গরীবদের জন্যই প্রথম পিৎজ্জা তৈরি হয়, কীভাবে তা অভিজাতদের খাবার হয়ে উঠল জানুন
ইতালিয়ান খাবার হলেও বিশ্বজুড়ে খাদ্য রসিকদের কাছে পিৎজ্জা বেশ সমাদর পেয়েছে। ডিসেম্বরের গোড়াতেই সুস্বাদু এই খাবারের প্রতি গুগল ডুডলের মাধ্যমে বিশেষ সম্মান জানানো হয়েছে। পিৎজ্জা পাজল গেমের সূচনা করে ডুডল। প্রসঙ্গত, পিৎজ্জাকে সর্বদাই লাক্সারি খাবারের মধ্যে ধরা হয়। কম-বেশি সকলেই পছন্দ করেন পিৎজ্জা। চিজ পিৎজ্জ, চিকেন পিৎজ্জ, পনির পিৎজ্জা- রয়েছে হরেক রকম স্বাদ। কিন্তু জানেন কি এই পিৎজ্জা আসলে তৈরি করা হয়েছিল গরীব ও মজদুর শ্রেণীর লোকেদের জন্য। শুধুমাত্র একটি ঘটনার জন্য এই পিৎজ্জা এতটাই জনপ্রিয়তা পায় যে তা এখন ধনীদের খাবারে পরিণত হয়ে গিয়েছে। এখন এই পিৎজ্জা গরীবদের ধরা–ছোঁয়ার বাইরে চলে গিয়েছে।
গরীবদের জন্য এই পিৎজ্জা
পিৎজ্জাকে ইতালির দান হিসাবে মনে করা হয় এবং এখানেই এটি গরীবদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল এবং এখান থেকে পিৎজ্জাতে এত বড় পরিবর্তন ঘটে যে এটি অন্যান্য দেশে পৌঁছে যায় এবং বিশ্বের বিলাসবহুল খাবারে পরিণত হয়।
ইতালির নেপলসে পিৎজ্জা প্রথম শুরু হয়
পিৎজ্জা প্রথমবার ইতালির নেপলস শহরে ১৮ শতাব্দীতে তৈরি হয়েছিল। এখান থেকেই পিৎজার গল্প শুরু। যা শত শত বছরের বৈশ্বিক অভিবাসন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এ প্রযুক্তিগত বিবর্তনকে বেক করেছে। ইউরোপের সমৃদ্ধ শহরগুলির মধ্যে নেপলস অন্যতম। এই শহরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে কৃষক, ব্যবসায়ী ও কর্মসংস্থানের সন্ধানে দূর-দূরান্ত থেকে এখানে এসে পৌঁছতো। কৃষক ও শ্রমিকদের জন্য এখানে রাস্তার ধারে বড় চ্যাপ্টা রুটির উপর সস্তায় সবজি ও মাংসের টুকরো বিক্রি করা হচ্ছিল। যার টুকরো কেটে কেটে বিক্রি করা হত। সস্তা খাবার হওয়ার জন্য মজদুর ও কৃষকরা এগুলি খেয়েই তাঁদের পেট ভরাতো।
অভিজাতদের পছন্দের খাবার হয়ে উঠল
এরপর এই খাবারে যোগ হতে শুরু করল নুন, রসুন, শূকরের মাংস, মাছ ও গোলমরিচ। ধীরে ধীরে এর ব্যবহার বাড়তে শুরু করল। এভাবে পিৎজ্জার স্বাদও বেড়ে যায়। এমনকী গরীবদের জন্য এই খাবার সাধারণ মানুষরাও পছন্দ করতে শুরু করল এবং এর বিক্রিও বেড়ে গেল। তবে সঠিকভাবে বর্তমান যুগের মতো দেখতে এই পিৎজ্জার সূচনা হয়েছিল ১৮৮৯ সালে। এর কৃতিত্ব দেওয়া হয় নেপলস শহরের বেকার রাফায়েল এস্পোসিতো।
রাফায়েল এস্পোসিতোর পিৎজ্জা
রাজা উমবার্তো প্রথম এবং রানী মার্গারিটা ১৮৮৯ সালে নেপলসে এসেছিলেন। নেপলসে পৌঁছে রানী বায়না করলেন পিৎজ্জা নামক নেপলসের নতুন খাবারখানা একটু চেখে দেখবেন। শোনা যায় একজন দাসীর কাছে থেকে রাণী মহাদয় এই খাবারটির স্বাদের ব্যপারে গল্প শুনেছিলেন। যাই হোক রাজা প্রথমে গরীবদের এই খাবার রাজপ্রাসাদে ঢুকতে দিতে খুব বেশী আগ্রহী ছিলেন না, তারপরও রানীর শখ বলে কথা। সুতরাং, আদেশ হলো রানীর জন্য পিৎজ্জা বানাবার। ডাক পরল নেপলসের বিখ্যাত রুটিওয়ালা 'রাফায়েল এস্পোসিতো'র। ভদ্রলোক তাঁর স্ত্রীসহ ঢুকলেন রাজকীয় রান্নাঘরে। পিৎজ্জা বানাবার জন্য তৈরী করা হলো বিশেষ ধরণের চুল্লী। সেই চুল্লীতে রাফায়েল তৈরী করলেন বিশেষ ধরণের এক পিৎজ্জা।
তৈরি হল মার্গারিটা পিৎজ্জা
ইতালির পতাকার তিন রং- সবুজ, সাদা ও লাল- এর অনুকরণে পিৎজ্জায় তিনি দিলেন সবুজ বেসিল পাতা, সাদা রংয়ের মোজেরেলা চীজ ও লাল রংয়ের টম্যাটো সস! উনুন থেকে রানীর সামনে পরিবেশন করা হলো গরম গরম পিৎজ্জা। মহারানী মার্গারিটার খুব পছন্দ হল এই পিৎজ্জার স্বাদ। তাই ওই পিৎজ্জার নাম রাখা হল মার্গারিটা,যা আজও অত্যন্ত জনপ্রিয়। এই খবর চাউর হতেই পিৎজ্জার বিক্রি বেড়ে গেল। গরীবের চুলা থেকে এক লাফে পিৎজ্জা উঠে গেল অভিজাতদের ডাইনিং টেবিলে! রাফায়েল এস্পোসিতো ইতিহাসে ঢুকে গেলেন পিৎজ্জার জন্মদাতা হিসেবে।
আমেরিকায় প্রবেশ পিৎজ্জার
১৯ শতকে ইতালির মানুষ এই রেসিপি নিয়ে আমেরিকায় আসেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও পিৎজ্জা সমানভাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করল ১৯০৫ সালে নিউইয়র্ক শহরে প্রথম পিৎজ্জার দোকান 'লোম্বার্ডি' শুরু হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পিৎজ্জায় অনেক পরিবর্তন আসে এবং তা দামী হতে শুরু করে। যার ফলে এই ইতালিয় খাবার গরীবদের থেকে দূরে সরতে থাকে এবং অভিজাতদের খাবারের একটিন অঙ্গ হয়ে ওঠে। আজও পিৎজ্জাকে অভিজাত খাবার হিসাবেই পেশ করা হয়।