For Quick Alerts
ALLOW NOTIFICATIONS  
For Daily Alerts
Oneindia App Download

কোরবানি: পশু কেনা-বেচা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য কেন এতো গুরুত্বপূর্ণ?

বাংলাদেশের করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এবং মৃত্যু যখন ব্যাপক আকারে বেড়েছে, তখনই সরকার কিছুদিনের জন্য লকডাউন প্রত্যাহার করে নিয়েছে। সরকারের তরফ থেকে যুক্তি দেয়া হয়েছে, ঈদ-উল-আযহায় পশু কেনা-বেচা বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি খ

  • By Bbc Bengali

গরু
Getty Images
গরু

ঢাকার কাছে সাভারেই একটি কৃষি খামার গড়ে তুলেছেন রাজিয়া সুলতানা। সেই খামারে ঈদ-উল-আযহার জন্য পশু লালন পালন করা হয়। এবারের ঈদ-উল-আযহার জন্য ১৮টি গরু বিক্রি করার টার্গেট নিয়েছিলেন ছয় মাস আগে থেকে।

কিন্তু করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে সরকার আরোপিত লকডাউন তার মধ্যে গভীর দুশ্চিন্তা তৈরি করেছিল। লকডাউন প্রত্যাহার করে পশুর হাট বাসার অনুমতি দেয়ায় স্বস্তি ফিরে এসেছে রাজিয়া সুলতানার মনে।

"খামারে রেখে যে কোরবানির গরু বিক্রি করবো সেটা হয়নি। অনলাইনে একটি গরুও বিক্রি করতে পারি নাই। আমরা সারা বছর গরু লালন-পালন করি লাভের জন্য। আমাদের অনেক বিনিয়োগ থাকে। এখন লকডাউন উঠে যাওয়াতে আশা করি আমাদের আশা পূরণ হবে," বলেন রাজিয়া সুলতানা।

বাংলাদেশের করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এবং মৃত্যু যখন ব্যাপক আকারে বেড়েছে, তখনই সরকার কিছুদিনের জন্য লকডাউন প্রত্যাহার করে নিয়েছে।

সরকারের তরফ থেকে যুক্তি দেয়া হয়েছে, ঈদ-উল-আযহায় পশু কেনা-বেচা বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি খুঁটি।

হাজার-হাজার কোটি টাকার ব্যবসা

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসেব মতে বাংলাদেশে এবার প্রায় এক কোটি ১৯ লাখ গবাদি পশু জবাইয়ের জন্য রয়েছে।

গৃহস্থালিতে গরু-ছাগল পালন ছাড়াও প্রায় সাত হাজার খামার রয়েছে যেগুলো ঈদ-উল-আযহার জন্য পশু লালন-পালন করে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (খামার) জিনাত হুদা বিবিসি বাংলাকে বলেন, " প্রতি বছর কোরবানির পশু গড়ে থেকে ৫০ থেকে ৫৫ হাজার কোটি টাকার মতো বেচা-বিক্রি হয়। যদি বিক্রি কম হয়, তাহলে তো অর্থনীতির উপর এটি বিরূপ প্রভাব পড়বেই।"

আরও পড়ুন:

গরুর হাট
Getty Images
গরুর হাট

ভারতীয় গরু না আসায় বাংলাদেশের লাভ

একটা সময় ছিল যখন বাংলাদেশে ঈদ-উল-আযহার পশুর জন্য ভারতের উপর নির্ভরতা ছিল অনেকাংশে।

কিন্তু নরেন্দ্র মোদী ভারতের প্রধানমন্ত্রী হবার পর ভারতে থেকে গরু বাংলাদেশে আসা অনেকটাই কমে গেছে।

প্রথমবারের মতো ২০১৪ সালে কোরবানির পশু নিয়ে ব্যাপক সংকট তৈরি হয়। মূলত তখন থেকেই বাংলাদেশের সরকার এবং খামারিরা উপলব্ধি করেন যে দেশের ভেতরেই গবাদি পশুর সংখ্যা বাড়াতে হবে।

বাংলাদেশ প্রাণী সম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট-এর মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পারভীন মোস্তারী বিবিসি বাংলাকে বলেন, ব্রাহমা জাতের গরুর মাধ্যমে মাংস উৎপাদনে পদক্ষেপ এবং গরু মোটাতাজা করণ প্রযুক্তির মাধ্যমে সংকট সামাল দিয়েছে বাংলাদেশ।

"বিদেশ থেকে ব্রাহমা গরুর বীর্য কিনে এনে দেশি গরুকে প্রজনন করিয়ে দ্রুত বর্ধনশীল গরুর জাত উদ্ভাবনের উদ্যোগ নেয়া হলো। "

