লিবিয়ায় গাদ্দাফির শহরটি এখনো ভূতুড়ে নগরী কেন?
লিবিয়ায় সির্তে শহর থেকে কথিত ইসলামিক স্টেট বিতাড়িত হয়েছে দু বছর আগে। এ শহরটিই সাবেক লিবীয় নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির নিজ শহর, যা এখন একটি ভূতুড়ে নগরী।
সির্তে শহর থেকে কথিত ইসলামিক স্টেট বিতাড়িত হয়েছে দু বছর আগে। এ শহরটিই সাবেক লিবীয় নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির নিজ শহর।
সির্তে একসময় ছিলো সাজানো গোছানো। আর এখন যত্রতত্র ধ্বংসস্তূপ। প্রায় প্রতিটি বাড়িই হয় ধ্বংস হয়েছে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে সব স্থাপনারই একই অবস্থা। একসময়ের রমরমা এই শহরটিতে এখনো শুধুই সংকট আর ধ্বংসের চিহ্ন।
যুদ্ধের ঢামাঢোল শেষে এখন শহরের অধিবাসীরা ফিরতে শুরু করেছে যদিও শহরটি পুনর্গঠনে সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তৎপরতা খুব কমই দেখছেন বলে মনে করছেন তারা।
অথচ দু বছর আগেই এ শহর থেকে উৎখাত হয়েছে ইসলামিক স্টেট, তারপরেও শহরটি এখনো একটি ভূতুড়ে শহর হয়েই আছে।
একজন অধিবাসী বলছিলেন, "শহরটিকে এ অবস্থায় দেখার জন্য আমরা ফিরে আসিনি।অনেকে ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। নিজের বাড়ির অবস্থা দেখে আমার এক আত্মীয় হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন"।
অধিবাসীরা বলছেন শহরটির পুনর্গঠনের কোন উদ্যোগই তাদের চোখে পড়ছেনা।
তাদের অনেকের ক্ষোভ পশ্চিমাদের বিরুদ্ধেই। কারণ তারা মনে করে পশ্চিমারা শহরটিকে ধ্বংস করেছে যুদ্ধের সময় কিন্তু এখন অধিবাসীদের কোনো সহায়তাই করছেনা।
আরেকজন অধিবাসী বলছিলেন, "সাহায্য দেয়ার নাম করে তারা আমাদের উপহাস করছে। সারাদিন ধরে লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখে। আমরা সাহায্য চাইনা। তারা আমাদের প্রতিবেশীদের ঘরবাড়ি ঠিক করে দিক, না হলে আমরা ইউরোপের দিকেই চলে যাবো"।
ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে সাত মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সময় শহরটি প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়।
শহরটি এমনিতেই ২০১১ সালের মুয়াম্মার গাদ্দাফি বিরোধী আন্দোলনের ধাক্কা সামলানোর চেষ্টা করছিলো।
কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতা আর যুদ্ধে দেশটির অর্থনীতি আরও করুণ হয়ে ওঠে।
যদিও ইসলামিক স্টেটের হুমকির অবসান হয়েছে।
কিছু জঙ্গি অবশ্য শহরের দক্ষিণের মরুভূমি এলাকায় তৎপর আছে।
সির্তে শহরে যেনো আবার তারা ফিরে আসতে না পারে সেজন্য সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
তাদেরই একটি পেট্রোল টীমের সাথে গিয়েছিলেন বিবিসির একজন সংবাদদাতা।
তাকেই একজন সেনা কর্মকর্তা মেজর আলী রাফিদা বলছেন, "সির্তের মতো একটি বড় শহরের সুরক্ষা দেয়া আসলেই অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। যদি লিবিয়ান মানুষজন আমাদের বাহিনীতে যোগ না দেয় তাহলে জঙ্গিরা আবার ফিরেও আসতে পারে"।
এই সির্তেই ছিলো মুয়াম্মার গাদ্দাফির নিজের শহর এবং এখানেই তিনি বহু লড়াইয়ে অংশ নিয়েছেন।
এখানকার অধিবাসীরা এখন একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে, কারণ পুরো শহরটিই একটি ভূতুড়ে নগরীতে পরিণত হয়ে আছে।