নিরঞ্জন-মামলায় রায়দানের আগে রাজ্যকে ভর্ৎসনা! কী বললেন প্রধান বিচারপতি
একাদশীর দিন মহরম। সেই কারণেই একাদশীর দিন বিসর্জন বন্ধ থাকবে। দশমীর দিন সন্ধ্যা ছ’টা পর্যন্ত নিরঞ্জন করা যাবে। মুখ্যমন্ত্রীর এই নির্দেশিকার পরই নিরঞ্জন বিতর্ক আদালতে গড়ায়।
নিরঞ্জন-নির্দেশিকা নিয়ে রাজ্য সরকারকে ভর্ৎসনা করল কলকাতা হাইকোর্ট। সেইসঙ্গে প্রধান বিচারপতি জানান, বৃহস্পতিবার দুর্গা প্রতিমা নিরঞ্জন মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। বুধবার আদালত জানায়, কোনও ধারণার উপর ভিত্তি করে রাজ্য সরকার বিজ্ঞপ্তি জারি করতে পারে না। রাজ্য সরকার দাবি করছে, রাজ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রয়েছে। তাহলে কেন একসঙ্গে দুই সম্প্রদায় উৎসব পালন করতে পারবে না, প্রশ্ন তুলে দিল হাইকোর্টের।
এদিন রাজ্যকে তীব্র ভর্ৎসনা করে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি রাকেশ তিওয়ারি ও বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডনের ডিভিশন বেঞ্চ জানতে চায় রাজ্যে সরকার কীসের ভিত্তিতে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে? রাজ্যের আইনজীবীর সওয়াল জবাবের পর প্রধান বিচারপতি বলেন, কোনও ধারণার উপর ভিত্তি করে বিজ্ঞপ্তি জারি করতে পারে না রাজ্য সরকার। কেননা সংবিধান তা অনুমোদন করে না। বিচারপতি আরও বলেন, দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজন করার চেষ্টা করবেন না, তাদের শান্তিতে থাকতে দিন।
আদালত জানায়, এইভাবে বিজ্ঞপ্তি জারি করে সাধারণ মানুষের স্বাধীনতার অধিকার কেড়ে নিতে পারে না রাজ্য সরকার। রাজ্য সরকার কিন্তু সাধারণ মানুষের অধিকার হরণ করার চেষ্টা করেছে এই বিজ্ঞপ্তি জারির মাধ্যমে। এরপরই তিনি জানান, বৃহস্পতিবার বিসর্জন মামলার রায় ঘোষণা করা হবে।
উল্লেখ্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে একটি অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, 'একাদশীর দিন মহরম। সেই কারণেই একাদশীর দিন বিসর্জন বন্ধ থাকবে। দশমীর দিন সন্ধ্যা ছ'টা পর্যন্ত নিরঞ্জন করা যাবে।' পরে অবশ্য আদালতে সেই সময় বাড়িয়ে রাত দশটা পর্যন্ত করা হয়।
নিরঞ্জন সংক্রান্ত মোট তিন পৃথক মামলা হয় হাইকোর্টে। তারই একটি মামলায় রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত এই নির্দেশিকা জানান। এদিন তিনি জানান, 'কোনওরকম অনভিপ্রেত ঘটনা এড়াতেই রাজ্য সরকারের তরফ থেকে এইরূপ নিরঞ্জন নির্দেশিকা জারি করা হয়। অন্য কোনও উদ্দেশ্য রাজ্য সরকারের নেই। উৎসবের মরশুমে অশান্তি এড়ানোর জন্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে এই সিদ্ধান্ত।'
প্রধান বিচারপতি এই সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করে বলেন,'কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব বর্তায় প্রশাসনের উপর। এই সিদ্ধান্ত দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ-রেখা চিহ্নিত করে দিচ্ছে। রাজ্যে যখন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রয়েছে, তাহলে দুই ধর্মের অনুষ্ঠান একসঙ্গে পালন করতে ভয় কেন?'এরপর আদালত রাজ্যের এই সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করতে পারে বলে জানিয়ে বৃহস্পতিবারই রায়দানের কথা ঘোষণা করেন প্রধান বিচারপতি।