ভোটযুদ্ধে পাকিস্তান, এই ৬ কিং-মেকারকে দেখে নিন, যাঁদের উপর নির্ভর করছে ইসলামাবাদের ভবিষ্যত
২৫ জুলাই পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন। এখানে জয়ী জনপ্রতিনিধিরা ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি ও চার প্রাদেশিক অ্যাসেম্বলি-তে নির্বাচিত হবেন।
২৫ জুলাই পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন। এখানে জয়ী জনপ্রতিনিধিরা ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি ও চার প্রাদেশিক অ্যাসেম্বলি-তে নির্বাচিত হবেন। এখন পর্যন্ত ভোটের যা ট্রেন্ড লক্ষ করা গিয়েছে তাতে পাকিস্তান মুসলিম লিগ ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ-এর দিকেই জয়ের পাল্লা ভারী।
এই ভোটযুদ্ধের পরিবেশেই অবশ্য উঠেছে এক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ। রাজনৈতিক মহলের অভিযোগ, ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ-কে জেতানোর জন্য সক্রিয় হয়ে উঠেছে পাকিস্তানের বিচারবিভাগ থেকে শুরু করে মিলিটারি, ইনটেলিজেন্স এজেন্সি। এমনকী, এই মিলিত শক্তি নওয়াজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লিগ-কে কোনওভাবেই ক্ষমতায় আসতে দিতে চায় না বলেও অভিযোগ উঠেছে। এখন একনজরে দেখে নেওয়া যাক পাকিস্তানের ভোটযুদ্ধে কারা মূল কাণ্ডারী?
(ভারতীয়রা পাকিস্তানিদের গুরু বলে মানবে, দাবি করলেন নওয়াজ শরিফের ভাই)
নওয়াজ শরিফ, পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ
এবারের ভোটে প্রার্থী হতে পারেননি নওয়াজ। কারণ সম্প্রতি পানামা পেপার্সকাণ্ডে দুর্নীতির দায়ে জেলে গিয়েছেন পিএমএল-এন প্রধান। এর জন্য প্রধানমন্ত্রীর পদও তাঁকে হারাতে হয়েছে। বছর ৬৮-র নওয়াজ তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু কোনওবারই প্রধানমন্ত্রী পদে পূর্ণ মেয়াদ শেষ করতে পারেননি। পানামা পেপার্স কাণ্ডে ২০১৭ সালে পাক সুপ্রিম কোর্টে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরই প্রধানমন্ত্রীত্ব খোয়ান নওয়াজ। লন্ডনে নির্বাসনে থাকাকালীন তাঁকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কিন্তু, জেলে থাকলেও নওয়াজের দিকেই নাকি ঝুঁকে রয়েছে জনসমর্থন। আর ফায়দা তুলতে পারে পিএমএল-এন।
ইমরান খান, পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ
ক্রিকেট খেলা ছাড়ার পর থেকেই রাজনীতিতে ইমরান। এবারেরর নির্বাচনে জয়ের দোরগোড়ায় রয়েছে তাঁর দল। আন্তর্জাতিক মহলের দাবি, ইমরানকে এবারের ভোটে জেতাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পাকিস্তানের বিচারবিভাগের একাংশ থেকে, মিলিটারি, ইনটেলিজেন্স এজেন্সি। ৬৫ বছরের ইমরান এবার প্রধানমন্ত্রী বনে গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না বলেও মনে করা হচ্ছে। ভোটে জিততে ইমরানের মূল হাতিয়ার মুসলিম কট্টরপন্থা এবং ভারত বিদ্বেষ।
পাকিস্তানের আর্মি
