এডস রোগে আক্রান্ত হয়েও স্বাভাবিক ছন্দে কাটছে জীবন
সব কাজের মুশকিল আসান তিনিই। ডাক্তারবাবুদের যে কোনও রকমের প্রয়োজন হোক বা নার্স-গ্রুপ ডি কর্মীদের কোনও সমস্যা। সব সমসার সমাধান করেন সুজাতাই।
কলকাতা, ১৯ ডিসেম্বর : সব কাজের মুশকিল আসান তিনিই। ডাক্তারবাবুদের যে কোনও রকমের প্রয়োজন হোক বা নার্স-গ্রুপ ডি কর্মীদের কোনও সমস্যা। সব সমসার সমাধান করেন সুজাতাই। প্রত্যেকেই তাঁকে এক ডাকে চেনেন। হাসপাতালে এইচআইভি পজিটিভদের দেখভাল করা, কোনও এডস রোগী ওষুধ খাচ্ছে কিনা সমস্ত কিছু দেখার গুরু দায়িত্ব যে তাঁর কাঁধেই।
রাজ্যের সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালেই নতুন জীবন পেতেছেন তিনি। এডস রোগীদের নিয়ে নতুন এক সংসার। হাসিখুশিতে বেশ কেটে যায় সারাদিন। কিন্তু এই মেয়েটির জীবনের পিছনে রয়েছে আরও একটি জগৎ। গত ১৩ বছর ধরে সুজাতা নিজেই যে এডস রোগে আক্রান্ত।
স্বামীর মৃত্যুর পর ১৩ বছর পেরিয়ে গেছে। এক মেয়ে নিয়ে মা-বাবার সঙ্গে দিব্যি সংসার সুজাতার। সুজাতার কথায়, এডসে আক্রান্তের কথা প্রতিবেশীরা জানতে পারার পর কথাবার্তা, মেলামেশা বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু যখন সবাই জানতে পারে আমি এডস রোগীদের জন্য কাজ করছি। এখন আর কেউ খারাপ ব্যবহার করে না। বরং সবার কাছ থেকেই ডাক পাই।
নিজের এই কঠিন রোগ সম্পর্কে জানতে পারলেন কবে? সুজাতা বলেন ১৯৯২ সালে তার বিয়ে হয়। বিয়ের প্রথম কয়েকটি বছর ভালো থাকলেও ১৯৯৭ সালে হঠাৎই সুজাতার স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রথমে বুঝে ওঠতে না পারলেও, কয়েকদিনের মধ্যে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়। স্বামীর অসুস্থতার কারণ তিনি এইচআইভি পজেটিভ।
শেষ মুহূর্তে বিষয়টি জানতে পারায় স্বামীকে তিনি বাঁচাতে পারেননি। জীবনের এই কঠোর সত্যটিকে মানতে না পারছিলেন না। কিন্তু ছোট মেয়ের মুখ দেখে জীবনের সৌন্দর্য আবার ফিরে পান তিনি। কিন্তু আবার ঘনিয়ে আসে সঙ্কট। স্বামীর মৃত্যুর ৫ বছরের মাথায় সুজাতা জানতে পারেন, তিনিও এইচআইভি পজেটিভ। হঠাৎ করে ওজন কমতে থাকে, টিবি, ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি, কোনও কিছুই বাদ ছিল না।
এরপরেই ট্রপিক্যাল মেডিসিনে চিকিৎসক এসকে গুহর অধীনে চিকিৎসা শুরু হয়। প্রথম ধাপে তার ওষুধ চালু হয়। কয়েকদিনের চিকিৎসায় সুজাতা অনেকটাই সুস্থ হয়ে ওঠেন। আবারও অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্বিতীয় লাইনে আবার ওষুধ চালু করা হয়। তবে এখন তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ।
এসএসকেএম হাসপাতালে এডস রোগী আক্রান্তদের কাউন্সিলিং করেন সুজাতা। এসএসকেএম হাসপাতালের চিকিৎসক জ্যোর্তিময় চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ভারতে ২৬ লক্ষ মানুষ এডস রোগে আক্রান্ত। যার মধ্যে ৬১ শতাংশ পুরুষ ও ৩৯ শতাংশ মহিলা এডস রোগে আক্রান্ত। শিশুরাও পিছিয়ে নেই এই কঠিন রোগ থেকে। দেশে ৩.৫ শতাংশ শিশু এডসের রোগী।
অনেকের ধারণা, এডস এক ধরনের ভাইরাসজনিত রোগ, যা অন্য একজনের থেকে আরেকজনের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু এডস ছোঁয়াচে রোগ নয়। তবে এডস রোগ সম্পর্কে সচেতনতার পাশাপাশি সাবধানতার প্রয়োজনও।