এর পাশাপাশি ছিল গরু মোটাতাজা করার প্রযুক্তি ছড়িয়ে দেয়া।

পারভীন মোস্তারী বলেন, ''আমরা গরু মোটাতাজাকরণ প্রযুক্তির দিকে নজর দিয়েছিলাম। তিন থেকে চার মাস বয়সী গরুকে বিশেষ কিছু খাবার নিয়মমতো দিলে গরু দ্রুত মোটা তাজা হয়। এটা বিজ্ঞানসম্মত বিষয়। মানুষ আগে খুব অযত্ন-অবহেলায় গরু লালন-পালন করতো। কিন্তু মোটা-তাজা করার প্রযুক্তি যখন ছড়িয়ে গেল তখন অনেক উদ্যোক্তা তৈরি হলো।"

তবে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বাড়ছে অবৈধভাবে গরু মোটাতাজাকরণের জন্য ওষুধ ব্যবহার করা হয়। বিষয়টি নিয়ে সতর্ক করে দিচ্ছেন গবেষকরা।

অর্থনীতি অন্যতম খুঁটি

ভারত থেকে গরু আসা ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ায় বাংলাদেশের জন্যই লাভই হয়েছে।

সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে কয়েকবছর সময় লাগলেও এটি এখন বাংলাদেশের গ্রামের অর্থনীতির অন্যতম ভিত হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ইসমত আরা বেগম গ্রামীণ অর্থনীতি এবং ঈদ-উল-আযহার পশু বিক্রি নিয়ে গবেষণা করেছেন।

তিনি বলছেন, গবাদি পশু বিক্রি গ্রামের অধিকাংশ মানুষের হাতে নগদ টাকার উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়।

অধ্যাপক ইসমত আরা বলেন, "গরু বিক্রি থেকে খামারিরা একটা আয় পায়। সব খরচ বাদ দিয়েও একটি গরুতে অন্তত হাজার দশেক টাকা থাকে। গ্রামের একটি পরিবারের প্রতিদিনের যে প্রয়োজন সেটি অন্যান্য শস্যের মাধ্যমে পূরণ হয়। কোরবানির পশু বিক্রি থেকে তারা একটি থোক টাকা পায়। এর মাধ্যমে তারা সারা বছর নগদ টাকার চাহিদার কিছু অংশ পূরণ করে।"

গবেষকরা বলছেন, ঈদ-উল-আযহার পশু বিক্রির জন্য যে যত বেশি বিনিয়োগ করবে সে তত বেশি লাভ পাবে। কিন্তু সবার ক্ষেত্রে এই বিনিয়োগ করা সম্ভব নয়। আবার ঝুঁকিও রয়েছে।

বিবিসি বাংলার আরও খবর:

গরু
Getty Images
গরু

খামারি রাজিয়া সুলতানা বলেন , কোরবানির বাজারে যেসব গরু ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয় সেগুলো চার মাস আগে কেনে খামারিরা।

"প্রান্তিক খামারিরা চার মাস করে বছরে তিনটা সার্কেল করে। এটা নির্ভার করে আপনি কি ছোট গরু বিক্রি করবেন নাকি বড় গরু বিক্রি করবেন?" বলেন রাজিয়া সুলতানা।

চামড়া ব্যবসাও জমে ঠে এ সময়

শুধু গবাদি পশু কেনা-বেচা নয়, ঈদ-উল-আযহাকে কেন্দ্র করে পশুর চামড়া ব্যবসাও অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।

চামড়া ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশন বলছেন, বাংলাদেশে সারা বছর যত চামড়া বাজারে আসে তার ৬০ শতাংশই আসে এই ঈদের সময়। এই চামড়াকে কেন্দ্র করে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়।

ট্যানার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি শাহিন আহমেদ বলছেন, ঈদ-উল-আযহার সময় ভালো মানের পশুর চামড়া পাওয়া যায়।

"ঈদ-উল-আযহার সময় যেসব পশু কোরবানি দেয়া হয় সেগুলো খুব যত্নে লালন পালন করা হয়। সেজন্য দেখা যায়, চামড়ার মানও ভালো থাকে," বলেন মি. আহমেদ।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, গবাদি পশু ঘিরে বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে।

নারী
Getty Images
নারী

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ইসমত আরা বেগম বলছেন হাটে কেনা-বেচার কাজ পুরুষরা করলেও পশু লালন-পালনের মূল কাজ নারীরাই করে।

প্রাণী সম্পদ বিশেষজ্ঞ এবং অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ঈদ-উল-আযহার জন্য গড়ে উঠা পশুর খামারগুলো বাংলাদেশের গ্রামের অর্থনীতিতে গতি এনেছে।

কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে বের হয়ে অনেকে এখন এসব খামারের দিকে ঝুঁকছেন। ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রেও এ খাত বড় ভূমিকা রেখেছে বলে বলছেন অর্থনীতিবিদরা।

আরও পড়ুন:

English summary
Why is buying and selling animals so important for the economy of Bangladesh?
চটজলদি খবরের আপডেট পান
Enable
x
Notification Settings X
Time Settings
Done
Clear Notification X
Do you want to clear all the notifications from your inbox?
Settings X