পাকিস্তানে কার সরকার হবে সেটা নাকি সেখানকার সেনাবাহিনী ঠিক করে দেয়। এই দাবি আজকের নয়। পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের পর থেকেই সেখানে সেনাবাহিনী সমান্তরাল সরকার চালিয়ে আসছে। এই সেনাবাহিনীর হাত ধরেই একটা সময় তৎকালীন পাক জেনারেল পারভেজ মুশারফ পাকিস্তানের শাসনযন্ত্রের শীর্ষস্থানে পৌঁছেছিলেন। এই সেনাবাহিনী এবারের সাধারণ নির্বাচনেও প্রবল সক্র্রিয়। দাবি করা হচ্ছে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফকে জেতানোর জন্য যাবতীয় পরিকল্পনা সেরে ফেলেছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী।
হাফিজ সইদ, প্রধান, লস্কর-ই তইবা
৬৮ বছরের হাফিজের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক স্তরে জঙ্গির তকমা লাগাতে কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে। যার জেরে হাফিজ সরাসরি ভোটের সঙ্গে জড়াতে পারছেন না। তবে তলে তলে লস্করএ-র সংগঠন থেকে মদত যাচ্ছে প্রার্থীদের কাছে। জঙ্গি কার্যকলাপের জন্য লস্কর-ই-তইবা ও জামাত-উদ দাওয়া, দ্য মিল্লি মুসলিম লিগ-এর উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। কিন্তু, হাজারেরও বেশি প্রার্থী যারা লস্করের রাজনৈতিক সংগঠন আল্লাহ-ও আকবরের অধীনে নথিভুক্ত তারা হাফিজের বাণী পোস্টারে ছাপিয়ে নির্বাচনী প্রচার করছেন। এমনকী, লস্করের ছত্রছায়ায় থাকা বহু প্রার্থী আবার পাকিস্তান রাহ-ই-হক দলের নামে করে ভোটে দাঁড়িয়েছেন অথবা নির্দল প্রার্থী হয়েছেন। এদের সকলের উপরেই রয়েছে হাফিজ সইদের হাত।
বিলাওয়াল ভুট্টো, পাকিস্তান পিপলস পার্টি
বেনজির ভুট্টোর হত্যার পর তাঁর ছেলে বিলাওয়ালকে সকলে পাকিস্তানের ভবিষ্যতের নেতা হিসাবে চিহ্নিত করেছিল। মা মারা যাওয়ার সময় বিলাওয়াল ছিল মাত্র ১৯ বছরের তরুণ। কিন্তু সেই বয়সেই পাকিস্তান পিপলস পার্টি-র প্রধান হয়েছিলেন বিলাওয়াল। এখন তিনি ২৯ বছরের যুবক। বিলাওয়ালের দাদু জুলফিকার আলি ভুট্টো পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক কিংবদন্তি নেতা। কিন্তু, এতসত্ত্বেও নওয়াজ শরিফের দলের দাপটে আস্তে আস্তে পাকিস্তানের উপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে পাকিস্তান পিপলস পার্টি। বিলাওয়ালের নেতৃত্বে ফের একবার প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে এই দলটি। সিন্ধু প্রদেশে পাকিস্তান পিপলস পার্টির শক্ত ঘাঁটি রয়েছে। বিলাওয়াল পাকিস্তানের নির্বাচনে কিংমেকার হতে পারেন কি না সেদিকেই এখন নজর সকলের।
শাহবাজ শরিফ, পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ
নওয়াজ শরিফ জেলে যাওয়ার পর ভাই শাহবাজ এখন পিএমএল-এন-এর প্রধান। ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পঞ্জাব প্রদেশের চিফ মিনিস্টারের পদে বহাল ছিলেন শাহবাজ। যদিও, নওয়াজ শরিফের সঙ্গে শাহবাজের রাজনৈতিক মতভেদ সর্বজন বিদিত। সেনাবাহিনীও ইমরান খানের বাইরে শাহবাজ-এর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। মনে করা হচ্ছে পিএমএল-এন ভালো ফল করলে শাহবাজের সামনে আস্তে পারে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ।
(নারীরা যেখানে ভোট দিতে পারে না, পাকিস্তানে এমন একটি এলাকায় প্রার্থী হয়েছেন হামিদা শহিদ)