চিনের জিনজিয়াংয়ে সম্ভবত মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে, দাবি রাষ্ট্রসংঘের
চিনের জিনজিয়াং প্রদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে ইউঘুর ও অন্যান্য মুসলিম সম্প্রদায়ের ক্রমাগত মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। এই ঘটনাকে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে বলে রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার বিভাগ জানিয়েছে।
চিনের জিনজিয়াং প্রদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে ইউঘুর ও অন্যান্য মুসলিম সম্প্রদায়ের ক্রমাগত মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। এই ঘটনাকে 'মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ' হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে বলে রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার বিভাগের তরফে একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। বুধবার রাতের দিকে এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। যদিও বেজিং তাদের বিরুদ্ধে আনা রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার বিভাগের সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
৪৫ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার বিভাগের তরফে জানানো হয়েছে, স্বাধীনতা হরন করে উইঘুর সম্প্রদায় ও মুসলিম সম্প্রদায়ের সমস্ত নাগরিককে অবিলম্বে চিনকে মুক্তি দিতে হবে। বন্দিদের যাঁদের পরিবারকে সনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না, তাঁদের বিরুদ্ধে চিনা প্রশাসন কী অবস্থান নিচ্ছে, তা স্পষ্ট করতে হবে। প্রয়োজন হলে চিনকে বৈষম্যমূলক সমস্ত আইন বাতিল করতে হবে। রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার দফতরের প্রধান মিশেল ব্যাচেলেটের মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৩ মিনিট আগে এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। রাষ্ট্রসংঘের মানবিধকার বিভাগের কর্মীদের ইউঘুর সম্প্রদায়ের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার চার বছর পরে এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।
ইউঘুর সমম্প্রদায়ের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে একাধিকবার পশ্চিমি দেশগুলো সরব হয়েছিল। আমেরিকার পাশাপাশি কানাডা, ব্রিটেন, ফ্রান্স অভিযোগ করেছিল, চিনা প্রশাসন গণহত্যা চালিয়েছে। যদিও ব্যাচেলেটর প্রতিবেদনে গণহত্যার কথা উল্লেখ নেই। তবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চিনা প্রশাসন উইঘুর সম্প্রদায়ের জঙ্গি বিরোধী কৌশলের নাম দিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউঘুর ও অন্যান্য মুসলিম গোষ্ঠীর সদস্যদের নির্বিচারে বন্দি ও বৈষম্যমূলক আচরণ আন্তর্জাতিক অপরাধ। মানবাধিকার লঙ্ঘন অপরাধ হিসেবে বিষয়টিকে গণ্য করা যেতে পারে।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে জিনজিয়াং প্রদেশে রাষ্ট্রসংঘে মানবাধিকার বিভাগের সদস্যদের স্বাধীনভাবে ভ্রমণের জন্য ব্যাচেলেট চিনকে আহ্বান করেছিল। চিন জিনজিয়াং প্রদেশে মানবাধিকার বিভাগের সদস্যদের শুধুমাত্র প্রবেশের অনুমতি দেয়। এই সফরের পরেই ব্যাচেলেট চিনের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, যেভাবে চিনের ইউঘুর সম্প্রদায়ের ও অন্যান্য মুসলিম গোষ্ঠীর মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে, তারপর দ্বিতীয়বারের জন্য রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার বিভাগের প্রধানের জন্য আবেদন করবেন না। জিনজিয়াং প্রদেশ সফরের পর রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার বিভাগের সদস্যদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মহলের একাংশ চিনা প্রশাসনের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। চাপে পড়েছিল বেজিং।
সেই সময় চিনা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, ইউঘুর সম্প্রদায়ের চরমপন্থা মোকাবিলা করতে কঠোর অবস্থান নেওয়া হয়েছে। না হলে চিনের সাধারন নাগরিকদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। ইউঘুর সম্প্রদায় চিনে হামলার জন্য তরুণদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিল। যা চিনের জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার বিভাগ চিনের মন্তব্যের সরাসরি বিরোধ করে।