আষাঢ় সংঘ।'
বাদামতলা আষাঢ় সংঘের পুজো-ভাবনা অনুপ্রাণিত হয়েছে খোদ ট্রাম্প সরকারের বিদেশ দফতর। তাই, কলকাতার মার্কিন কনস্যুলেটও এবার অংশ নিয়েছে বাদামতলা আষাঢ় সংঘের দুর্গাপুজোতে। এর জন্য ক্লাব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে গাঁটছাড়াও বেঁধেছে মার্কিন কনস্যুলেট। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে বাদামতলা আষাঢ় সংঘের পুজো দেখতে এবার আসতে চলেছে একদল মার্কিনি পর্যটক। যাঁদের আনার বন্দোবস্ত করছে খোদ ক্লাব কর্তৃপক্ষ। এইসব মার্কিনি পর্যটকদের জন্য থাকবে বিভিন্ন ধরনের বাংলা লোক সংস্কৃতির আয়োজন। তবে, বাদামতলা আষাঢ় সংঘের সাধারণ সম্পাদক সন্দীপ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, এই নিয়ে কিছু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া বাকি আছে। কিন্তু, পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে তা অসাধারণ হবে বলেই মনে করেন তিনি।
বাদামতলা আষাঢ় সংঘের পুজোর আবহের একটা বড় অংশ জুড়ে থাকে আলো। এবারও তার অন্যথা হচ্ছে না। মার্কিনি মুলুকের পুজোর কোলাজকে ফুঁটিয়ে তুলতে আলোর একটা বড় ভূমিকা থাকছে। মার্কিনি মুলুকের পুজোর কোলাজ মানে যে প্রতিমার বাঙালিয়ানাকে বাদ দেওয়া হচ্ছে না। প্রতিমার মুখ থেকে সজ্জায় থাকবে চিরাচরিত বাঙালি ঘরানার প্রলেপ।
বাদামতলা আষাঢ় সংঘের পুজো যারা দেখতে চান, তাঁদেরকে কোনওভাবে পৌঁছতে হবে দক্ষিণ কলকাতার রাসবিহারী মোড়ে। সেখান থেকে কয়েক কদম হাঁটলেই পৌঁছে যাওয়া যাবে এই পুজো মণ্ডপে। তবে খেয়াল রাখবেন পুজোর দিনগুলোতে রাসবিহারী মোড় থেকে পুজো মণ্ডপে বহু সময়ই ভিড়ে চিড়ে-চ্যাপ্টা হয়ে যেতে হয়। সেই কারণে আগেভাগে সুবিধামতো সময় বের করে চলে যেতে পারেন বাদামতলা আষাঢ় সংঘের পুজো মণ্ডপে। নচেৎ পুজোর দিনগুলিতে গভীর-রাতে একবার ঢু মেরে দেখতে পারেন।